চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রায় মাদক ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্বে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অনেকটা বিভ্রান্তিতে পড়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চান্দ্রা ইউনিয়নের চৌরাস্তায় ৪২০ পিচ ইয়াবাসহ জহির মিজিকে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে হাতেনাতে আটক করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম। এদিকে জহিরকে আটকের পর অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় জামাল গাজী নামে এক মাদক কারবারি পূর্বপরিকল্পিতভাবে জহির মিজির কোমরে ৪২০ পিচ ইয়াবা গুঁজে দিয়েছে। যদিও জহির মিজি ও জামাল গাজী তারা দুজন এক সময় চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। এদিকে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিজেকে ফাঁসানো হয়েছে মর্মে চাঁদপুর জজ আদালতে সিআর মামলা করেন জহির মিজি।

জহিরকে আটক মামলার প্রধান সাক্ষী মোক্তার আহম্মেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক, চট্টগ্রামকে তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেমএম দিদারুল আলম জানান, জহির মিজি একজন চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত মাদক কারবারী। আমরা তার কাছে মাদক পেয়ে তাকে হাতেনাতে আটক করি। জহিরকে জামাল গাজীর দ্বারা মাদক দিয়ে ফাঁসানোর বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে জহিরের সাথে ঐ এলাকার অপর এক মাদক কারবারী জামাল গাজীর মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে বলেও আমরা শুনেছি। মাদক ব্যবাসায়ী জহির মিজির দায়ের করা নালিশি মিথ্যা মামলার ফলে আমরা কিছুটা বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়েছি। মাকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরও বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকার এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক এ বিষয়টি তদন্ত করেছেন। চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রধান তার একান্ত তদন্তের বিষয়টি নিজে না করে উক্ত তদন্ত করার জন্য চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলেন। বিষয়টি সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম জানার পর মামলা তদন্তের কর্মকর্তা পরিবর্তন করার জন্য অতিরিক্ত পরিচালক চট্টগ্রামের বিভাগীয় প্রধানকে পত্র দেন। হুমায়ুন কবীর খন্দকার তার তদন্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম বিভাগকে না দিয়ে আসামী জহির মিজিকে এর কপি দেন। উক্ত তদন্তে হুমায়ুন আসামীর পক্ষ দ্বারা প্ররোচিত হয়ে তার একান্ত নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। উক্ত তদন্তে আসামী জহির মিজিকে নির্দোষ দাবি করার জন্য পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত প্রতিবেদন দেন।

সহকারী পরিচালক আরো বলেন, আসামী জহির মিজি একজন প্রতিষ্ঠিত মাদক কারবারী। অপর এক তদন্ত সম্পর্কে আরও বলেন, তদন্ত রিপোর্ট গোপনীয় বিষয়। এটি শুধু সংশ্লিষ্টদের কাছেই থাকবে। এই গোপনীয় রিপোর্ট আসামির কাছে কীভাবে যায়? আমি অপরাধ করলে ডিপার্টমেন্ট আমার বিচার করবে। তদন্ত রিপোর্টতো কোনোক্রমেই আসামীপক্ষ জানার কথা নয়। এতে করে অধিদপ্তরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর সরেজমিন চান্দ্রা ইউনিয়নে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, জহির মিজি একজন প্রভাবশালী চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিশাল একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। তাছাড়া স্থানীয়রা আরো জানান, জামাল গাজী, স্থানীয় রাসেল পাটওয়ারী, আনু ইসলাম, রুবেল, খোরশেদ, বাবলু, কালা চাঁন, আবু পাটওয়ারী,ইসমাইল রাঢ়ীসহ আরও অনেকে জহির মিজির হয়ে ইয়াবা বেচাকেনা করতেন। কিন্তু একসময় জামাল গাজী জহিরের কাছ থেকে সরে গিয়ে আলাদা ইয়াবা ব্যবসা শুরু করলে দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে জহির চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করেন। এক সময় ইয়াবাসহ জামাল গাজী মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের হাতে আটক হলে তখন জহির মিজিকে সন্দেহ করে জামাল গাজী। জামাল গাজী মনে করেন, জহির মিজি তাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর জহির মিজিকে ৪২০ পিচ ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল থেকে আটক করেন। এ সময় জহির মিজি সন্দেহ করে জামাল গাজী তাকে ধরিয়ে দিয়েছেন। এদিকে জহির মিজি ও জামাল গাজীর আধিপত্যে বিস্তার ও নিজেদের মধ্যে সন্দেহের জের হিসেবে একটি দপ্তরকে জড়িয়ে মামলা করার বিষয়টি সচেতন মহল ভালোভাবে দেখছে না। সচেতন মহল মনে করেন, তারা নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য এ পন্থা বেছে নিয়েছে। যদিও মামলার অপর আসামি জামাল গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। মামলার বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট এবিএম সানাউল্লাহ সাংবাদিককে বলেন, মামলাটি অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান রয়েছে। আদালত সিআইডিকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে।