প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দীর্ঘ ১৮ মাস পর ক্লাস শুরুর ঘণ্টা বেজেছে চাঁদপুরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। করোনা সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় প্রায় দেড় বছর পর শ্রেণি কক্ষের দ্বার খুলেছে রোববার ১২ সেপ্টেম্বর। করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে চাঁদপুরসহ দেশের সবধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় প্রথম ধাপে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সবস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে । শিক্ষার্থীদের কলতানে মুখরিত হয়েছে শ্রেণিকক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপাসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থীর মুখে মাস্ক নেই শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। শিশুরাও অনেকদিন পর শিক্ষাঙ্গনে ফিরতে পেরে উদ্বেলিত।
চাঁদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্ত গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারী জানান, জেলায় মাধ্যমিক ও কলেজ মিলিয়ে ৩৩৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারি নির্দেশনার পর থেকেই কঠোর মনিটরিং করে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাহাবউদ্দিন জানান, করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি পাঠদান না হলেও প্রধান শিক্ষক এবং অন্যদের উপস্থিতি ছিল। তারপরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয় কোথাও কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি। সুতরাং সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে রবিবার শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছে। আমরা অভিভূত আপ্লুত। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তাদেরকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে।
পুরাণবাজার ২নং বালিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিঃ সহকারী শিক্ষক ধ্রুব রাজ বণিক জানান, স্কুল খোলার প্রথম দিন উপস্থিতি বেশ ভালো। ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কৌশল শিখে ফেলেছে এটা আমাদের কাছে ভালো লেগেছে।
পুরাণবাজার গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই পাঠ দান করছেন তারা, সেইসাথে কিভাবে পড়াশোনার যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করা যায় এ বিষয়েও ভাবছেন তারা।
এদিকে, মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মিথিলা আক্তার মিম জানায়, অনেক দিন পর স্কুল ড্রেস পরে বিদ্যালয়ে আসতে পেরে তার কাছে খুবই আনন্দ অনুভূত হয়েছে। শিক্ষকদের নির্দেশনায় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার প্রথম দিন ক্লাস করেছে।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিকা অনুসরণ করা হচ্ছে। পাঠদান চলাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়মাবলি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি দুই স্তরে তা মনিটরিং করা হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই দৈনিক আসবে আলাদা দুটি মনিটরিং প্রতিবেদন।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালিক সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন সংক্রমণ বাড়লে আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।
চাঁদপুরে ৮ উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদরাসা এবং কলেজ মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছেন। এর মধ্যে ১১শ‘র মতো রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর শিক্ষার্থী রয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক।
স্কুল খোলার প্রথম দিন সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের আইসিটি ও শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এবং শিক্ষা কর্মকর্তা বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন।