শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষক সঙ্কটে কচুয়ার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি
মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ॥

কচুয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়টি’ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। স্বাধীনতার পরপরই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক মাস্টার স্থানীয় নারী শিক্ষার প্রসারকল্পে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তৎকালীন জমিদার বৃন্দাবন পোদ্দারের বংশধররাও শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১০৩ শতক জমি দান করেন। ১৯৭১ সালের ১ জুলাই স্থাপিত হয় কচুয়া উপজেলার একমাত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।

১৯৮৫ সালের ১জুন প্রেসিডেন্ট এরশাদ কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়সহ এ বিদ্যালয়টিকে সরকারি করেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক ১৯৯২ সালে এডিইও পদে প্রমোশন পেয়ে চলে যাওয়ার পর থেকে কখনো ৪ জন, কখনো ৫ জন আবার কখনো দুই কিংবা তিনজন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। একটানা ৯জন (প্যাটার্ন অনুসারে) শিক্ষকের মুখ কখনো দেখার সৌভাগ্য হয়নি শিক্ষার্থীদের। ১৯৮১ সালের আগস্ট মাস থেকে প্রধান শিক্ষকসহ ৪জন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। ২০২০ সালে পরিচালিত হয় ৩জন শিক্ষক দ্বারা। ২০২১ সালের ৫ জুলাই প্রধান শিক্ষক নূরজাহান বেগম অবসরে চলে যাওয়ার পর থেকে মাত্র দুইজন শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক রাবেয়া খানম। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ দু’টি শূন্য রয়েছে।

এছাড়াও চতুর্থ শ্রেণির ৪জন কর্মচারীর মধ্যে দুজন নেই। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে রয়েছে বিজ্ঞান ও মানবিক এ দুটি শাখা। কর্মরত উল্লেখিত দুজন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হলেও ইংরেজি পড়ানোর জন্যে নেই কোনো শিক্ষক। শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালকের নির্দেশনায় কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক প্রতিদিন (পর্যায়ক্রমে) এ বিদ্যালয়ে এসে ক্লাস নেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম জানান, কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে ৩ জন ও ফয়জুন্নেসা বিদ্যালয় থেকে ১জন শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে এ বিদ্যালয়ে। তারা এখনো যোগদান করেনি।

বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারী শিক্ষিকা শাহনাজ পারভীন জানান, করোনাকালীন সময় শিক্ষকের অভাবে আমি ও প্রধান শিক্ষক রাবেয়া বেগম মিলে সকল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে তা বিতরণ করেছি এবং পুনরায় সংগ্রহ করেছি। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে তাদের নম্বর শিক্ষাবোর্ডের জন্য প্রস্তুত করতে হয়েছে। যা আমাদের দুজনের জন্য ছিল খুবই কষ্টদায়ক। এছাড়া আমি মূলত ভূগোলের শিক্ষক, অথচ আমাকে সব বিষয়েই পাঠদান করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক রোকসানা ফেরদৌসী মজুমদার জানান, বদলি হওয়ায় চারজন শিক্ষক শিগগিরই এ বিদ্যালয়ে যোগদান করলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট কিছুটা লাঘব হবে।

এদিকে চারজন শিক্ষক যোগদান করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংখ্যা হবে ৬ জন। এতেও ৯জন শিক্ষকের মুখ দেখার ভাগ্য জুটবে না শিক্ষার্থীদের। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ৭৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৪৫জন।

অভিভাবক আমির হোসেন ও সোহেল মাহমুদ জানান, বিদ্যালয়টি প্রশাসনের নাকের ডগায় বিধায় শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ পান না। তাই তারা এ বিদ্যালয়ে এসেও কয়েকমাস যেতে না যেতেই বদলি হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যান। তারা আরো জানান, আমাদের সন্তানেরা কাক্সিক্ষত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।

শিক্ষক সংকটের কারণে বছরের পর বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বিপর্যয় ঘটে আসছে। বিদ্যালয়টিকে ঘিরে রয়েছে উপজেলা পর্যায়ের সকল সরকারি অফিস আদালত ও কোয়ার্টার। লেখাপড়ার মানের দিক থেকে এ বিদ্যালয় খুবই নিম্নমানের বিধায় সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ এলাকার সচেতন বিত্তবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানাদি এ বিদ্যালয়ে ভর্তি না করিয়ে দুই/আড়াই কিলোমিটার দূরবর্তী বিদ্যালয়ে নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে।

শিক্ষক সংকট ছাড়াও এ বিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সমস্যা হচ্ছে পশ্চিম পাশের মূল ভবনের একতলায় দক্ষিণপাশের শৌচাগারের পানির টাংকি বিনষ্ট থাকায় শৌচাগারটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ভবনের ৩তলার শৌচাগারের দেয়াল সরে যাওয়ায় দেওয়ালটি যে কোনো সময়ে ধসে পড়তে পাড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ওই শৌচাগারটি ব্যবহার করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়