প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:১১
স্কুলে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যকুলতা
অনলাইন ক্লাস ও এ্যাসাইনমেন্ট লেখা দুটোই ভিত্তিহীন প্রচেষ্টা
মাধ্যমিক জীবনের স্মৃতিময় অংশ হলো নবম-দশম শ্রেণি। এই দুই ক্লাসের স্বাদ পায়নি ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। যেন জেএসসি দিয়েই সরাসরি এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে তারা। ওদের মন স্কুল ক্যাম্পাসে ফিরতে ব্যাকুল হলেও করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকির কথাও বিবেচনায় রাখছেন তারা। সতের মাস ঘরবন্দি অবস্থায় কেমন কাটছে শিক্ষাজীবন? কতটুকু হচ্ছে মানসিক বিকাশ তা জানতে কথা বলা হয়, একই ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ফার্স্টবয় তানজিবুল ইসলাম রাহেলের সাথে। করোনাকালীন শিক্ষাজীবন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল কলেজ খোলার দাবী জানানো চাঁদপুর কণ্ঠের বিশেষ ধারাবাহীক প্রতেবেদন 'স্কুলে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা'র এই পর্বে পর্যায়ক্রমিক প্রশ্নে এই শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয় এ্যাসাইনমেন্ট, অনলাইন ক্লাস ও স্কুল খোলার বিষয়ে কি ভাবছে তারা।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠ: করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে করোনার প্রকোপের কারনে শিক্ষার্থীদের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে শিক্ষার্থীদের ও ব্যক্তিগতভাবে আমারও পড়ালেখায় বেহাল দশা নেমে আসে। বলতে গেলে করোনার ভয় ও আতঙ্কে সারাদিন বাসায় থেকে মানসিক অবস্থার বিপর্যয় ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বাড়ির কাজ না থাকার কারনে পড়ালেখার চরম ক্ষতি হচ্ছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ: মানসিক অবস্থা কেমন? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : গত বছর থেকে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে একের পর এক মৃত্যুর মিছিল দেখে কার-ই বা মানসিক অবস্থা ভালো থাকবে? সারাদিন মনের ভিতর একটি আতঙ্ক বিরাজ করছিলো। সেই সাথে গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের উপর দিয়ে করোনার যে ধকল যায় তা দেখে মানসিক ভাবে আরও ভেঙ্গে পড়ি।
চাঁদপুর কণ্ঠ: নভেম্বরে চার বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা হওয়াটা আপনি কিভাবে দেখছেন? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : আমাদের দশম শ্রেণির ১২টি বিষয়ের মধ্যে নভেম্বরে ৪টি বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা হওয়াটা আমি যুক্তিযুক্ত মনে করছি না। চার বিষয়ে স্বশরীরে পরীক্ষা নিলেও পরীক্ষার্থীদের সমাবেশ ঘটবে, সব বিষয়ে নিলেও সমাবেশ ঘটবে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আবশ্যিক ও গ্রুপ ভিত্তিক সকল বিষয়েই পরীক্ষা নেওয়া উচিত। অনেকেতো গ্রুপভিত্তিক চার বিষয়ে পরীক্ষার কথা শুনে আবশ্যিক বাংলা, গণিত, ইংরেজী, আইসিটির বিষয়গুলো পড়া ছেড়েই দিয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই উচ্চমাধ্যমিকে পড়বে।
চাঁদপুর কণ্ঠ: অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : আমি যতদিন পর্যন্দ অনলাইনে পাঠদান গ্রহণ করেছি আমার কাছে মনে হয়েছে এটি একটি ভিত্তিহীন প্রচেষ্টা। আমাদের ক্লাসের ৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করছে। বাকিরা কেউ ইচ্ছাকৃত, কেউ প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকায় অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠগ্রহণে মনযোগ নেই, অন্যদিকে অধিকাংশ শিক্ষকগণ ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহার না জানা ও বয়স্ক শিক্ষকগণ অনলাইনে ক্লাস জড়তায় ভোগার কারণে অনলাইন পাঠদান আমার কাছে ভিত্তিহীন প্রচেষ্টাই মনে হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ: শিক্ষার্থীরা এ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কতটা উপকৃত হচ্ছে বলে মনে করেন? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : এটিও ভিত্তিহীন প্রচেষ্টা। শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখার ১টি কৌশলমাত্র। শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে যে এ্যাসাইনমেন্ট ধরিয়ে দেয়া হয় ত ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীই সঠিক ভাবে করছে না। বরং অনলাইন থেকে দেখে দেখে এ্যাসাইনমেন্ট লেখার মাধ্যমে সাপ্তাহিক নকলের প্র্যাক্টিস হচ্ছে কারও কারও। অধিকিন্তু এ্যাসাইনমেন্ট লেখার অযুহাতে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকছে। এতে ইলেকট্রিক ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বাড়ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর।
চাঁদপুর কণ্ঠ: ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : স্কুল মানেইতো শিশু-কিশেরদের হৈ-হুল্লোর। একসাথে ক্লাস করা, লেইজারে, ছুটির আগে ও পরে ক্যাম্পাসে মাঠে বন্ধুরা আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি। সেখানে আবার স্বাস্থ্যবিধি কিসের? চাইলেও কী তা সম্ভব? বড় মানুষরা দোকানপাট, শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না আর শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা ভাবছেন? আমি মনে করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলে সরকার স্কুল-কলেজ খুলে দিবে। ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে না খোলাই উত্তম।
চাঁদপুর কণ্ঠ: গত দেড় বছরে স্কুল জীবনের কোন স্মৃতিগুলো বেশি মনে পড়েছে? ফিরে যেতে ইচ্ছে করে স্কুল ক্যাম্পাসে? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : সবচেয়ে বেশি মনে পড়েছে বন্ধুদের সাথে খেলার স্মৃতি ও একসাথে একই শ্রেণিতে ক্লাস করার মূহুর্তটি। স্মৃতিগুলো মনে পড়লে সত্যিই খুব খারাপ লাগে। আমার মনে হয় না এমন কোন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে যারা স্কুল ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে চাইবে না। তাই আমারও ইচ্ছে করে ক্যাম্পাসের মুক্ত প্রাঙ্গনে ফিরে যাই। কিন্তু করোনার কথা ভাবলে আমিও আতঙ্কিত হই। ঝুঁকির মধ্যে স্কুল খুললে যদি সংক্রমিত হই। যদি আমারও হতে হয় মৃত্যুপথযাত্রী!
চাঁদপুর কণ্ঠ: স্কুল বন্ধকালীন সময়ে আপনার সহপাঠী কারও বাল্যবিয়ে হয়েছে কী? বা কেউ পড়ালেখা ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছে কী? তানজিবুল ইসলাম রাহেল : বাল্য বিবাহ হয়েছে এমন কারও তথ্য পাইনি তবে কাজে যোগ দিয়েছে অনেকে। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতার কথা বিবেচনা করে দরিদ্র বাবা-মা-ই সন্তাকে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন।