প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপ্রধানে ভার্চুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, জেলায় করোনা পরিস্থিতি যেভাবে উন্নতি হওয়ার কথা ছিলো তা হয়নি। বরং চাঁদপুর জেলায় করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, করোনা সংক্রমণরোধে আমরা আরও একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সেটি হচ্ছে, জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি কমিটি গঠন। এ কমিটির সভাপতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আর সদস্য হচ্ছে মেম্বার, স্কুল শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, ব্লক সুপারভাইজার, হেল্থ প্রোভাইডার ও বিট পুলিশের প্রতিনিধি। এ কমিটি যারা করোনা আক্রান্ত তাদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করবে, স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যে প্রচার-প্রচারণা চালাবে, টিকাদান কাজে সহায়তা করবে। সার্বিকভাবে তারা করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন কমিটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা তদারকি করার জন্যে জেলা পর্যায় থেকে ইউনিয়ন প্রতি একজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। এভাবে আমরা পুরো জেলাকেই একটি মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। যাতে করোনা প্রতিরোধে আমরা কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারি।
তিনি আরও বলেন, জেলায় করোনা রোগী সংখ্যা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে স্থান সংকুলান না হওয়ার বিষয়ে আরেকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করার পরিকল্পনা চলছে।
সভায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে পৌর, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সেই সাথে আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পশুর হাট বিষয়ে এবং গৃহহীন ও ভূমিহীন পুনর্বাসনে নির্মিত ঘর বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ করোনা অতিমারিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের গরিব-দুঃস্থদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অসীম চন্দ্র বণিকের সঞ্চালনায় সভায় চাঁদপুর জেলার করোনা পরিস্থিতিসহ আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এতে পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার)সহ জেলার সকল সরকারি দফতরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ সভায় যুক্ত ছিলেন।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এটি করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। তাদের অনুমতি নিয়ে এর বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসলে তাদেরকে সেবা দিতে হবে। সদর হাসপাতালে যে ক্যাপাসিটি আছে তার বাইরে এখানে রোগী নিতে পারবে না। তাহলে রোগী বাড়লে বাকিরা কোথায় যাবে? সেজন্যই এ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আরেকটি হাসপাতাল ঠিক করতে চাই।
কোরবানির হাট সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই পশুর হাট সম্পর্কে হয়তো সিদ্ধান্ত পাবো।
সিভিল সার্জন ডাঃ শাখাওয়াত উল্যাহ বলেন, ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এটির শয্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৬০টি বেড রয়েছে। এ হাসপাতালে আরও ৩০টি বেড বাড়ানো হবে। পাশাপাশি বেসরকারি কোনো একটি ডেডিকেটেড হাসপাতালের জন্যে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, আমরা চক্ষু হাসপাতালকে নিতে চেয়েছিলাম। চক্ষু হাসপাতালের দোতলায় বেড রেডি আছে। সেখানে প্রায় ৩০ জন রোগী ভর্তি করা যাবে। তাই এটিই প্রথম পছন্দ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজি থাকলে সেটিই হবে। আর যদি সেটি না হয় তাহলে বিকল্প কোনো ফিল্ড হাসপাতাল করা যায় কি না সেটি স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি মহোদয় দেখবেন।
পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার) বলেন, জেলায় সাম্প্রতিককালে যে ৫টি খুন হয়েছে সে ব্যাপারে আমাদের কয়েকটিতে অগ্রগতি আছে। করোনা বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ এখনো সচেতন হয়নি। সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই ৫/৬ জন করে পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। তারপরও আমরা মনোবল হারাইনি।
পৌর মেয়র অ্যাডঃ মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আর এখন যেহেতু কমিটি হয়েছে সেক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। সভায় হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী করোনা রোগীদের বহনের জন্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স এবং এর খরচ বহন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে হবে। বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, করোনা রোগীর বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স এবং দাফন-কাফনে আমরা সাহায্য করবো।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ হাবিব উল করিম, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুননাহার চৌধুরী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদ, ডিডি এনএসআই শেখ আরমান ও চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী।