প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:০৪
কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা
জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে সতেরটি মাস হারিয়ে ফেললাম
অতিমারির প্রাদুর্ভাবে সংক্রমন ঠেকাতে গত বছর মার্চে বন্ধ হয় দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারপর থেকে কেটে গেলো প্রায় ১৭টি মাস। বন্ধ ছিলো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও। লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের কারনে সবকিছু স্থবির হয়েছে বহুবার। তবে প্রয়োজনের তাগিদে অন্যান্য সেক্টরগুলো সচল হয়েছে পর্যায়ক্রমে। শুধু সচল হয়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল কলেজের ফটকে তালা ঝুলেছে মাসের পর মাস। ২০২০ সালে সবশেষ এসএসসি দেয়া শিক্ষার্থীরা এই বন্ধে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের কলেজ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু পা রাখতে পারেনি কলেজ ক্যাম্পাসে, পায়নি কলেজ জীবনের স্বাদ। মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া সেই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আকুতি নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে কথা বলা হয় চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একাদশ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজের সাথে।
|আরো খবর
চাঁদপুর কণ্ঠ: উচ্চমাধ্যমিকে কলেজ পেয়েছেন কিন্তু ক্লাস পাননি কিভাবে দেখছেন বিষয়টি? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: অনেক সন্তান জন্ম থেকে যেমনি মা হারা হয়ে যায়, তেমনি আমরাও কলেজে ভর্তি হয়েছি কিন্তু ক্লাস পাচ্ছি না! দেশের সব কিছু চললেও থেমে আছে শুধু আমাদের ক্লাস গুলো, যা থমকে দাড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের জীবন। সারাদিন বাসায় থাকতে থাকতে এক ঘেয়েমি এসে পরেছে জীবনে যার অনেক বিরুপ প্রভাব দেখা দিচ্ছে নিজেদের মধ্যে
চাঁদপুর কণ্ঠ: করোনায় কেমন চলছে পড়ালেখা? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: যা চলছে তাকে না চলা বলাটাই উত্তম! পড়ার কোন চাপ পাচ্ছি না প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে। জানি না কি হবে কলেজ লাইফের, কবে কিভাবে হবে এক্সাম! চরম অবহেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা! মন বসাতে চাইলেও বসে না।
চাঁদপুর কণ্ঠ: মানসিক অবস্থা কেমন? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: সব কিছু বন্ধ। আমাদের পড়ালেখা, কলেজ! যেন আবদ্ধ পাগলের মত আছি কিছূটা। সারাদিন বাসায় থাকতে থাকতে নিজের উপর বিরক্তি এসে পরেছে। কেমন জানি ডিপ্রেশন অনুভব হয় প্রতিনিয়ত। কোন কিছুতেই মন বসে না! জীবন অচল হয়ে রয়েছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ: পড়ালেখা যেহেতু প্রায় বন্ধ। বিকল্প কোন কাজ করছেন কী? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: পড়ালেখার চাপ নেই, তাই নিজের সখ গুলো কিছুটা মিটাচ্ছি। কিছু সময় ফটোগ্রাফি, গেমিং আর কিছু সময় সোস্যাল মিডিয়ায় সময় দিচ্ছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ: আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: অবশ্যই ভালোভাবে দেখছি। এভাবে ঘরবন্দি আর কত? আরো আগেই এ ঘোষণা আসতে পারতো। যেভাবে সব কিছু পড়াশোনা, প্রাতিষ্ঠানিক আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, প্রয়োজনের তাগিদে খুলে দেয়া হয়েছিলো সবকিছুই। শুধু বন্ধ ছিলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হতে খুব একটা সময় লাগবে না। বর্তমানে হয়ে গেছিও কিছুটা! জীবন আগের মত নেই আর!
চাঁদপুর কণ্ঠ: গত প্রায় সতের মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আপনার প্রতিক্রিয়া কী? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে সতেরটি মাস হারিয়ে ফেললাম! ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারতো ইন্টারমিডিয়েট থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিলো। পড়ার স্পিড তৈরি করা, নিজেকে আরো পরিপক্ক করা, আরো কত কী! কিন্তু পড়াশোনার কিছুই হচ্ছে না! কি হবে আমাদের ক্যারিয়ার, কি হবে ভবিষ্যৎ, কোথায় দাঁড়াব আমরা! প্রশ্ন গুলা সব সময় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ: অনলাইন পাঠদান কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে বলে মনে করেন? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: এ বিষয়টি একটু খুলে বলা প্রয়োজন। কোন কোন প্রতিষ্ঠান জুম কিংবা গুগল মিটের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছে। যেখানে সরাসরি প্রশ্ন-উত্তর স্যারের সাথে করার মাধ্যমে কিছুটা হলেও শিক্ষা লাভ হয়। কিন্তু অন্যদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানে ফেসবুকে লাইভ ক্লাস নিচ্ছে। যেখানে স্যার বা ম্যাডাম এক তরফা ভাবে বলেই যাচ্ছেন। স্টুডেন্ট বুঝল নাকি বুঝলো তার ফিডব্যাক নেয়ার সুযোগ থাকছে না। আর এই লাইভ ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কোন পড়ালেখাই হচ্ছে না। বরং এই সুযোগে তাদের মন লাইভ ক্লাস থেকে সরে ফেসবুক স্ক্রলিং এ চলে যাচ্ছে। এতে করে ফেসবুক আসক্তি বাড়ছে একটি প্রজন্মের।
চাঁদপুর কণ্ঠ: ইন্টারমিডিয়েটের পড়ালেখার বর্তমান অবস্থা ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় প্রভাব পড়বে কী? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: কলেজের ক্লাসগুলো এখনো পাইনি কিছু। যথাযথ গাইডলাইন পাচ্ছি না ভার্সিটি এডমিসনের! কি হবে আমাদের এডমিসনেরর, কিভাবে দিব কিছুই জানি না। হয়ত এই বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের ভবিষ্যৎটাই নষ্ট করে দিবে! বর্তমান পরিস্থিতি পুরোপুরি বিরুপ প্রভাব ফেলবে এডমিসনে।
চাঁদপুর কণ্ঠ: ১২ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আপনার মতামত কী? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: বহু আগে দোকানপাট সব খুলে দিয়েছিলো তখন তো ভাবে নি স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাটা কেনো আটকিয়ে রেখেছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বরং সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা বেশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলত! কারন তারা শিক্ষকদের ভয় পায়। তাদের কথা মেনে চলে। চাইলে খুলে দিতে পারতো আরও আগেই। পূর্বে বহুবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ ঘোষণা করেও খোলা হয়নি। এবার যেন অন্তত আর তারিখ পেছানো না হয়। ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আকুতি জানাচ্ছি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে!
চাঁদপুর কণ্ঠ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ক্লাস করা স্টুডেন্ট লাইফের কোন দিকটি সবচেয়ে বেশি মিস করেন? মোহাম্মদ শাহীর বিন আজিজ: জীবন চলার পথে সাথীর প্রয়োজন হয়। আর সেই সঙ্গী সাথী গুলো আমরা এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানেই পেতাম!এভাবে সব কিছু বন্ধ করে রাখায় বন্ধুদের পাচ্ছি না, ভূগছি যেনো এক চরম একাকিত্বে!