প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২১, ২২:০৬
রাতে ইউএইচএফপিওকে ফোন করায় রোগীকে চড়-থাপ্পর দিলো সাকমো
সাংবাদিক জানায় রোগীর চিকিৎসা সেবাই বন্ধ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা তথা বড় ডাক্তারকে কেনো রাতে ফোন দেয়া হলো এই অপরাধে সাকমো কর্তৃক এক রোগীকে চড় থাপ্পড় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জেনে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, এ ঘটনা কেনো সাংবাদিক জানলো, তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রোগীর চিকিৎসা সেবাই একরকম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। নিরূপায় হয়ে রোগী বাড়িতে চলে গেছেন। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
|আরো খবর
জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার সাফুয়া গ্রামের আঃ রশিদ (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে পরিবারের লোকজন অজ্ঞান অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ২০ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে নিয়ে আসলে চিকিৎসকের পরিবর্তে সাকমো অলি আহমদ রোগীর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। এদিকে এর আগে হাসপাতালে একাধিকবার ফোন করে কারো কোনা সাড়া-শব্দ না পেয়ে রোগীর উদ্বিগ্ন স্বজনরা হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে ফোন করেন। কেন হাসপাতালের বড় ডাক্তারকে ফোন করা হলো এই অপরাধে ওই রোগীকে সাকমো অলি আহমদ চড় থাপ্পড় দেয় বলে অভিযোগ করেন ওই রোগীর স্ত্রী জাহানারা বেগম। যদিও পরবর্তীতে চিকিৎসক এসে চিকিৎসা সেবা দিয়ে রোগীকে কিছুটা সুস্থ করে তোলেন।
জাহানারা আরো জানান, রাতে তার স্বামীকে নিয়ে হাসপাতাল গেটে আসলে তা বন্ধ দেখতে পান। পরে এক সাংবাদিক ফোন করে বললে গেইট খুলে দিলেও রোগীকে ইমার্জেন্সি কক্ষে নিয়ে যেতে উপস্থিত হাসপাতালের স্টাফকে বলেও সহযোগিতা পান নি। পরে ইমারর্জেন্সি কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর সাকমো অলি আহমদ রোগীকে জ্ঞান ফোরানোর চেষ্টার পাশপাশি ক্ষিপ্ত হয়ে দু‘গালে ও মাথায় চড় থাপ্পড় দিয়ে বলেন, বড় স্যারকে ফোন দিলি কেন?
এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মী জাকির হোসেন সৈকত জানান, আমার বাড়ির পাশের আঃ রশিদ নামের এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে ১০/১৫ বার হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ফোন দিলেও ফোনটি রিসিভ হয়নি। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ফোন করে বলার পর হাসপাতাল গেট খুলে দেয়া হয় এবং ডিউটি ডাক্তার এসে চিকিৎসা দেন।
এ বিষয়ে গেট বন্ধ থাকার সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের নৈশ প্রহরী বলেন, গেইট বন্ধ ছিল। তাই খুলতে একটু দেরি হয়েছে।
এদিকে ঘটনা জানতে সাংবাদিকরা শনিবার হাসপাতালে গেলে অভিযুক্ত সাকমো অলি আহমদ হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছে প্রথমে তিনি চড় থাপ্পড় দেননি বললেও পরে অনিচ্ছাকৃত ভুল শিকার করে ক্ষমা প্রার্থী হন। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষে সাংবাদিকদের সামনে রোগী আব্দুর রশিদের স্ত্রী জাহানারা বেগমের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেন ওই কর্মকর্তা। পরে জাহানারা বেগম সন্তান তুল্য বলে তাকে ক্ষমা করে দিলেও ভবিষ্যতে যেন এ রকম কোনো ঘটনা না ঘটে এর জন্যে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ রাখেন। অন্যদিকে রোগীর সাথের লোকজন জানায়, সাংবাদিকরা বিষয়টি জানার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে আর কোনো সেবা না দেয়ায় শনিবার দিনই রোগী স্বেচ্ছায় বাড়ি চলে যান।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঘটনার বিষয় রোগী ও সাকমোর কাছ থেকে জেনেছি। সাকমো অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেও সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সত্যতার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো জানান, আমি ফোন দিয়েছি ইমার্জেন্সির দায়িত্বে থাকা ডাঃ মাসুদকে। কিন্তু সে কি করে জানলো?
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি এ বিষয়ে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বটে। আমি এ বিষয়ে ইউএইচওকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলবো।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ সাখাওয়াত উল্লাহ মুঠোফোনে জানান, আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।