প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০৯
নারায়ে তাকবির’ স্লোগানে রাজশাহীতে টেন্ডার বাক্সে হামলা: সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও দরপত্র লুট
‘নারায়ে তাকবির’
রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় ফাঁকা গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ এবং টেন্ডার বাক্স লুটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শাকিলুর রহমান রন নামে এক সাবেক যুবদল নেতা আহত হয়েছেন।
|আরো খবর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১২টি হাটের ইজারার জন্য দরপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল সোমবার। টেন্ডার বাক্স ইউএনও কার্যালয়ের বাইরে রাখা ছিল। তবে দরপত্র দাখিলের সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে, চলে ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ। পরে টেন্ডার বাক্স ভেঙে দরপত্রগুলো লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।
হামলার পেছনে ‘হাট ইজারা’ নিয়ে দ্বন্দ্ব: জানা গেছে, যুবদল নেতা শাকিলুর রহমান জেলা যুবদলের একজন যুগ্ম আহ্বায়কের সঙ্গে দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, খড়খড়ি হাটের ইজারা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। দরপত্র জমা দিতে গেলে প্রথমে কয়েকজন বাধা দেন। পরে হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয় এবং একপক্ষ গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সেই সঙ্গে টেন্ডার বাক্স ভেঙে দরপত্র নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবদল নেতা বলেন, "আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়, এরপরই কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। হামলাকারীরা ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিতে দিতে দরপত্র লুট করে নিয়ে যায়।"
তিনি দাবি করেন, হামলাকারীদের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি ইসলামপন্থি সংগঠনের দুই নেতা ছিলেন। তবে অভিযুক্ত এক নেতা তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, "আমি দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু লুটের ঘটনায় আমি জড়িত নই। এটি যুবদল ও বিএনপির দুই গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।"
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও আইনি ব্যবস্থা: রাজশাহীর শাহমখদুম থানার ওসি মাসুমা মোস্তারিন বলেন, "সংঘর্ষের সময় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। জমা দেওয়া দরপত্র লুট হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
পবা উপজেলার ইউএনও আরাফাত আমান আজিজ জানান, "দরপত্র জমার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ সংঘর্ষ হয় এবং দরপত্র বাক্স ভেঙে ফেলা হয়। তবে ইজারা প্রক্রিয়া বাতিল হবে না, কারণ দরপত্র জমাদানের জন্য ৬ ও ৭ এপ্রিল আরও দুটি দিন নির্ধারিত রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করেছে, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ঘটনার তদন্ত চলছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
নিরাপত্তা জোরদার ও পুনঃতদন্তের দাবি: এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং বাজার ইজারার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান ব্যবহার করে সংঘর্ষের ঘটনা উদ্বেগজনক এবং এটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রতার ইঙ্গিত বহন করে।
এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কীভাবে এই ঘটনা সামাল দেয় এবং পরবর্তী দরপত্র দাখিল কতটা স্বচ্ছ ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়।
ডিসিকে/এমজেডএইচ