প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর বাজারের নৌকা ঘাট। বাজারের গোড়াপত্তন থেকেই মাঝি-মাল্লাদের আনাগোনায় সরগরম হতো এ নৌকা ঘাট। নারায়ণপুর বাজারের মাঝামাঝি অবস্থানে বোয়ালজুড়ি খালের পাড়ে গড়ে উঠা এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন বাজারের ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার মালামাল উঠানো হয়। যেসব মালামাল আসে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে। এ ঘাট দিয়ে কেবল মালামালই উঠানামা করতো না, একসময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর এবং হাজীগঞ্জে যাতায়াতকারী যাত্রীরা যাওয়া-আসা করতো। তাই ঐতিহ্যবাহী নারায়ণপুর বাজার নৌাকা ঘাটের সাথে বিভিন্ন এলাকার মানুষের অনেক স্মৃতি জড়িত।
এক সময়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নারায়ণপুর বাজারের নৌকা ঘাটে এখন আর পা ফেলার পরিবেশ নেই। বাজারের বর্জ্য ফেলার কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকায় অঘোষিতভাবে বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের সকল বর্জ্য এ ঘাটে ফেলে রাখে। এতে মালামাল উঠানামার এ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অসুস্থ হয়ে পড়ছে মালামাল উঠানামায় নিয়োজিত শ্রমিকগণ।
ব্যবসায়িক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এ ঘাট এখন অযত্ন-অবহেলায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ঘাটে যাতায়াতের পথ ও তার আশপাশ বাজারের উচ্ছিষ্ট আবর্জনায় ভরপুর। অপরদিকে অসচেতন মানুষ সেখানে প্রস্রাব করে পরিবেশ দুর্গন্ধময় করে রেখেছে। যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকগণ চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকা থেকে ট্রলারে করে আনা মালামাল বাজারের বিভিন্ন দোকানে পৌঁছে দিচ্ছে। অথচ অন্যের জীবনের আর্থিক সচ্ছলতা ও জীবনের সমৃদ্ধিতে কাজ করে যাওয়া নারায়ণপুর বাজারের কুলি-মজুরের নিজেদের জীবনযুদ্ধ চলে ময়লার ভাগাড়ের সাথে লড়াই করে।
এ ব্যাপারে কথা হয় নারায়ণপুর বাজারের শ্রমিক সর্দার মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে। তিনি তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকার মালামাল আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘাট দিয়ে পৌঁছে দিই বিভিন্ন দোকানে। কিন্তু ঘাটের মধ্যে পা ফেলার কোনো পরিবেশ নেই। পুরো বাজারের ময়লা-আবর্জনায় নৌকা ঘাটের অস্তিত্ব এখন বিলীনের পথে। এছাড়া অসহনীয় দুর্গন্ধ তো আছেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেকের সাথে আমাদের কষ্টের কথা, পরিবেশ দূষণের কথা বলেছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে কুলি সর্দার মিজানুর রহমান বাজারের উল্লেখিত সমস্যা সমাধানে বাজার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আমরা নিরূপায় হয়ে এই জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলি। বাজার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে দিলে আমরা পরিবেশ রক্ষায় অবশ্যই যথাযথ নিয়ম মেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলবো।
এ ব্যাপারে কথা বলেন নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ৩নং খাদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর হোসেন রিপন। তিনি বলেন, নারায়ণপুর বাজার অনেক পুরানো এবং বড় বাজার। এখানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এই বর্জ্য অপসরাণ করার জন্যে আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও বাজারের আশপাশে সরকারি কোনো খাস সম্পত্তি পরিত্যক্ত অবস্থায় নেই, যেখানে আমরা বাজারের বর্জ্য অপসারণ ও পরবর্তী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি। যেসব খাস সম্পত্তি রয়েছে তা কোনো কোনোভাবে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনে আমরা ৩টি গণশৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছি। সেগুলো নির্মাণ করতেও জায়গার মালিকদের সাথে আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্জ্য অপসারণের এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় আছি। তবে আপাতত আমাদের কিছু করার নেই।
বর্জ্য অপসারণ নিয়ে কথা বলেন নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার। তিনি বলেন, বাজারের বর্জ্য অপসারণের জন্যে উপযুক্ত জায়গা না থাকায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। দোকাদারদের উৎপাদিত বর্জ্য বোয়ালজুরি খালে ফেলার জন্যে এই স্থানটি ব্যবহার করে। এতে করে নৌকা ঘাট ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাজারের নৌকা ঘাটটি পাকা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে এবং এর পাশে ময়লা ফেলার জন্যে বড় একটি ট্যাংকি করারও পরিকল্পনা আছে। কিন্তু আমরা এ কাজ বাস্তবায়নে উপযুক্ত বরাদ্দ পাচ্ছি না। জনস্বার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার বলেন, আমরা সবসময় বাজারের ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করি। ব্যবসায়ী ও পথচারীদের জন্যে আমরা তিনটি গণশৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছি।