প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দোকান মালিক পক্ষের সাথে ভাড়াটিয়ার নির্দিষ্ট চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবুও দোকান ছাড়ছেন না ভাড়াটিয়া খোরশেদ মুসা। উল্টো মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দোকান মালিকের সাথে ভাড়াটিয়ার এমন কাণ্ডে হতবাক মালিক ও ব্যবসায়ী মহল। ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর স্টেডিয়াম মার্কেটের নিউ ক্লাসিক টাইলস এন্ড স্যানিটারী দোকান নিয়ে।
স্টেডিয়াম মার্কেট মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, আমাদের মার্কেটের ৪ নাম্বার দোকানটি ফাতেমা খাতুন নামে এক নারী ভাড়া দিয়েছিলেন খোরশেদ মুসার কাছে। সে সুবাদে দোকানটির মেয়াদ এ বছরের জুন মাসে শেষ হয়ে গেছে। চুক্তিনামা অনুযায়ী ভাড়াটিয়া মুসা দোকানটি না ছাড়ায় মালিক পক্ষ আমাকে জানিয়েছে। পরে আমিসহ মালিক ও ভাড়াটিয়া মুসাকে নিয়ে একটি বৈঠক করি। ওই বৈঠকে আমি মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে দায়িত্ব নিয়ে মুসাকে আরো ২ মাসের সুযোগ করে দিই। কিন্তু আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ পার হয়ে গেলও দোকান ছাড়েনি মুসা। তিনি সিদ্ধান্ত না মানায় মালিক পক্ষ এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন।
স্টেডিয়াম মার্কেটের ক’জন ব্যবসায়ী জানান, ৩১ আগস্ট বুধবার সকালে দোকান খোলার কিছুক্ষণ পরেই দেখি পুলিশ এসেছে। ওই সময় মুসা ভাই দোকানে ছিলেন না। এর কিছুক্ষণ পরই দেখি দোকানের মালিক পক্ষ এসেছেন। ওমর ফারুক ঢালী জানান, ভাড়াটিয়া মুসা সেসব সময় আমার বোন এবং বোনজামাই ভাড়া নিতে আসলে খারাপ আচরণ করে ঠিকমতো ভাড়ার টাকা পরিশোধ করেন না। এছাড়া তাকে আমরা এক বছর আগেই বলে দিছিলাম দোকান ছেড়ে দিতে। কিন্তু সে কালক্ষেপণ করে একের পর এক ঝামেলা সৃষ্টি করছে।
দোকানের মালিক ফাতেমা খাতুন জানান, আমাদের দোকান চুক্তিনামার উল্লেখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩০ জুন ভাড়াটিয়ার জামানতের টাকা নিয়ে আসলে আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি বিষয়টি আমার ভাই ওমর ফারুক ঢালীর মাধ্যমে মার্কেটের সভাপতিকে জানাই। পরে মার্কেটের সভাপতি আমাদের বুঝিয়ে তাকে আগস্টের ৩০ তারিখের মধ্যে দোকান ছেড়ে দিতে বলেন। আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেই। আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গেলে মুসা আর আমার দোকান ছাড়েনি। এতে আমি মডেল থানায় অভিযোগ করি। ৩১ আগস্ট পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে মুসা পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে ফোন করলে সে ওই সময় তরপুরচণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমাম হাসান রাসেল গাজীকে ফোন ধরিয়ে দেয়। চেয়ারম্যান সাহেব এসআই নাছির উদ্দিনের সাথে কথা বলে ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে মডেল থানায় বসার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক চেয়ারম্যান রাসেল গাজী, মার্কেটের সভাপতিসহ আরো গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে জামানতের ৫ লাখ টাকা ফেরত দেই এবং মুসা টাকা বুঝে পেয়েছে ও আজ ১৫ সেপ্টেম্বর দোকান ছেড়ে দিবে বলে একটি মুচলেকা দেয়। সে নির্দিষ্ট সময়ে দোকান ছেড়ে দিবে বলে আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। গতকাল বুধবার থানা পুলিশের মাধ্যমে শুনি আমাদের দোকান ভাড়াটিয়া মুসা আমার ভাই ও স্বামীকে জড়িয়ে আদালতে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে। দোকান মালিক ফাতেমা খাতুন এ কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মালিকের সাথে ভাড়াটিয়ার কাণ্ডের এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে কথা হয় তরপুরচণ্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমাম হাসান রাসেল গাজীর সাথে। তিনি জানান, খোরশেদ মুসা টাইলস ব্যবসায়ী হিসেবে আমার সাথে পরিচিত। সে সুবাদে একদিন সকালে আমার কাছে এসে সে এসআই নাছির উদ্দিনের সাথে কথা বলতে বলেন। পরে আমি মুসার পক্ষ হয়ে ওই পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলে ৫ সেপ্টেম্বর বসার সিদ্ধান্ত হয়। পরে মালিক পক্ষ তার জামানতের ৫ লাখ টাকা দিয়ে দেয়, যাতে সে এ টাকা দিয়ে অন্য জায়গায় দোকান নিতে পারে। কিন্তু সে আমাদের সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করে আদালতে মালিকের নামে নাকি চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে। মালিক পক্ষ তাকে দোকান না দিলে কি সে জোর করে থাকতে পারবে?
নিউ ক্লাসিক টাইলস এন্ড স্যানিটারী স্বত্বাধিকারী মোঃ খোরশেদ মুসা এ প্রতিনিধির কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, ওই দিনের বৈঠক আমার মন মতো হয়নি। সেজন্য আমি আদালতে মামলা করেছি। ‘আপনি তো আপনার জামানতের টাকাও নিয়ে আসলেন এবং মুচলেকায় বললেন দোকান ছেড়ে দিবেন, এখন কেন দোকান ছাড়ছেন না’ এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমি এটা নিয়ে আবার বসবো। বর্তমানে আদালতের রিপোর্ট বন্ধ রেখেছি। ‘চুক্তিনামা অনুযায়ী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর ভাড়াটিয়া হিসেবে দোকানে থাকার আইনগতভাবে সুযোগ আছে কি’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পরে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে কথা হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আবদুর রশিদের সাথে। তিনি জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ হয়েছে। ১৬ তারিখ আসুক। তারপর দেখি কী করা যায়।