শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

রেললাইন চুরি করে বিক্রি করার সময় জনতার হাতে আটক
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরে চট্টগ্রাম লৌহ বিতান কর্তৃক বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫০ লাখ টাকার ৮টি রেললাইন অবৈধভাবে চুরি করে বিক্রিকালে জনতা হাতেনাতে আটক করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জব্দ করেছে। ৩০ ফুট লম্বা ৮টি রেললাইন বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান শহরের ৫নং ঘাটস্থ চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের মালিক মৃদুল কান্তি দাস ও রতন কান্তি দাস ভুয়া রিসিট দেখিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রেলওয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মঙ্গলবার রাত ১০টার পর চাঁদপুর গ্যাংওয়ের মিস্ত্রি মোহন চন্দ্র বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেছে। রেলওয়ে পুলিশ শহরের নতুন বাজার থেকে ৮টি বিট জব্দ করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় ২০১৮ সালে রেলওয়ের নতুন করে ৫নং ঘাট ইয়ার্ডে রেললাইন স্থাপনকালে সেখানে পূর্বে ব্যবহার করা রেললাইন (রেলওয়ে বিট) খুলে ফেলে রাখা হয়। সে লাইন দীর্ঘদিন রেলওয়ে গুডস্ অফিসের নিকট পড়েছিল। এ বিষয়টি স্থানীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও চাঁদপুরস্থ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অবগত রয়েছে।

১৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শেষ বিকেলে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চাঁদপুর রেলওয়ে ৫নং ঘাট ও রেলওয়ের ইয়ার্ডের ভেতরে শুধুমাত্র ৮ পিচ রেলবিট নয়, রেললাইনের পাশে গুডস্ অফিসের নিকটে বিগত দিনে প্রায় ৫০ পিচেরও বেশি রেললাইন মজুদ ছিল।

সেখান থেকে স্থানীয় রেলওয়ের লাইনে কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে ভ্যানগাড়ি যোগে এখান থেকে এসব রেললাইন (রেলওয়ে বিট) অন্যত্র ব্যবহার করার নাম করে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ৫নং ঘাটের ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে এগুলো নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ৫নং ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান। এছাড়াও নতুন করে ৮পিচ রেললাইন বিক্রি করার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।

এলাকাবাসী জানান, এখানে মানুষের বিচরণ কমার পরে মঙ্গলবার শেষ বিকেলে রেলওয়ের স্থানীয়দের যোগসাজশে অবৈধভাবে চুরি করে তারা এ রেললাইনগুলো এখান থেকে নতুনবাজার এলাকায় একটি ডকইয়ার্ডে পাচার করে বিক্রি করছিল। শহরের ৫নং ঘাটের এ রেললাইন বিক্রি করা প্রতিষ্ঠানের মালিক চট্টগ্রামস্থ বিএসআরএম স্টীল মিলের ২০১৫ সালে ক্রয় করা পেডে জনৈক ফারুক এন্টারপ্রাইজের নামে দুই হাজার কেজি রেললাইন বিক্রির একটি ভুয়া রিসিট প্রদর্শন করে। যার কোনো ভিত্তি নেই। মৃদুল কান্তি দাস জানু স্টীল ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদপুরস্থ চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের কাছে সে ৫৫৬৬ কেজি রেল লাইন ক্রয়ের একটি রিসিট দেখিয়ে রেললাইনগুলো বৈধ বলে দাবি করেছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে একটি সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ২ হাজার কেজি রেললাইন বিক্রি করার এমন কোনো নিয়ম রেলওয়েতে প্রচলিত নেই। রেলওয়ের অব্যবহৃত রেললাইন বিভিন্ন স্টীল মেইলের কাছে টনে টনে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির বিধান রয়েছে।

এছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানান, রেলওয়ে যে অব্যবহৃত লাইন বিক্রি করবে, সে লাইন টেন্ডারের মাধ্যম ক্রয় করার তারিখ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে গলিয়ে রড বা অন্য কিছু প্রস্তুত করতে হবে। তারা অব্যবহৃত রেললাইন খোলাবাজারে বিক্রি করতে পারবে না। এখন স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, রেলওয়ের পরিত্যক্ত রেললাইন কী করে চাঁদপুরস্থ চট্টগ্রাম লৌহ বিতান বিক্রি করলেন এবং তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে মঙ্গলবার ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা পর্যন্ত একটি ব্রডগেজ লাইনের ২০ ফুট লম্বা রেললাইন (রেলবিট) পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের মালিক মৃদুল চন্দ্র দাস ঘটনার সম্পর্কে বলেন, সে চট্টগ্রাম থেকে বৈধভাবে এ লাইন ক্রয় করেছে এবং সে রেললাইনগুলো শহরেরর নতুনবাজার পানামা ডকইয়ার্ডের পাশে নতুন আরেকটি ডকইয়ার্ড গড়ে উঠেছে। সেখানে ৮পিচ রেললাইন বিক্রি করেছি। আমার কাছে রিসিট আছে।

চাঁদপুরস্থ গ্যাংয়ের মিস্ত্রি মোহন চন্দ্র এ বিষয়ে জানান, এ রেললাইনগুলো দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ এখানে পড়েছিল। সেখান থেকে মৃদুল বাবু রেললাইন চুরি করে বিক্রি করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি রেললাইন উদ্ধারের জন্য মামলা দিয়েছি রেলওয়ে থানায়।

চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এসএসএ/ই (পথ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, এ বিষয়ে চাঁদপুরে দায়িত্বরত মিস্ত্রি মোহনের কাছে জানতে পেরেছি। রেলওয়ের ৮টি লাইন অবৈধভাবে বিক্রি করেছেন চট্টগ্রাম লৌহ বিতানের মালিক। ১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার আমি নিজে চাঁদপুরে এসে বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে গতকাল বুধবার চাঁদপুর রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মুরাদ উল্যাহ্ বাহার বলেন, রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এখন তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেললাইনগুলো জব্দ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়