রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

চৌকিদার আইন থেকে গড়ে উঠে ইউনিয়ন পরিষদ
নূরুল ইসলাম ফরহাদ ॥

ইউনিয়ন পরিষদ হলো প্রান্তিক অঞ্চলের সর্বনিম্ন প্রশাসনিক একক। ঔপনিবেশিক শাসনের পূর্বে গ্রামগুলো ছিলো স্বনির্ভরশীল। গ্রাম নয়, বলবো ইউনিয়ন পরিষদের কথা। যেভাবে গড়ে উঠেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। পঞ্চায়েত হলো গ্রামের প্রাচীনতম স্থানীয় প্রশাসনিক কাঠামো। চৌকিদার আইন থেকে বিন্যাস হতে হতে আজ তা ইউনিয়ন পরিষদ।

গ্রাম চৌকিদারি আইনের ১৮৭০-এর অধীনে ইউনিয়ন পরিষদের সৃষ্টি। এ আইনের অধীনে প্রতিটি গ্রামে পাহারা টহল ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে কতগুলো গ্রাম নিয়ে একটি করে ইউনিয়ন গঠিত হয়। ইউনিয়ন গঠনের বিস্তাারিত দিক-নির্দেশনা লিপিবদ্ধ রয়েছে ‘বেঙ্গল চৌকিদারী ম্যানুয়েল’র দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনুচ্ছেদে। এই প্রক্রিয়ার বিকাশের মধ্য দিয়ে একটি স্থানীয় সরকার ইউনিটের ধারণার সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর ভূমিকা নিরাপত্তামূলক কর্মকা-ে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে এটিই স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক ইউনিটের ভিত্তিরূপে গড়ে উঠে।

ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কারণে ও ব্রিটিশদের ভিত্তি আরো সুদৃঢ় করার জন্য ১৮৭০ সালে চৌকিদারী আইন পাস করা হয়। এর ফলে প্রথমবারের মত স্থানীয় সরকারের উদ্ভব হয় এবং পঞ্চায়েত প্রথার পুনরাবৃত্তি ঘটে। চৌকিদারি পঞ্চায়েতের সদস্য সংখ্যা ছিল পাঁচজন।

চৌকিদারি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ইউনিয়ন কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫-৯ জন। এরা গ্রামবাসী কর্তৃক নির্বাচিত হতেন। ইউনিয়ন কমিটির পাশাপাশি চৌকিদারি পঞ্চায়েত কাজ করতো। এর ফলে দ্বৈত শাসনের অসুবিধা সমূহ প্রকটভাবে দেখা দেয়। অতঃপর ১৯১৯ সালে চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয়। সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক মনোনয়ন দান করতেন। সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতেন। কার্যকাল ছিলো ৩ (তিন) বছর। তবে ১৯৩৬ সাল হতে ৪ (চার) বছর করা হয়। মনোনয়ন প্রথা ১৯৪৬ সালে রহিত করা হয়।

১৯১৯ সালের আইন সংশোধন করে ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন নং-৩৫-এ প্রকাশ্যে ভোটদান বাতিল করে গোপন ব্যালটে ভোট চালু হয়। ইউনিয়নকে ৩টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। এই আইনে সর্বপ্রথম নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ১৯৫৯ সালের ২৭-এ অক্টোবর ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্র চালু করে। মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ ১৯৫৯-এর অধীনে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠন করা হয়। এর সদস্য সংখ্যা ছিলো ১০-১৫ জন। মোট সদস্যের ২/৩ অংশ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন এবং অবশিষ্ট ১/৩ অংশ মহুকুমা প্রশাসক সরকারের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দান করতেন। ১৯৬২ সালে শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের ফলে মনোনয়ন প্রথা রহিত করা হয়। সদস্যগণ তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করতেন। পরবর্তীতে ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি বিলুপ্ত করা হয়। ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেয়াদ ছিলো ৫ বছর। ১৯৭১ সালে ইউনিয়ন কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখা হয় ত্রাণ কমিটি।

বাংলাদেশে স্বাধীনতা উত্তরকালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৭, ১৯৭২ বলে ইউনিয়ন কাউন্সিল বাতিল করে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত নামকরণ করা হয় এবং রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-২২, ১৯৭৩ অনুযায়ী ইউনিয়ন পঞ্চায়েতের নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যক্ষ ভোটে ৯ জন সদস্য, একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৬ সালের ২০ নভেম্বর স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নাম ঠিক রেখেই সব সরকার কাজ চালিয়ে যান। এ অধ্যাদেশে অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যানের পদটি বিলুপ্ত করা হয়। এছাড়া দু’জন মনোনীত মহিলা সদস্য এবং দু’জন প্রতিনিধি সদস্য (কৃষকের মধ্য থেকে) ইউনিয়ন পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বোপরি ১৯৮৩ ও ১৯৯৩ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ অনুয়ায়ী প্রত্যক্ষ ভোটে একজন চেয়ারম্যান ও ৯ জন সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৩ জন মহিলা সদস্য নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদকাল ৫ বছর। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ৩টি ওয়ার্ডের পরিবর্তে ৯টি ওয়ার্ড সৃষ্টি করে এবং ৩ জন মহিলা সদস্যকে সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করে।

(তথ্য সূত্র : বেঙ্গল চৌকিদারি ম্যানুয়েল)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়