শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

হাজীগঞ্জের ১০ কিলোমিটারের পুরোটাই কচুরিপানায় ঠাসা
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

অব্যবস্থপনা কিংবা দেখভালের অভাবে ঐতিহ্যবাহী বোয়ালজুরি খাল মরতে বসেছে। প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বোয়ালজুরি খালের উৎপত্তিস্থল হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর অংশ থেকে। উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু হয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা অংশের প্রায় ১০ কিলোমিটারের সবঅংশ কচুরিপানায় ঠাসা। অবাধে মাছ ধরা, বে-দখল, ভেসাল জালের প্রতিবন্ধকতা, কৌশলে ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করায় খালটি মরতে বসেছে। বোয়ালজুরি খাল দিয়ে ডাকাতিয়া নদীর পানি সেচের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ ও পাশর্^বর্তী কচুয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ইরি-বোরো চাষাবাদ করা হচ্ছে। খালটি রক্ষণাবেক্ষণ না করলে দখল, শুকিয়ে যাওয়া, মাছের অবাধ বিচরণ, মালামাল পরিবহন বন্ধসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ইরিগেশনের সেচ বন্ধ হয়ে যাবে। ঐতিহ্য হারাবে বোয়ালজুরি খাল।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় দশক আগে এই খাল ছিলো অনেকটা পানি প্রবাহের একমাত্র মাধ্যম। ডাকাতিয়া নদীর পানি হাজীগঞ্জ-কচুয়া হয়ে মতলব মাছুয়াখালে গিয়ে মিশেছে। নানান প্রতিবন্ধকতায় এটি আজ বিভিন্নস্থান দিয়ে সরু হয়ে গেছে। খালের মুখ তথা হাজীগঞ্জ প্রধান ডাকঘর সংলগ্ন সামনের পুকুরে ছিলো এক সময়কার নৌকা ঘাট। এই ঘাট থেকে বোয়ালজুরি খাল ধরে হাজীগঞ্জের উত্তরাঞ্চলসহ কচুয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বারো মাস নৌকায় করে হাজীগঞ্জে আসা-যাওয়া করতো। এখনাকার সিএনজি-অটোরিকশা যেমন যেখানে-সেখানে থামানো যায়, সে সময় বোয়ালজুরি খাল দিয়ে চলাচলকারী নৌকাও যেখানে-সেখানে থামানো যেতো। তখনকার সময় এই খালের দুপাড়ের সকল মানুষজন খালের পানিতে গোসল করাসহ যাবতীয় কাজ করতো। এমনকি এই অঞ্চলের মানুষের মিঠা পানির মাছের বিপুল একটা চাহিদা বোয়ালজুরি খাল থেকে আসতো। যা এখন গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।

সরজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ পূর্ব বাজারস্থ বড় পুলের নিচে ডাকাতিয়া নদী হতে বোয়ালজুরি খালের উৎপত্তি। খালের এই অংশে অর্থাৎ এর মুখে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচ পাম্প বসিয়ে ইরিগেশনের মৌসুমে পানি সেচ করে বোয়ালজুরি খালের মাধ্যমে হাজীগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইরিবোরো চাষ করছে। হাজীগঞ্জ পৌরসভা এলাকা থেকে বেরিয়ে খালটি সোজা উত্তরে হাজীগঞ্জের সুহিলপুর বাজার হয়ে ধড্ডা খালপাড় ধরে কচুয়ার রঘুনাথপুর বাজারের পাশ ধরে হাজীগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী বাজার চৌমুহনী হয়ে মতলবের মাছুয়াখালে মিশেছে। হাজীগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে চৌমুহনী পর্যন্ত খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার যার পুরোটাই এখন কচুরিপানায় ঠাসা। এর মধ্যে বোয়ালজুলি খাল থেকে সোনাই বিবির খাল ও যুগির খালে নামে দু’টি শাখা খাল বেরিয়ে একটি হাজীগঞ্জের কয়েকটি ইউনিয়নে ছুঁয়েছে, অপরটি মতলবের নারায়াণপুরের দিকে চলে গেছে।

সরজমিনে আরো দেখা গেছে, হাজীগঞ্জের সুহিলপুর, ধড্ডা খালপাড়, রঘুনাথপুর বাজার অংশে খালের উপর বহুজনে পিলার করে কিংবা সেমিপাকা করে ঘর তুলে চুটিয়ে ব্যবসা করছে স্থানীয়রা। তবে এদের অনেকেই জানিয়েছেন তাদের নিজস্ব জমি খালে রয়েছে। খালের বিভিন্ন স্থানে বহু ভেসাল জাল রয়েছে।

সুহিলপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন জানান, খালের ওপর কেউ জোর করে ঘর তোলেনি। খালের মূল সমস্যা কচুরিপানা। এ সময় অপর এক ব্যবসায়ী জানান, গত বছর কিছু কচুরিপানা সরিয়ে খাল পাড়ে জমিয়ে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু ভেসাল জালের মালিকরা কচুরিপানা খালে নামিয়ে দেয়ায় এবার খাল কচুরিপানায় একাকার হয়ে গেছে।

ধড্ডা খালপাড় এলাকার মজুমদার বাড়ির শাওন মজুমদার জানান, এবারের এই সিজনে যে পরিমাণ কৈ মাছের বাচ্চা জাল দিয়ে ধরা হয়েছে, তা গণনা করলে কয়েক কোটি কৈ মাছ হতো।

রঘুনাথপুর বাজারের খালের পূর্বপাশে পুরাতন ব্রীজের পাশে ভিত নিয়ে লম্বা পাকা দালানে মার্কেট নির্মাণ করছেন স্থানীয় মোবারক হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবু। তিনি জানান, তিনি খালে দোকান নির্মাণ করছেন না, খালেই তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে, আর সেই কারণেই খালপাড়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন।

হাজীগঞ্জের কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের পূর্ব অংশ ধরে বয়ে গেছে বোয়ালজুরি খাল। খালের অবস্থা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠকে ঐ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানিক হোসেন প্রধানিয়া জানান, গত বছর খালের কচুরিপানা অপসারণের জন্যে একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। তবে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। এবারে আমরা হাজীগঞ্জের তিন ইউপি চেয়ারম্যান মিলে ইউএনও স্যারের কাছে আবেদন করেছি, যাতে করে খাল থেকে কচুরিপানা অপসারণ করা হয়।

খালের রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা কচুরিপানা অপসারণের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) হাজীগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন রশিদ জানান, খাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই, তাই মৎস্য অফিস যদি এ বিষয়ে এগিয়ে আসে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারি। কচুরিপানা বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, অক্টোবর মাসে খাল দিয়ে যখন বর্ষার স্বাভাবিক পানি নদীতে নামবে তখন ভেসাল জালসহ খালের প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দিলে ৮০ভাগ কচুরিপানা নদীতে চলে আসবে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, খালটি থেকে আমরা ভেসাল জাল অপসারণের জন্যে উদ্যোগ নিয়েছি। কাল বা পরশু থেকে এ বিষয়ে কাজ শুরু হবে আর কচুরিপানা অপসারণের বিষয়ে সহসাই কাজ শুরু হবে। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, বোয়ালজুরি খাল দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়