প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অবশেষে প্রায় দেড় বছরের মাথায় সারাদেশের ন্যায় রোববার কচুয়ায়ও খুললো সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়। বই-খাতা নিয়ে বিদ্যালয়ে হাজির হয় শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক’দিন ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিলো। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে গতকাল রোববার।
শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। শিক্ষক-কর্মচারীর শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন আনন্দচিত্তে। আর সন্তানেরা শ্রেণিকক্ষে ফেরায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন অভিভাবকরা। আবার অনেক অভিভাবকের চোখে-মুখে করোনার ভয়-আতঙ্কের ছাপও দেখা গেছে।
সকাল থেকে কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকদ্বয়ের।
কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হোসাইন আহমেদ আনাস বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় পড়ালেখায় অনেক পিছিয়ে পড়েছি। ঘরে লেখাপড়া করলেও মনোযোগ ছিলো কম। স্কুল খুলে দেয়ায় ভালোই হয়েছে। স্কুলে যেভাবে পড়াশোনা ও নির্দেশনা দেয়া হয় ঘরে বসে তা সম্ভব না।
কোয়া কোর্ট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দুর্জয় পোদ্দার বলেন, স্কুলে আসতে পেরে খুব ভালোই লাগছে। বন্ধুদের সাথে দেখা হলো, স্যারেরা আদর করেছেন। একটানা ঘরে বসে থাকতে থাকতে ঝিমিয়ে পড়েছি। আজ স্কুলে এসে ক্লাস করলাম।
পালাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুমা, ইশরাত ও মিতু জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে গিয় ক্লাস করতে পেরে তাদের খুব ভালো লাগছে। অনেকদিন পর স্যারদের আর বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। তবে আগে আমরা যেভাবে ক্লাস করতাম এখন আর সেভাবে করছি না। এখন মাস্ক পরার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করতে হচ্ছে। আর স্কুলের প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে এসেছি।
কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মামুন ও রুবেল জানায়, জীবনে প্রথম যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসেছিলাম তখন যে অনুভূতি কাজ করেছে, আজও স্কুলে এসে সেই একই রকম অনুভূতি কাজ করছে। অনেকদিন পর বন্ধুদের সাথে দেখা হলো, আড্ডা হলো। শিক্ষকরা ক্লাস নিলো। তাই আজকের দিনটি খুব ভালোই কেটেছে।
ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মীম বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাস পর আজ ক্লাস করতে কলেজে পা রাখলাম। কলেজে পা রাখার সাথে সাথেই বান্ধবীরা আবেগাপ্লুত হয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। তাদের জড়িয়ে ধরা দেখে আমার মনে হচ্ছিলো করোনার ভয় মন থেকে হারিয়ে গেছে। তবে আমরা সবাই মাস্ক পরিধান করেছিলাম এবং সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও নিয়ে এসেছিলাম। ক্লাসে আগে এক ব্যাঞ্চে ৪ জন বসলেও এখন শারীরিক দূরত্ব মেনে প্রতি বেঞ্চে ২ জন বসতে হয়েছে। আর দুঃখজনক একটি বিষয় হচ্ছে, অনেক বান্ধবীকে কলেজে দেখতে পাইনি। খবর নিয়ে জানতে পারি যারা আসেনি, তাদের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে।
কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর এমএ খালেক মেমোরিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, পালাখাল রোস্তম আলী ডিগ্রি কলেজ, সাচার ডিগ্রি কলেজ ও রহিমানগর শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের শতভাগ মাস্ক পরিধান করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস করতে দেখা গেছে।
কোয়া কোর্ট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রিয়তোষ পোদ্দার ও কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাকির হোসেন বাটা বলেন, সকালেই শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করে বিদ্যালয়ে স্বাগতম জানিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ নানা স্বাস্থ্যসুরক্ষার উপকরণ রাখা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কিছু নির্দেশনা এসেছে, সেই নির্দেশনা মেনে ক্লাস করা হচ্ছে।
সানরাইজ কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিহা আক্তার নূহার অভিভাবক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ভর্তি হওয়ার পর আজই আমার মেয়ের প্রথম স্কুল। স্কুল খুলে দেয়ায় সবার সাথে সে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আর ঘরে থাকতে থাকতে সে বিরক্ত হয়ে পড়েছিলো। এখন পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। স্কুলে নির্ধারিত পোশাক পরে সে এসেছে। স্কুলের প্রবেশদ্বারে হাত দোয়ার ব্যবস্থা এবং শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দূরত্ব রেখে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে ক্লাসে এসেছেন।
কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা ইকবাল বলেন, করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ ৫শ’ ৪৪ দিন পর আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথমদিনেই শিক্ষার্থীদের মাঝে বাঁধভাঙ্গা আনন্দ-উল্লাস নিয়ে ক্লাস করেছে। আমরাও অনেক দিন পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করাতে পেরে আনন্দিত। আমাদের বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিয়েছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএইচএম শাহরিয়ার রসুল চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না তা মনিটরিং করছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা ও ইউআরসি ইন্সট্রাক্টরগণ।