প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
ফরিদগঞ্জের তিন কৃতী সন্তানের স্মরণে নির্মিত ওনুআ স্মৃতি ভাস্কর্যটি যেন হারাতে বসেছে আপন রূপ। সঠিক পর্যবেক্ষণের অভাবে ভাস্কর্যের চারপাশ আগাছা-উদ্ভিদে ভরে গেছে। প্রকৃতির পালাবদলে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে যেন ক্রমাগত গ্রাস করছে এই স্মৃতি ভাস্কর্যটিকে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ও একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী নূরেজ্জামান ভূঁইয়া এবং ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক আইউব আলী খান এই তিন কৃতী সন্তানের স্মরণে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে নির্মিত হয় ভাস্কর্যটি। তাঁদের নামের প্রথম অক্ষর নিয়েই ভাস্কর্যটির নামকরণ করা হয় ওনুআ। ভাস্কর্যটি তিন ব্যক্তিত্বের মুখম-লের আকৃতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ফরিদগঞ্জ বাজারের দক্ষিণমুখী প্রবেশ পথে টিএন্ডটির সামনে অবস্থান দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটির। হাইওয়ে রোডের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলো যাতায়াত করে ভাস্কর্যটির পাশ দিয়েই। যাতে অন্য অঞ্চলের মানুষের চোখে পড়ে ভাস্কর্যটি। সঠিক পরিচর্যার আভাবে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্য শৈলীটি ক্রমেই বিকৃত রূপ ধারণ করছে।
২০০৮ সালে ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠার পর ভাস্কর্যটির গায়ের টেরাকোটায় খচিত কারুকাজে বেশ কিছু বানান ভুল ছিলো। ভাষা আন্দোলনের পটভূমির দৃশ্যে মিছিলের আম জনতার হাতের প্ল্যাকার্ডে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ লেখার স্থলে লেখা আছে ‘রাস্ট ভাষা বাংলা ছাই’। নির্মাণের পর একাধিকবার ভাস্কর্যটির সংস্কার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টেরাকোটার ভুল লেখা সংশোধনের কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করেননি।
ফরিদগঞ্জের প্রাচীন ইতিহাস ও কীর্তিমানদের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়াসে ২০০৮ সালে গঠিত হয় ওনুআ স্মৃতি সংসদ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের অক্লান্ত পরিশ্রমে, গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রচেষ্টায় আবু তাহের পাঠান সড়কের মোড়ে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্যটি। ফরিদগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বর্তমান ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলিম আখতার খানের আন্তরিকতায় ও তৎকালীন পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেনের আংশিক অর্থ সহায়তায় নির্মিত হয় ওনুআ স্মৃতি ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যটির নকশাকার ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান ভাস্কর শিল্পী অখিল পাল। যিনি বাংলা একাডেমি চত্বরের ‘মোদের গরব’ ভাস্কর্যটিরও স্থপতি।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই পোস্ট করেছেন। ভাস্কর্যের আশপাশের আগাছা দমন করে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে স্মৃতিস্তম্ভটির স্বরূপ ফিরিয়ে আনতে জোর দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
এ বিষয়ে ওনুআ স্মৃতি সংসদের সভাপতি আলমগীর হোসেন দুলাল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ফরিদগঞ্জ না থাকায় এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। অসুস্থতার জন্যে বাসা থেকে বের হচ্ছি না, কোথাও যাওয়াও হচ্ছে না। তবে যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে আমি চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে অবগত হয়েছি, তাই ফরিদগঞ্জের সংশ্লিষ্ট যারা দায়িত্বে আছেন মুঠোফোনে তাদেরকে জানাবো প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থাগ্রহণ করার জন্যে।
কালক্রমে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অনেক কৃতীসন্তান জন্ম নিলেও তাদের মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভে ঠাঁই পাওয়া এই তিনজন সবচেয়ে ব্যতিক্রমী। তৎকালীন অবক্ষয়িত ও অবনতিশীল সমাজের উত্তরণের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন তাঁরা। ফরিদগঞ্জের কিংবদন্তী মহান তিন ব্যক্তিত্বের নামে নির্মিত ভাস্কর্যটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে না থেকে স্বরূপে ফিরে আসুক-এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।