শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০১

কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা

পরিবার থেকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য পিড়া দিয়ে যাচ্ছে

শামীম হাসান
পরিবার থেকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য পিড়া দিয়ে যাচ্ছে

করোনা পরিস্থিতির কারনে থেমে যাওয়া শিক্ষাব্যাবস্থায় মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড়ি দেয়া শিক্ষার্থীদের কেউ পরিবারের হাল ধরতে পাড়ি জমাচ্ছে দুর প্রবাসে আবার মেয়েদের মধ্যে নিজের সম্ভাবনাময় আগামীকে উপেক্ষা করে কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছে পরিবারে সিদ্ধান্তে বিয়ের পিড়িতে বসতে। গ্রামীন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পরিবারের উপার্যনক্ষম লোকটির কাজ না থাকায় প্রতিনিয়ত মানসিক চিন্তায় ভুগছেন অনেকেই। চাঁদপুর কন্ঠের ধারাবাহিক প্রতিবেদন 'কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা'র এই পর্বে চাঁদপুর কন্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উক্তীর্ণ শিক্ষার্থী মিতানুর আক্তার। জানিয়েছে তার করোনালীন শিক্ষাব্যাবস্থা নিয়ে তার ভাবনার কথা৷

চাঁদপুর কন্ঠ : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোটা কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি-না? মিতানুর আক্তার : হ্যাঁ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বারবার পেছানোটা নেতিবাচক প্রভাব পেলেছে। পড়াশোনার প্রতি আমাদের আগ্রহ কমার সাথে সাথে পড়াশোনা থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে অনেকেরই। মেয়েদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ সংসার জীবন আর ছেলেরা কেউ কেউ কর্মসংস্থানের খোঁজে প্রবাসে পাড়ি দিতে হচ্ছে। কেউবা আবার জড়িয়ে পররেছে মাদকের সাথে। আবার কেউ স্মার্ট দুনিয়ার হারিয়ে যাচ্ছে। যার দায় কেউ কখনো নেবে না। এক সময় শিক্ষার্থীদেরই দিতে হবে জীবনের লাইনচুত্যের মাশুল।

চাঁদপুর কন্ঠ : করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? মিতানুর আক্তার : করোনাকালীন পড়াশোনার খুব বেহাল অবস্থা। কেননা যে পড়াটা আমি খুব সহজে শ্রেণিকক্ষে শিখতে পারতাম তা আমার কাছে বেজায় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমি যেগুলো জানি সে বিষয়ে বার বার অনুশীলন করছি। আর আমার ভালো লাগার কিছু বিষয়ে বড়দের কাছ থেকে জানার চেষ্টায় করছি প্রতিদিনই।

চাঁদপুর কন্ঠ : মানসিক অবস্থা কেমন? মিতানুর আক্তার : বতর্মান করোনাকালীন সময়ে মানুষিক অবস্থা খুবই খারাপ। কেননা ঘরে বসে দম বন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে একটি জেলখানায় আটকে আছি। আমার শিক্ষাজীবনে হাত খরচের সামান্য একটা জোগান আসতো নিজের টিউশন করানো ফি থেকে। কিন্তু করোনাকালীন অবস্থায় তাও বন্ধ। এমনকি পরিবারে যারা উপার্জন করতো তারা ও প্রায় সবাই ঘরে বসে। এমনকি পরিবার থেকে প্রতিনিয়ত 'বিয়ে' নামক শব্দটা পিড়া দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় মানসিক অবস্থা ভালো থাকবে কি করে।

চাঁদপুর কন্ঠ : পড়ালেখা যেহেতু প্রায় বন্ধ। বিকল্প কোন কাজ করছেন কী? মিতানুর আক্তার : হ‍্যাঁ। চেষ্টা করেছি কিছুটা। একটি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কিছু শিখতে পারছি।

চাঁদপুর কন্ঠ : আপনি কি মনে করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সময়ের দাবী? মিতানুর আক্তার : হুম অব‍্যশই। কেননা সারাদেশে সব স্থানের প্রায় সকল কার্যক্রম চালু আছে শুধু পড়াশুনা তে সমস্যা কেন হবে। সরকার চাইলেই পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিতে। জানি না ১২ সেপ্টেম্বরের ঘোষণা বাস্তবায়ন হবে কি-না।

চাঁদপুর কন্ঠ : প্রায় সতের মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আপনার প্রতিক্রিয়া কী? মিতানুর আক্তার : এমন পরিস্থিতে আমারা না পারছি পড়াশুনা করতে না পারছি কোন কাজজে জড়াতে। প্রতিনিহত ভেঙ্গে পরছি মানসিক দিক থেকে। স্কুল- কলেজ খুলে দিলেই হয়তো আমাদের ভিতর প্রাণ ফিরে আসবে। কেননা এখন মনে হচ্ছে প্রাণবিহীন দেহ নিয়ে চলছি।

চাঁদপুর কন্ঠ : অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? মিতানুর আক্তার : অনলাইন পাঠদান খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। যদিও প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে আগ্রহ ছিল এখন তা ৯০% কম। এখন হাতে গোনা স্বল্প কিছু শিক্ষার্থী অনলাইন পাঠদান গ্রহণ করে বাকিরা এর বাহিরে। তাছাড়া অনেকেই আগে থেকে ক্লাস করেনি কেননা তাদের পরিবারের থেকে কোন সহযোগিতা পায়নি। গ্রাম পর্যায়ে সকল পরিবার মোবাইল ফোন ব‍্যবহার না করা, ইন্টারনেট সংযোগ না থাকা, অতিরিক্ত লোডশেডিং এর সমস্যাতে পরে অনলাইন ক্লাস থেকে উপকৃত হচ্ছে এদের সংখ্যা খুবই কম।

চাঁদপুর কন্ঠ : স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? মিতানুর আক্তার : স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ‍্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গুলো খুলে দিলে খুব বেশি ভালো হয় এতে সবাই উপকৃত হবে। একটা দেশের নাগরিকরাই দেশের সব। নাগরিকদের কারণে একটা দেশ টিকে থাকে। আর সে দেশের নাগরিক যদি অন্ধ হয় তাহলে ঐ দেশের অবস্থা কোনো ভাবেই ভালো হবে না। বরং দেশ সব দিক থেকেই পিছিয়ে পরবে। যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে থেকে খেলোয়াড়দের এনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে খেলার আয়োজন করতে পারে সরকার তাহলে দেশের নাগরিকরা কেন সে সুবিধা পাবে না? এই মহুর্তে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য ভেক্সিন এর ব‍্যবস্থা করা, শ্রেণি পাঠদান সংশ্লিস্ট সবাইকে মাক্স ও হ‍্যান্ড সেনিটাইজারের ব‍্যবহার, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট শ্রেনী কক্ষগুলোকে আলাদা শাখা করে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রেণিতে পাঠদান কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১২ সেপ্টেম্বরও যদি না খুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তবে পড়ালেখা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়