প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখলের চেষ্টা ॥ কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত ৯
সম্পত্তির উপর সীমানা নির্ধারণী বাউন্ডারি স্থাপনের সময় বাধা দিয়ে অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা। অতঃপর কিশোর গ্যাং লেলিয়ে দিয়ে অতর্কিত হামলায় ৯ জনকে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের বিরুদ্ধে।
১৬ জুলাই সোমবার উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া (দক্ষিণ) ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চমুখা মিজি বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটে। হামলার ঘটনায় আহত আক্তার হোসেন আতু (৬০), আনোয়ার মিজি (৪০), শিল্পী বেগম (৩৫), আকবর হোসেন বতু (৫৫)কে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় বাক্প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ আক্তার হোসেন আতুকে। হামলার শিকার অপর পাঁচজন হলেন আমিন (৫৫), আতিকুর রহমান (১৭), শাহিনুর বেগম (৫০), আমির হোসেন (৬৫) ও মোবাশে^রা বেগম (৬০)।
দখল চেষ্টাকৃত সম্পত্তির ক্রয়সূত্রের মালিক পান্না বেগম এই প্রতিবেদককে জানান, আমি আমার ভাইদের কাছ থেকে ১৯ শতাংশ জায়গা কিনেছি। আমার জায়গার উপর বেড়া দিতে গেলে সেখানে মনির-তুহিনসহ কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায় ও জায়গা দখলের চেষ্টা করে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত বছর দরজার নিচে দিয়ে চিঠি লিখে এরাই আমাকে হামলার হুমকি দিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি করে।
হামলার শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, একই বাড়ির বাসিন্দা হান্নান পাটওয়ারীর ছেলে মনির পাটওয়ারীর ইন্দনে পার্শ্ববর্তী ইছাপুরা গ্রামের, তুহিন, শাহিন, শামীমসহ প্রায় দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য মিলে এ হামলা চালায়।
হামলার শিকার হয়ে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আকবর হোসেন বতু জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার সার্টিফিকেট না দেওয়ায় আমরা মামলা করতে পারছি না। হাসপাতাল থেকে বলছে তিন-চারদিন পর ডাক্তারি সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। অনলাইন হচ্ছে না- এই সেই বলে আমাদের বুঝ দিচ্ছে। আগামীকাল বুধবার নাকি বন্ধ, এরপর বলতেছে শুক্র-শনিবার বন্ধ। তাই বলেছে রোববার আসতে। এসব মনির টাকা দিয়ে করতেছে। এ দেশে যদি বিচার না থাকে তাইলে আর কি? আমাদের কপালে মাইর ছিলো তাই আমরা মাইর খাইছি। এখন অনেকের কাছে শুনতেছি উল্টো তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
হামলার ঘটনায় আহত আতিকুর রহমান জানায়, আমার বাবা আর আমি আমাদের দোকানে ছিলাম। তুহিন ভাইরা সন্ত্রাস নিয়ে এসে আমার বাবাকে মারতে শুরু করে। বাধা দেওয়ার জন্য আমি এগিয়ে গেলে আমাকে ইট ও পাথর মারে। তাদের হাতে থাকা এসএস পাইপ দিয়ে আমার মাথায় ও পিঠে আঘাত করে। দোকানের ক্যাশে থাকা ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এসময় আমার বোবা (বাক্ প্রতিবন্ধী) আতু চাচা এগিয়ে গেলে তাকে হকিস্ট্রিক দিয়ে মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করে। চাচার অবস্থা এখন খুবই খারাপ। তাকে ঢাকায় হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুলাল পাটওয়ারীর মেয়ে পান্না বেগম তার ভাইদের কাছ থেকে ১৯ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে। সেটিতে সীমানা দেয়ার সময় মনিরসহ কয়েকজন বাধা দেয়। একই দিন ১৫ জুলাই সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় মনির পাটওয়ারীর ইন্দনে প্রায় দুই শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য হামলা চালায়। একই বাড়ির কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, মনির পাটোয়ারী খুঁজে খুঁজে মানুষের ওয়ারিসের সম্পত্তি কিনে। সবার সাথে সমস্যা সৃষ্টি করে রাখে।
হামলার ঘটনার অভিযুক্ত মূল ইন্দনদাতা মনির পাটওয়ারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করার পর তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মারামারির সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি প্রবাসে থাকি। দীর্ঘদিন আমার বাড়ির সামনে যে পথ আমি ব্যবহার করি উনারা সেটাতে বেড়া দিতে গেলে আমি বাধা দেই। পরে দোকানের কাছে মারামারির বিষয়ে আমি জড়িত নই। এখন কেউ যদি আমার নামে কিছু বলে সেটা তার বিষয়।
হামলার ঘটনায় অপর অভিযুক্ত তুহিনের সাথে মুঠোফোন ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তুহিন সংবাদকর্মীর পরিচয় পাওয়া মাত্র দ্রুত কল কেটে নম্বরটি বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল এই ঘটনার পর আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে কেউই জানায়নি। বিকেল তিনটায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাড়ি ফেরার পর আমি জানতে পারি এ ঘটনার কথা। বিকেলে চাঁদপুরে গেলে সদর হাসপাতালে আহতদের আমি দেখে এসেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মাহাবুব ইসলাম জানান, হামলার ঘটনায় ৯৯৯-এ অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত কাউকে পাইনি। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা হলে, আইনি সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্যে তাদেরকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিই। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।