প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৩
হাজীগঞ্জে দুটি পাকা সড়ক নির্মাণে ধীরগতি, জনদুর্ভোগ চরমে

হাজীগঞ্জে এলজিইডির দুটি পাকা সড়ক নির্মাণ কাজে ধীরগতির কারণে জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলছে এই দুর্ভোগ। ভোগান্তির শিকার লোকজন সড়ক সংশ্লিষ্টদের গালমন্দ করছে। সড়কগুলো হচ্ছে : উপজেলার বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়ুলী-দেবীপুর নূরানী মাদ্রাসা থেকে রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমি (উচ্চ বিদ্যালয়) সংযোগ সড়ক এবং বাকিলা-কামরাঙ্গা-রামপুর সড়কের মাইলঘর সংলগ্ন রেলপথ থেকে শুরু করে মহেশপুর পর্যন্ত।
|আরো খবর
কুড়ুলী সড়কটির এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণের জন্যে অর্থ বরাদ্দ হয়। ঠিকাদার সড়কের মাঝখান দিয়ে বক্স কেটে বালু ফেলে রাখে প্রায় দু বছর। বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা-কামরাঙ্গা-রামপুর সড়কের রেলপথের দক্ষিণ পাশে গত কয়েক মাস ধরে ইটের খোয়া ফেলে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও এলজিইডির গাফিলতির কারণে সড়কটি এভাবে পড়ে আছে। এতে সবসময় এই সড়ক ব্যবহার করা লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই তৎকালীন সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়ুলী-দেবীপুর নূরানী মাদ্রাসা থেকে রামচন্দ্রপুর ভূঁইয়া একাডেমি পর্যন্ত ১ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ (কার্পেটিং) কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নির্মাণকাজের নামে কাঁচা সড়কটিতে বক্স কেটে ইট ও বালু ফেলে রেখেছেন জাকির হোসেন নামে ফরিদগঞ্জের এক ঠিকাদার। অপরদিকে একই বছরের ৩১ অক্টোবর বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা-কামরাঙ্গা-রামপুর সড়কের প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজের (কার্পেটিং) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। এরপর নির্মাণ কাজের নামে সড়কটিতে বালু ও ইটের খোয়া ফেলে রেখেছেন আব্দুল কাদের নামে এক ঠিকাদার। এখনো পর্যন্ত সড়ক দুটি ওই অবস্থায়ই আছে। এতে সড়ক দুটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। এদিকে এই দুটি প্রকল্পের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের কুড়ুলী-দেবীপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুল জলিল, দেলোয়ার হোসেন, সফিক ও পারভীন বেগম জানান, গত দু বছরের বেশিদিন ধরে রাস্তায় বক্স কেটে ইটের খোয়া কিছু অংশে, আর বাকি অংশে বালু ফেলে ঠিকাদারের আর কোনো খোঁজ নেই। এতে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল করতে পারলেও গাড়ি নিয়ে চলাফেরার সুযোগ নেই। আর গাড়ি চলাচল করতে না পারায় মালামাল পরিবহন তো দূরের কথা, অসুস্থ রোগী, প্রসূতি মা-বোনদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্বজনদের।
একই অভিযোগ করে বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা ও কামরাঙ্গা এলাকার বিমলেন্দু, চা দোকানী খোকন ও কুলসুমা বেগম জানান, কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়ার জন্যে গাড়ি পেতে কষ্ট করতে হয়। ৩০ টাকার ভাড়া ১শ’ টাকা দিয়ে উল্টো পথে যেতে হয়।
ঠিকাদার জাকির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ঈদের আগেই কাজ সম্পন্ন করে দিবেন। তবে কোন্ ঈদের (ঈদুল ফিতর নাকি ঈদুল আযহা) আগে শেষ করবেন, তা তিনি বলেন নি।
অপর ঠিকাদার আব্দুল কাদের বলেন, কাজ তো শেষের পথে। এখন কার্পেটিং (পিচ ঢালাই) বাকি আছে। ঈদের পর ওই কাজটাও সম্পন্ন করে দেবো।
এ বিষয়ে বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নে পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন হেলাল জানান, ঠিকাদারের সাথে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তিনি কাজ করে দেই-দিচ্ছি বলেই যাচ্ছেন, কিন্তু কাজ করাচ্ছেন না। সবশেষ বলেছেন ঈদের আগে কাজ শেষ করে দিবেন।
বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন বলেন, দীর্ঘ চেষ্টার পর রাস্তাটি পাকাকরণের অনুমোদন ও টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ না করায় প্রায় দু বছর ধরে কাজটি পড়ে আছে। এতে করে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজনের আসা-যাওয়া করতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক বলেন, রাস্তা দুটি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।