প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
শাহরাস্তিতে শিশু সন্তানের সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে নওরোজ আফরিন প্রিয়াকে। শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের আহাম্মদ নগর এলাকার পোদ্দার বাড়িতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় এ ঘটনাটি ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আহাম্মদ নগর গ্রামের নতুন পোদ্দার বাড়ির প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের কন্যা নওরোজ আফরিন প্রিয়া তার সন্তান হওয়ার পর থেকে বাবার বাড়িতে মায়ের সাথে বসবাস করে আসছেন। প্রিয়ার শ^শুর বাড়ি কুমিল্লা শহরের বাগিচাগাঁও এলাকায়। প্রিয়ার স্বামী পোল্ট্রি ফার্মে চাকুরি করেন। প্রিয়া মাঝে মধ্যে শ্বশুর বাড়িতে যেতেন। প্রিয়া ১৮ মাসের কন্যা সন্তান আবরিণ আনহাকে ডাক্তার দেখাতে ঘটনার দিন বিকেলে মেহার কালীবাড়িতে তার মায়ের সাথে আসেন। ডাক্তার দেখানোর পর সিএনজি অটোরিকশা যোগে তারা বাড়িতে ফিরে যান। বাড়িতে আসার পর প্রিয়ার মা রুবি বেগম তার নাতনির জন্যে ওষুধ আনতে বাজারে যান। সেখান থেকে রাত প্রায় ৮টায় বাসায় ফিরে নাতনি আবরিণের কান্না শুনতে পান। তিনি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তার মেয়ে প্রিয়ার রক্তভেজা শরীর বিছানার ওপর পড়ে থাকতে দেখে ডাক-চিৎকার শুরু করেন। তার ডাক চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। এলাকাবাসী তাৎক্ষণিক শাহরাস্তি থানায় সংবাদ দিলে শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মান্নান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রাত ১২টায় পিবিআইয়ের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেন। এরপর রাত দেড়টায় কুমিল্লা থেকে সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। রাত সাড়ে তিনটায় শাহরাস্তি থানা পুলিশ প্রিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে সংবাদ পেয়ে প্রিয়ার স্বামী ও শাশুড়িসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন রাত ১২টায় শাহরাস্তি আসেন। প্রিয়ার জেঠা শশুর তৌহিদুজ্জামান জানান, প্রিয়া ও তার স্বামীর মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো। প্রিয়ার সংবাদ শুনে তারা হতবাক হয়ে পড়েছেন। তারা এ হত্যার যথাযথ বিচার দাবি করেন। হত্যাকা-ের সংবাদ শুনে চারদিক থেকে পোদ্দার বাড়িতে মানুষের ঢল নামে।
পুলিশ জানান, চাপাতি দিয়ে প্রিয়াকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু হত্যাকারীরা শিশু আবরিণের কোনো ক্ষতি করেনি। অবুঝ এ শিশুটি তার মায়ের মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে বলে প্রিয়ার মা জানান। প্রিয়ার একমাত্র ভাই পরশ ঘটনার সময় খিলা বাজারে অবস্থান করছিলেন। একা বাড়িতে প্রিয়া ও তার ১৮ মাসের কন্যা সন্তান ছিল। ১৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার প্রিয়ার ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে আহাম্মদ নগরের বাবার বাড়িতে প্রিয়ার মরদেহ নিয়ে আসা হলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ এক নজর দেখতে ভিড় জমায়। বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বিকেল সাড়ে ৫টায় বাবার বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তাকে সমাহিত করা হয়। দুপুর ১২টায় প্রিয়ার মা রুবি বেগম বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। কী কারণে নির্মমভাবে কুপিয়ে প্রিয়াকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো উদ্ঘাটন করা যায়নি। উক্ত ঘটনায় শাহরাস্তি জুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ শাহরাস্তির পরিবেশ হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্যে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।