সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ২১:৪৯

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গন

আতঙ্কে মতলব চরলক্ষ্মীপুরের তিন হাজার বাসিন্দা : হুমকির মুখে স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ ও কবরস্থান

আতঙ্কে মতলব চরলক্ষ্মীপুরের তিন হাজার বাসিন্দা : হুমকির মুখে স্কুল মাদ্রাসা মসজিদ ও কবরস্থান
স্টাফ রিপোর্টার

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গন আতঙ্কে দিনযাপন করছেন মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের তিন হাজার সাধারণ মানুষ। ইতোমধ্যে ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতঘর, ফসলি জমি ও পারিবারিক কবরস্থান।

হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের একমাত্র স্কুল চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই গ্রামে একটিমাত্র মাদ্রাসা ও মাজার রয়েছে, যেটি প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।

সরজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত ধীরে ধীরে ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে চরলক্ষ্মীপুরের কয়েক শ' একর ফসলি জমি। নদীবেষ্টিত চরলক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এই নদী ভাঙ্গনের কারণে এখানকার কৃষকরা প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি, যতো দ্রুত সম্ভব কোনোরকমভাবে হলেও গ্রামবাসীকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা।

স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম প্রধান, কামরুজ্জামান রিপন, আলাউদ্দিন প্রধান ও মামুন প্রধান জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছি। এই তিন মাস যাবৎ ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। আমাদের অনেক ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বসতভিটা নিয়ে আমরা আতঙ্কে দিন যাপন করছি।জমি-জমাতে ফসলাদি করে আমাদের দিন চলে। সেই ফসলী জমিটুকুও নদীতে বিলীন হয়ে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের বসতভিটেটুকু রক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে মাথাগোঁজার মতো একটু জায়গা থাকে। এখানকার মানুষের মধ্যে শহরে বা অন্য কোথাও গিয়ে জমি কিনে বসতি করার সামর্থ্য অনেকেরই নেই।

স্থানীয় মুরুব্বি আলহাজ্ব কাজী নাসির উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ইলিয়াস প্রধান ও আলহাজ্ব আব্দুল কাদির প্রধান বলেন, চরলক্ষ্মীপুর গ্রামটি একেবারে নদীবেষ্টিত। এই গ্রামের চতুর্দিকেই নদী। এখানে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার মানুষ বসবাস করে। এখানে একটি স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মাজার ও ঈদগাহ রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের যে তীব্রতা দেখা দিয়েছে, তাতে গ্রামের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মাদ্রাসা ও ঈদগাহের একেবারে পাশেই নদী চলে এসেছে। যে কোনো সময় গ্রামের ঈদগাহটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই ভাঙ্গন প্রতিরোধে আমরা উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট অফিসে কতবার আবেদন করেছি! কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।

সুলতানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রধান বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আমাদের এমপি ছিলেন। ওনাকে একাধিকবার বলার পরেও উনি শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে গ্রামটি প্রায় বিলীন হয়ে যাবে।

চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এএইচএম জামাল সাকিব বলেন, পুরো গ্রামবাসীর জন্যে এই একটি মাত্র স্কুল রয়েছে এখানে। নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে প্রায় স্কুলের কাছে চলে এসেছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে স্কুল ও গ্রামবাসীকে রক্ষা করা যাবে না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, যতো দ্রুত সম্ভব এই গ্রামটিকে রক্ষা করতে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ জানান, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আমি নিজে সেখানে যাবো। সেখানকার পরিস্থিতি দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়