সাংবাদিকতা করতেন অর্থনীতি বিষয়ে। যখন দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না, আশির দশকের শেষভাগে সেই সময়ে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতার অগ্রগণ্য একজন ছিলেন নাজিম উদ্দিন মোস্তান। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক চাঁদপুরের কৃতী সন্তান। তাঁর জন্মস্থান চাঁদপুর সদর উপজেলার সকদি গ্রাম। কিংবদন্তি সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তানের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী ছিলো ১১ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও তার রুহের মাগফেরাত কামনায় শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হয়েছে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সমন্বয়ে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। সভাশেষে শারীরিক প্রতিবন্ধী ২ জন নারী ও একজন পুরুষকে নাজিম উদ্দিন মোস্তানের পরিবারের পক্ষ থেকে হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশার সঞ্চালনায় মরহুমের বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে আলোচনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রোটাঃ পিপি কাজী শাহাদাত ও গোলাম কিবরিয়া জীবন। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বিএম হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী ও এএইচএম আহসান উল্লাহ।

মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবসহ আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান মরহুম সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তানের বড় মেয়ে এসএ টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর নাজমুন্নাহার মিলি।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তান চাঁদপুরের কৃতীসন্তান। তিনি অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী একজন সাংবাদিক ছিলেন। আমি সরাসরি তার কাছ থেকে সাংবাদিকতার অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে।

তিনি বলেন, নাজিম উদ্দিন মোস্তান এতো বড় মাপের একজন সাংবাদিক ছিলেন যে, ওই সময়ে ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রতিদিন তাঁর ৫/৬টি সংবাদ প্রকাশিত হতো। তিনি যে কোনো বিষয়ে রিপোর্টিং করার ক্ষমতা রাখতেন। ওই সময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা ছিলো যেন নাজিমীয় ইত্তেফাক। আমরা তাঁকে অকালে হারিয়েছি। তিনি বেঁচে থাকলে সাংবাদিকতার অনেক কিছু শেখা হতো। তিনি সবসময় বলতেন, সংবাদের উপাদান বাতাসে উড়ে, আমরা ধরতে জানি না। আজকে তাঁর জন্মবার্ষিকী স্মরণ রেখে পরিবারের পক্ষ যে মানবিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। আজকাল অনেক সন্তান তার বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও বাবা-মায়ের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে তাদের স্মরণ করে না। এ ক্ষেত্রে নাজিম উদ্দিন মোস্তান সাহেব সৌভাগ্যবান। কারণ তাঁর মেয়ে বাবাকে স্মরণ করে গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন তাঁর বক্তব্যে বলেন, নাজিম উদ্দিন মোস্তান ছিলেন তরুণ সাংবাদিকদের কাছে আইডল। তাঁকে দেখে এবং পড়ে তরুণরা অনেক কিছু শিখেছে। তাঁর মতো গুণী সাংবাদিকদের কল্যাণেই এই পেশাটি মহৎ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই মানুষটি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন, কিন্তু নীতির সাথে কখনো আপস করেন নি। ইত্তেফাক পত্রিকার জন্যে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তখন পত্রিকার নীতিনির্ধারকদের থেকে এমনও বলা হয়েছে, একজন নাজিম উদ্দিন মোস্তান থাকলেই ইত্তেফাক চলবে।

তিনি আরো বলেন, আমার ভাই জাকারিয়া মিলনও ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। আমি নিজেও ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। যার ফলে কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তান সাহেবের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি। আমিও তাঁর কাছ থেকে সাংবাদিকতা শিখেছি। তিনি আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করতে ঢাকা গেলে তিনি আমাকে স্নেহ করতেন। আজকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে এমন আয়োজন করায় আমি তাঁর মেয়েকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি পিতার সুযোগ্য সন্তান হতে পেরেছেন।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, প্রথিতযশা সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তান চাঁদপুরের কৃতীসন্তান ছিলেন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্ব করি। তাঁর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আজকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে হুইল চেয়ার বিতরণ করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত ভালো এবং মহৎ কাজ। আমরা চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আলোচনা সভা শেষে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুর ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদ, সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়ের, দৈনিক জনতার চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি ও চাঁদপুরকণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান, এসএ টিভির চাঁদপুর প্রতিনিধি আতিক খান, দৈনিক শপথ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার এইচএম নিজাম, দৈনিক চাঁদপুর প্রতিদিনের চীফ রিপোর্টার আশিক বিন রহিমসহ অন্য সাংবাদিকবৃন্দ।