প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
৩১টি গ্রামের ভরসা একটি নৌকা
মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও কুমিল্লার দাউদকান্দিকে ভাগ করেছে খিরাই নদ। নদের দুই পাড়ে ৩১টি গ্রামের বাসিন্দাদের বসবাস। কিন্তু গ্রামগুলোর কাছাকাছি নদ পারাপারে কোনো সেতু নেই। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কাজে এপার থেকে ওপারে যেতে ৩১টি গ্রামের ভরসা একটি খেয়ানৌকা। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে শঙ্কা নিয়ে নদ পার হতে হয় বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, নদের দুই পারের বাসিন্দাদের নানা কাজে দুই পারে যাতায়াত করতে হয়। চাকরি-বাকরি, সন্তানদের পড়ালেখা, চাষাবাদ করা পণ্য এপার থেকে ওপারে নৌকায় আনা-নেওয়া করতে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এমতাবস্থায় মতলব দক্ষিণের চরশিলিন্দা গ্রাম দাউদকান্দির দক্ষিণ নারান্দিয়ার মাঝামাঝি নদে তাঁরা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মতলব দক্ষিণের চর শিলিন্দা গ্রাম ও দাউদকান্দির দক্ষিণ নারান্দিয়ার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে খিরাই নদ। নদের একদিকে মতলব দক্ষিণের বকচর, ষোলদানা, কাচিয়ারা, খিদিরপুর, পিতাস্বর্দী, নন্দীখোলা, দাসেরবন্দ, বরদৌল, ঘোনা, লাকশিবপুর, বুদুন্দা গ্রাম। অন্যদিকে দাউদকান্দির মানিকদি, সম্বুরদিয়া, চৌধুরীপাড়া, দৌলতপুর, নয়াকান্দি, শ্রীকান্তদি, মাইথারদিয়া, সাদারদিয়া, রফারদিয়া, কবিচন্দ্রদি, তুলাতলী, গাংকান্দা, বাজারখোলা, জাফরাবাদ, মহিষমারী, পদুয়া, খালিসা ও শ্রীরায়েরচর। এপারের অনেকের ওপারে, আবার ওপারের অনেকের এপারে কৃষিজমি, ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যও অনেকের নদ পাড়ি দিতে হয়। স্থানীয় লোকজন নিজেরা টাকা দিয়ে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করলেও অজ্ঞাত বাল্কহেডের ধাক্কায় সেতুটি ভেঙে যায়। এরপর থেকে দুর্ভোগ নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা।
দক্ষিণ নারান্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কবির হোসেনের বাড়ি নদের পূর্ব পাড়ে ধারিবন গ্রামে। তার মেয়েও তার বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। খিরাই নদে সেতু না থাকায় প্রতিদিন নৌকা দিয়ে বাবা-মেয়েকে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। নদ পারাপারে মাত্র একটি নৌকা থাকায় সময়মতো বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারেন না।
কবির হোসেন বলেন, জোয়ারের সময় আতঙ্কে নদ পার হতে হয়। আবার ভাটার সময় পানি একেবারে নিচে নেমে যায়। তখন কাদাপানি মাড়িয়ে নৌকায় উঠতে হয়। মাঝি অসুস্থ হলে বা খাবার খেতে গেলে জরুরি কাজে নৌকা পাওয়া যায় না। ঝড়বৃষ্টির সময় দুর্ভোগের শেষ থাকে না। স্থানীয় লোকজন লাল সেতু নামে একটি কাঠের সেতু বানালেও সেটি ভেঙে গেছে। এখন কাঠের সেতু নির্মাণের আগ্রহ নেই বাসিন্দাদের। এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা খুবই দরকার।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, খিরাই নদে ভাটা চলছে। নদের একদিকে দক্ষিণ নারান্দিয়া ও অন্যদিকে চরশিলিন্দা গ্রাম। নদের উত্তর পাড়ের সড়কটি কাঁচা-পাকা হলেও দক্ষিণেরটি কাঁচা। ছাউনি ছাড়া একটি খেয়া নৌকায় স্থানীয় লোকজন নদ পার হচ্ছেন।
চরশিলিন্দা গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা আক্তার বলেন, নদে মাত্র একটি নৌকা থাকায় সব সময় ঘাটে নৌকা পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে অনেকক্ষণ পরপর একটি নৌকা এপার থেকে ওপারে যায়, ভাড়াও বেশি। নৌকায় ছাউনি না থাকায় রোদ, ঝড়-বৃষ্টিতে যাত্রীদের কষ্ট সহ্য করতে হয়।
দক্ষিণ নারান্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আহমেদ বলেন, তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী নদের ওপার থেকে নৌকায় করে বিদ্যালয়ে আসে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে কমে যায়। ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হোসেন জানায়, নদ পারাপারের ভয়ে দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামে ফুফুর বাড়িতে থেকে সে পড়ালেখা করছে।
দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের কৃষক মিন্টু মিয়ার কৃষিজমি আছে নদের ওপারে। নদে পাকা সেতু না থাকায় খেয়ানৌকায় নদের ওপারে গিয়ে ফসল আবাদ, উৎপাদিত ফসল বাড়ি আনা, বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাকে। মিন্টু মিয়া বলেন, নদে একটি পাকা সেতু হলে তাদের অনেক উপকার হতো। তিনি জনপ্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের কাছে সেতুটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান।
দৌলতপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খিরাই নদে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছেও তুলে ধরেছেন। দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, একটি পাকা সেতু নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর উপজেলা প্রকৌশলীকে তিনি নিয়মিত তাগাদা দিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায় বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। সরেজমিনে পরিদর্শনের পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্র : প্রথম আলো।