শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   দিনমজুরকে জবাই করে হত্যা, ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
  •   অবশেষে চাঁসক সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাছানকে বদলি
  •   নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সড়কের ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ
  •   বাবা মায়ের উপর ছেলেদের নৃশংসতা ।। বৃদ্ধ বাবার থানায় অভিযোগ
  •   ফিরে এলেন আগের খতিব, নামাজের আগে নাটকীয়তা বায়তুল মোকাররমে

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বিদেশ ভ্রমণ যেন শিক্ষায় রূপান্তরিত হয়

মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল
বিদেশ ভ্রমণ যেন শিক্ষায় রূপান্তরিত হয়

আমি একজন মফস্বলের মানুষ। জীবনে কখনো দেশের সীমানা অতিক্রম করার সুযোগ হয়নি। এখনো পর্যন্ত এমনটি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছি না। তবে মনেপ্রাণে ইচ্ছে রয়েছে, পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনায় যাওয়ার। মহান আল্লাহ পাক তৌফিক দান করলে অবশ্যই এ সফরে বের হবো ইনশাআল্লাহ। এ পর্যন্ত এর বেশি চিন্তা করাও আমার পক্ষে অসম্ভব। তবে আমার বেশকিছু বন্ধুবান্ধব ইউরোপ-আমেরিকায় থাকার সুবাদে তাদের মুখে উন্নত দেশগুলোর প্রশংসা শুনতে পাই। এছাড়াও বর্তমানে ইন্টারনেটের সুবাদে ইচ্ছে হলেই যে কোনো দেশের সচিত্র প্রতিবেদন দেখতে পাই। আমাদের জন্যে এইটুকুই যথেষ্ট মনে করি।

উন্নত দেশগুলোতে পা না রাখতে পারি, মোবাইলের বদৌলতে ইউটিউবে দেখে চোখের শান্তি তো পাওয়া যায়! এ আর কম কিসের। শান্তি পাওয়াটাই আসল। কথায় আছে না, কেউ দেখে শান্তি আর কেউ খেয়ে! তবে আমরা মফস্বলের সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের জীবনমান চলার মতো হলেই সন্তুষ্ট হয়ে যাই। কিন্তু আমরা যাদেরকে আমাদের নেতা, অভিভাবক, গুরু ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে থাকি, তারা কি কখনো এতো অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকেন! ভেবে দেখেছেন কি, কখনো ৭০/৮০ বছরের একটা জীবনে কতোটুকু হলে আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন। কত টাকা, কয়টা বাড়ি-গাড়ি ও কতো একর সম্পত্তি আপনার প্রয়োজন?

সম্প্রতি বিগত সরকারের পতনের পর যে সকল তথ্য বের হচ্ছে, তা আমার মতো একজন মানুষের চিন্তা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলুনতো, আমাদের জীবনে অর্থের গুরুত্ব বেশি নাকি সম্মানের? এতো এতো স্লোগান, করতালি ও সালাম পাওয়া লোকগুলো যখন জীবনের সকল অর্জিত সম্পদ রেখে পালিয়ে যেতে ছোটাছুটি করতে থাকে, তখন প্রশ্ন জাগে আমাদের জীবনে অর্থের গুরুত্ব বেশি নাকি সম্মানের।

আমার মতো একজন মফস্বলের মানুষ এতো কিছু ভেবে সময় নষ্ট না করে শুধু শান্তিতে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পেলেই চলে। তারপরও কিছু কিছু বিষয়ে না ভেবে কি কোনো উপায় আছে? প্রবাসে থাকা আমার এক বন্ধুর মুখে অনেক বিশাল বিশাল কাহিনী শুনে মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে বিদেশ কী জিনিস একটু দেখে আসি। শুনেছি, তাদের সড়ক গুলো যতোটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তা আমাদের বাসা বাড়িগুলোও নয়। তাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো দেখলে জনগণ ভয়ে পালিয়ে যায় না বরং উপকার নিতে তাদেরকে নিরাপদ মনে করে। জনগণের মাঝেও রয়েছে আইন মেনে চলার প্রতিযোগিতা। সবাই নিয়মনীতির মধ্যে থেকে জীবন যাপন করে থাকে। আমার বন্ধুর মতে, পৃথিবীর সকল সুখ- শান্তি ওখানে। এসব কাহিনী শুনে ভাবছি, এ কারণেই বুঝি আমাদের রাজনৈতিক ও আমলারা সুযোগ পেলেই সরকারি অর্থ ব্যয় করে নানান অজুহাতে বিদেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। অনেকেই অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। যারা ক্ষমতা পেয়ে দেশের অর্থ দিয়ে ঘন ঘন বিদেশ সফর করেছেন, তারা কি কখনো ভেবেছেন এই মাতৃভূমি তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উন্নত করা সম্ভব। এই সবুজ সুফলা বাংলাদেশকে আরো রঙিন ভাবে সাজানো সম্ভব। তাদের বিদেশ ভ্রমণ কেনো শিক্ষায় রূপান্তরিত হয় না। বিদেশের ভালো উদ্যোগগুলো কেন আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা হলো না। আমাদেরকে আবর্জনার স্তূপে রেখে আমাদের অর্থ পাচার করে যারা বিদেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন, তারা কি কখনো মনেপ্রাণে আমাদের লোক ছিলেন? নাকি কখনো আমাদেরকে ভালোবেসেছেন? আমরা কি কখনো চিন্তা করতে পারি না ইউরোপ-আমেরিকার মতো সকলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার। আজ আমরা স্বাধীনতা ভোগ করছি। সত্যি বলতে আমরা কি স্বাধীনতার অর্থ এখনো বুঝতে শিখেছি? আমরা যাদের নিয়ন্ত্রণে বেঁচে ছিলাম, তারা কি কখনো আমাদেরকে স্বাধীনতার অর্থ বুঝিয়েছেন? স্বাধীনতার ওপর ভর করে আমাদেরকে শিখিয়েছেন কী করে অর্থ লোপাট করতে হয়, অন্যের মাথায় আঘাত করে কীভাবে নিজের পকেট ভারী করতে হয়; টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজি করে নেতার নেতৃত্ব কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। এছাড়াও শিখিয়েছেন কীভাবে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে হয়, সাইবার নিরাপত্তা আইন দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করতে হয়। মাঝে মাঝে ভাবি, দেশটা কি জনগণের নাকি যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের। আমরা কি গণতন্ত্রে রয়েছি নাকি রাজতন্ত্রে ? এখন মনে হচ্ছে আমরা এতোদিন কোনো তন্ত্রেই ছিলাম না, থেকেছি স্বৈরতন্ত্রে! কেউ কি কখনো আমাদেরকে ভালোবেসেছেন, নাকি ব্যবহার করেছেন?

আমরাও এমন মানুষ নেতাদের কথায় সব ভুলে যাই। আর আবেগ নয়, আমাদের সরলতা নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলা নয়, বিদেশে অর্থ পাচার নয়, আসুন আমরা এই বাংলাদেশকে নিরাপদে যত্ন দিয়ে গড়ে তুলি, যাতে বাইরের দেশের লোকজন তাদের সেকেন্ড হোম হিসেবে আমাদের মাতৃভূমি কে বেছে নেয়। যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে সম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, তারা যেন এদেশের উন্নতি দেখে চটপট করতে থাকে। আমাদের প্রতিটি বিদেশ সফর যাতে শিক্ষা সফরে রূপান্তরিত হয় সেই চেষ্টাই হবে সবার। আসুন দেশটাকে ভালবাসি, আমাদের পরিবেশ মনের মত গড়ে তুলি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়