প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
বৌভাতের অনুষ্ঠানে হামলা, এরপর এক স্কুল শিক্ষকের উপর দুই দফা হামলার পর পাল্টা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানির পর সালিসে আপস-মীমাংসা করলেও আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার না করায় দুজনকে এখন জেল খাটতে হচ্ছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের। স্থানীয় সালিসদাররাও এই বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম কালাম জানান, ২০১৯ সালের ৭ জুন তার ভাতিজা শাকিলের বৌভাত অনুষ্ঠানে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এই ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে তাদের পার্শ^বর্তী অলি মিজিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বছরের ১২ আগস্ট রাতে তার উপর হামলা করে অলি মিজিসহ তার লোকজন। একইভাবে আবার এক বছর পর ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর পুনরায় তার উপর হামলা করা হয়। এসব ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
তিনি জানান, এসব ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর তিনিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন ছাত্তার গাজী। তিনি পরপর তিন দফা হাজিরা দিয়েছেন ওই মামলায়।
পরে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি গোবিন্দপুর দক্ষিণ পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য, রাজনৈতিক নেতা এবং গণ্যমান্যদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যকার মতভেদ নিরসন করে সকল মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতে আপসনামাও সম্পন্ন হয়।
বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির কথা থাকলেও অদ্যাবদি তা হয়নি। বরং গত ১৩ অক্টোবর মামলার নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দিতে গেলে তার দুই ভাতিজা জাকির ও রাকিব পরপর দুই তারিখে হাজিরা না দেয়ায় তাদের জামিন বাতিল করে বিজ্ঞ আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
শিক্ষক সাইফুল ইসলাম কালাম জানান, বৌভাতে হামলা ভাংচুর, দুইবার শারিরিক নির্যাতনে শিকার এবং পরে চাঁদাবাজির মামলার আসামী হওয়া স্বত্ত্বেও আমরা এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলার বজায় রাখার স্বার্থে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিপক্ষের সাথে আপস-মীমাংসায় বসি। সালিসদারদের দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আপসনামায় স্বাক্ষর দিই। কিন্তু প্রতিপক্ষ কৌশল করে আপসনামার কাগজ আদালতে উপস্থাপন না করে আমাদের নতুন করে হয়রানি শুরু করেছে। তবে আমি আশাবাদী ছাত্তার গাজীসহ আমার প্রতিপক্ষরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন।
বিষয়টি নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি সালিস করা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ইউপি সদস্য টেলু পাটওয়ারী, টিপু সরকার এবং লোকমান মিজি মুঠোফোনে জানান, দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা সকলে বসে সিদ্ধান্ত দিই। উভয় পক্ষ তা মেনে আপসনামায় স্বাক্ষর দেন। একই সাথে তারা নিজ নিজ মামলা প্রত্যাহার করে নিবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এতদিন পরও তারা কেনো তা প্রত্যাহার করলো না তা বুঝতে পারলাম না। উল্টো দুটি লোক জেল খাটছে। আশা করছি দ্রুত এই বিরোধের নিষ্পত্তি হবে।
এ ব্যাপারে ছাত্তার গাজী মুঠোফোনে জানান, আমরা দুই পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদে বসে আপস-মীমাংসা করেছি। আজ ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার মামলার তারিখ রয়েছে। আদালতে গিয়ে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করবো। একই সাথে জেলহাজতে থাকা দুজন যেনো জামিন পায় সেই চেষ্টাও করবো।