প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে ফ্যাসিস্ট মেয়রের অধ্যায়ের সমাপ্তি
অপসারণের ঘোষণায় জনমনে স্বস্তি ॥ বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ
ফরিদগঞ্জের অত্যাচারী ও জুলুমবাজ পৌরসভার মেয়রের অপসারণের ঘটনায় পৌরবাসীসহ সমগ্র উপজেলাবাসীর মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। ১৯ আগস্ট সোমবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব মোঃ মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের আলোকে সারাদেশে ৩২৩ জন মেয়রের অপসারণের অংশ হিসেবে ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ফ্যাসিস্ট মেয়রের অপসারণের খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ পৌরবাসীকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেছে। এ ঘোষণার পর ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কারণে এই মেয়রের কাছে সাধারণ মানুষ ছিলেন মূল্যহীন। বার্ষিক লাইসেন্সের নামে দরিদ্র অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, পূর্বে পৌরসভার মাস্টাররোলে চাকরি করা কর্মচারীদের অপসারণ করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য ও দলীয় ক্যাডারদের চাকরি প্রদান করা ও তুচ্ছ কারণে পৌরসভার স্টাফদের গায়ে হাত তোলার বিষয় ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্প থেকে চাঁদা আদায় এবং অবৈধভাবে নিজের মেয়ে নাজমুন নাহার অনিকে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করাতেন অহরহ। ফরিদগঞ্জ বাজার ও বাসস্ট্যান্ডের ইজারার নামে করতেন লুটপাট। কন্ট্রাক্টভিত্তিক সালিস বাণিজ্য করা এবং নিজ বাড়ির কাজের লোকদের বেতনের টাকা পৌরসভার ফান্ড থেকে দেয়ার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন এই মেয়র। শুধু তাই নয়, মতের অমিল হলে যাকেতাকে পৌরসভা এবং তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতনও চালাতেন তিনি। এলাকার ভদ্র এবং নিরীহ মানুষকে রাজাকারের সন্তান বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা ছিলো তার প্রতিদিনের কাজের রুটিন অংশ। গত কয়েক বছরে ফরিদগঞ্জের বেশ ক'জন গণমাধ্যমকর্মী তার অপকর্ম তুলে ধরায় চরমভাবে নাজেহাল করেছেন তাদের। তার অনিয়মের এক সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলার সিনিয়র এক সাংবাদিককে রাজাকারের বংশধর আখ্যায়িত করে ওই সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে পৌরসভার স্টাফদেরকে দিয়ে ঝাড়ু মিছিল করানোর মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন ফ্যাসিস্ট এই মেয়র। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরিতেও তিনি ছিলেন সরব, মোটা অংকের টাকা খেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেতে সহায়তা করা এবং ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে চাঁদা নিয়েছেন তিনি।
অত্যাচারী ও জুলুমবাজ এই পৌর মেয়রের দোসর হিসেবে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দিয়ে চাঁদাবাজি সহ নানামুখী অপকর্ম চলছিলো। তার অপকর্মের মূল হাতিয়ার হিসেবে পৌরসভার মাস্টাররোলে চাকরি করা স্টাফদের ব্যবহার করতেন। তার নানামুখী অপকর্মের প্রধান দোসর ছিলেন ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়চারা এলাকার বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন। তিনি ছিলন মেয়রের জুলুমবাজির মূল হাতিয়ার। এমনকি বার্ষিক অটোরিকশা লাইসেন্স তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রতি অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়ার ও এলাকায় স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।