প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ২০:৪০
সাগরে নিষেধাজ্ঞা শেষ, মাছ ধরা শুরু
চাঁদপুর মাছঘাট ব্যবসায়িদের বুকভরা আশা,এখন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ আড়তে আসবে
সাগরে আবার মাছ ধরা শুরু হয়েছে। প্রজনন ও সংরক্ষণে সাগরে মাছ ধরায় ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। রোববার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় আনন্দিত চাঁদপুরের উপকূলীয় জেলেরা। ট্রলার নিয়ে ইলিশ সহ সামুদ্রিক মাছ ধরতে নেমে গেছেন সাগরে। রুপালি ইলিশের ক্রয়-বিক্রয়ের বড় মোকাম হচ্ছে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট। এবার ইলিশ মওসুম ভালো যাচ্ছে না এখানে। সারাদিন ২০/২৫ মণ ইলিশের আমদানি হয়। যেখানে শতশত মণ ইলিশ আসতো এই ঘাটে। এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।ইলিশের দুষ্প্রাপ্যতায় এখনো দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ইলিশের আকার ও পরিমাণ ভেদে প্রতি কেজি ইলিশ ঘাটেই বিক্রি হচ্ছে ৮/৯'শ টাকা থেকে হাজার-বারো'শ এবং ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা দরে। সোমবার সরজমিনে মাছ ঘাটে গিয়ে এমন তথ্য জানা যায়। ছোট বড় সবগুলো আড়তেই ইলিশের শূন্যতা বিরাজ করছে। সকালে যে পরিমান মাছ এসেছিলো স্থানীয় ছোট পাইকাররা কিনে নেয়। এদিন পুরো ঘাটে ২৫ থেকে ৩০ মন ইলিশ এসেছে বলে ইলিশ মোকামি মিজান জমাদ্দার জানিয়েছেন। তিনি বলেন,এবার সাগরে ৬৫ দিনের অবরোধের সময় বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরতে পারেনি। কিন্তু ভারতের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরে নিয়ে গেছে। তার মতে,আমাদের স্থানীয় নদ নদীতে এমনিতেই ইলিশ ধরা পড়ে কম।সাগর উপকূলীয় জেলেদের আহরিত ইলিশের চাকচিক্যে আমাদের এই ঘাট থাকে সরগরম। এবার সেই ইলিশের দেখা মেলেনি।গত দুটি মাস এখানকার ইলিশ আড়তদারদের ইলিশ ব্যবসার খুবই শোচনীয় অবস্থা যাচ্ছে। ঘাটের বড় ইলিশ অড়তদার বাবুল হাজী জানান,আমাদের চাঁদপুরে ইলিশের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। নিষেধাজ্ঞা ছিলো সাগরে। জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে যেতে পারিনি। এখন নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে, জেলেরা ফিশিং বোট নিয়ে মাছ ধরতে সাগরে গেছে। আশা করি,এখন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ আড়তে আসবে। তিনি বলেন, এবার চাঁদপুরে ইলিশ কম আমদানি হওয়ার কারণ সাগরেই মাছ ছিল না। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা সময়কাল সফল করতে হলে বাংলাদেশ ও ভারত সমন্বয় করে দুই দেশের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখতে হবে। তা না হলে এবারের মতন সামনেও ইলিশের এমন সংকটের সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণা মতে, মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননকাল। এ কারণেই সাগরের মাছসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রাণিজসম্পদ রক্ষার পাশাপাশি ভাণ্ডার বাড়াতে দীর্ঘসময় মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞারোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। এর পরিপ্রক্ষিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। দীর্ঘদিন বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় এবার বেশি মাছ পাবেন বলে আশাবাদী জেলেরা। তারা বলছেন, সাগরে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে কারণে দু’মাস ধরে আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। যার প্রভাব চাঁদপুর ইলিশ অবতরণ কেন্দ্রেও পড়েছে। তারা আরও বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধকালীন আমরা সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী ভারতের জেলেরা আমাদের জলসীমানায় ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যায়। তাই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেদের আগ্রাসন রোধে ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর সাগরে সব ধরনের মাছ শিকারে ৬৫ দিনের (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত) নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ২০১৪ সাল থেকে এ কার্যক্রম চলমান।