প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দীর্ঘ ১৭ মাস পর ১২ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে দেশের সব শ্রেণির বিদ্যালয় চালু হচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোও প্রস্তুত শিক্ষার্থীদের ক্লাসসহ কার্যক্রম শুরু করতে। দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার শিখনফল হতে বঞ্চিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় দেড় বছর হাতে-কলমে ক্লাস করতে না পারায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শিখনফল হতে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। আর এই শিখনফলকে এগিয়ে নিতে বা করোনাকালের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রাথমিকের শিক্ষকরা আন্তরিক হলেও তাদের নেতাদের ক্লাসে ফেরানো নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ হাজার ১শ’ ৫৬টি। আর এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজার ২শ’ ১ জন । প্রাক প্রাথমিক ব্যতিত জেলায় প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৪শ’ ২ জন। এসব শিক্ষার্থীর শিখনফল নিশ্চিত করতে শিক্ষকদেরকে নতুন করে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ৮ উপজেলায় শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্যে বেশ ক’টি শিক্ষক সমিতি রয়েছে। মূলত এসব সমিতির শিক্ষক নেতার অধিকাংশই সাধারণত বিদ্যালয় কিংবা ক্লাসে নিয়মিত থাকেন না বলে অভিযোগ অনেক পুরোনো।
এসব শিক্ষক নেতা মূলত উপজেলা শিক্ষা অফিস, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের তাবেদারি করতেই ব্যস্ত থাকেন। কেউ কেউ তেলবাজিতেই সময় পার করেন। জেলা সদরের বাইরের উপজেলাগুলোতে এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। যার ফলে এসব শিক্ষক নেতা বিদ্যালয় ও ক্লাসমুখী হন না কখনোই। আবার সাধারণ নারী শিক্ষকদের কেউ কেউ নানা ছলছুতায় হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলায় কর্মরত শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতি নামে তিনটি সংগঠন এ জেলায় সক্রিয় রয়েছে।
শিক্ষকদের এই তিনটি সমিতির রয়েছে জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটি। প্রত্যেকটি কমিটির সর্বেসর্বা হচ্ছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক। তাদের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ স্ব-স্ব কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের শতকরা ৯৮ভাগই মূলত বিদ্যালয় ও শ্রেণিমুখী নন। জেলায় সমিতির নেতা নামধারী এমন শিক্ষক সংখ্যা রয়েছেন ৫ শতাধিক বলে জানা গেছে। সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যেক ইউনিয়নে গড়ে ১০ জন শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বের নামে বছরের পর বছর কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসকে রহস্যজনকভাবে বরাবরই নীরব থাকতে দেখা যায়। এতে করে ওইসব শিক্ষক নেতার বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষারমান নিম্নমুখী হতে থাকে। ক্ষতির শিকার হয় আগামীর সম্ভাবনাময় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বর্তমানে শিক্ষক নেতা হওয়া মানেই যখন কর্মস্থল ফাঁকি দেয়া, তখন এর ফলে কর্মরত সাধারণ শিক্ষকরাও তাদের পাঠদানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। এজন্যে জেলার কর্মরত শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন, দীর্ঘ বিরতির পর চলমান শিক্ষার্থীদের শিখনফল ঘাটতি পুষিয়ে আনতে সবার আগে শিক্ষক নেতাদের ক্লাসে ফেরানোটাই এখন দরকার বেশি। তা না হলে চরম বিপর্যয় দেখা দিবে চাঁদপুর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
এ বিষয়ে প্রতিকার কী জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি যিনি বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমিতিরও সভাপতি সর্দার আবুল বাসার বলেন, সরকার প্রাথমিক শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের উন্নয়নে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ন্যায় নির্বাচিত প্রতিনিধি করলে কোনো সমস্যা থাকবে বলে মনে করি না। তবে জেলা উপজেলা শিক্ষা অফিস শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করলে আমার মনে হয় শিক্ষক নেতারা ক্লাস ফেলে এসব কাজে সময় ব্যয় করবেন না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ক্লাস টাইমে কোনো শিক্ষক নেতা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অফিসে যেতে পারবেন না, এটা সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। চাঁদপুর জেলায় শিক্ষক নেতাদের ক্লাস ফাঁকির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কতটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দির জানান, চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে। বিষয়টি অন্য কোথায় কেমন জানি না। তবে চাঁদপুরে আমাদের জন্যে কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। নিকট অতীতে বিশেষ করে করোনাকালে শিক্ষক নেতারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে তিনি জানান।