প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে এক পাগলীর গর্ভের সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে এলাকায় তোলপাড়
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২নং বালিথুবা ইউনিয়নের শোশাইচর গ্রামের খাসের বাড়ির এক পাগলী মেয়ের গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়। কারণ ইতঃপূর্বে পাগলী মেয়েটির কোনোরকম অনানুষ্ঠানিকভাবে এবং কোনোরকম কাবিননামা ছাড়াই একাধিক বিয়ে হয়। যাদের সাথে বিয়ে হয় তারা তাকে ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার কারণে তার গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।
মানবতা বিরোধী ঘটনাটি সংবাদকর্মীদের কানে আসলে ইউনিয়নের শোশাইচর গ্রামের পাগলীর নিজ বাড়ি খাসের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ছোট্ট একটি ঘরে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে আছেন পাগলী সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় তার মা সাজুদা বেগম সংবাদকর্মীদের আগমনের কথা শুনে তিনি এগিয়ে আসেন এবং অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যেই এলাকার অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তি ও পাগলী সাবিনা ইয়াসমিনের ছোট ভাই খায়রুলও চলে আসেন।
সাবিনা ইয়াসমিনের মা ও এলাকার অন্যদের কথার আওয়াজে সাবিনার ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিনি ঘুম থেকে উঠে একজন পরিপূর্ণ পাগলের মতোই বিভিন্ন রকম আবোলতাবোল কথা বলতে থাকে। এ সময় পাগলি সাবিনা ইয়াসমিনের মা সাজেদা বেগম বলেন, মেয়ের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের গরিবের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে সাহায্যের জন্যে অনুরোধ করছি। ছোট ভাই খায়রুল ইসলাম বলেন, তার বোনটি সুস্থ ছিল, হানিফদের ঘরে কাজ করতো। পরে হানিফরা তার বোনটিকে বরিশালের এক ছেলের কাছে বিয়ে দেয়। সেই ছেলে তার বোনকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকতো। পরে তার বোনকে মারধর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তারপরেই তার বোন পাগল হয়ে যায়। চাচা আব্দুল মমিন বলেন, হানিফ গং তার ভাতিজিকে বিয়ে দেয়, চাচা হিসেবে তাকে কখনো জানায় নি। এখন দেখেন আমার ভাতিজি বাড়িতে এবং পাগল ও প্রেগন্যান্ট অবস্থায়। এই পরিস্থিতিতে তার ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো টাকা-পয়সা নেই, তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পার্শ্ববর্তী বাড়ির সেলিম নামের একজন বলেন, হানিফ কাকারা মেয়েটিকে বিয়ে দেন এবং যার কাছে বিয়ে দেন, হানিফ কাকারা মিলে আবার তার কাছ থেকে মেয়েকে তালাক নিয়ে আসেন। এখন মেয়েটি অসুস্থ, তার চিকিৎসা দরকার এবং মেয়েটি বর্তমানে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ও পাগল। গর্ভের সন্তান কার সেটাও জানি না, এর একটা সমাধান প্রয়োজন।
এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিদের মধ্যে মোঃ মহসিন নামের একজন বলেন, হানিফ গং মেয়েটিকে জোর করে বরিশালের এক ছেলের কাছে বিয়ে দেয় এবং সেই ছেলেটি মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে একটি ঘরে আবদ্ধ করে রাখে এবং কয়েক মাস পর মেয়েটিকে হানিফের ছেলেকে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বর্তমানে মেয়েটি অসুস্থ, পাগল এবং প্রেগন্যান্ট অবস্থায়। মেয়েটির পেটে যে সন্তান আছে তার পিতৃ পরিচয়ের কী হবে? প্রশাসন মেয়েটির চিকিৎসা ও সুবিচারের জন্য এগিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন। রিপন নামের একজন বলেন, মেয়েটি সুস্থ ছিল। হানিফ নিজে গার্জিয়ান হয়ে মেয়েটিকে ঢাকার একটি ছেলের কাছে বিয়ে দেয়। বর্তমানে মেয়েটি সম্পূর্ণ পাগল এবং গর্ভাবস্থায়। এই মেয়েটির গর্ভের সন্তান কার? এই সন্তানের বাবা কে হবে? আমরা এর সুস্থ সমাধান চাই।
সাবিনা ইয়াসমিনের প্রথম বিয়ে যে ছেলের সাথে হয় সে ছেলের বাড়ি বরিশালের ভোলায়। থাকেন মিরপুর-১ নম্বর আকবর কমপ্লেক্স এলাকায়, তার নাম মোঃ আনোয়ার হোসেন। এরপর শোশাইচর এলাকার কাজী দেলোয়ারের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরেই সাবিনা ইয়াসমিনের অনানুষ্ঠানিক এবং কোনোরকম কাবিননামা ছাড়াই প্রথম বিয়ে হয়। কথা বলা হয় সেই কাজী দেলোয়ারের সাথে। এ সময় তিনি বলেন, হানিফ ও তার ভাইয়েরা এলাকায় ভালো মানুষ হিসেবেই পরিচিত। উপকারের স্বার্থেই সাবিনা ইয়াসমিনকে মিরপুরে অবস্থানরত বরিশালের ভোলা এলাকার ছেলে আনোয়ারের কাছে বিয়ে দেয়। আমার পরিচয়ের সূত্র ধরেই বিয়ে দেয়। আনোয়ারও খুব ভালো একটি ছেলে। কিন্তু সাবিনার খারাপ আচরণ এবং তার বিভিন্ন রকম কুকর্মের কারণে ও সাবিনার মস্তিষ্কে বংশগত পাগলামির সমস্যা থাকার কারণে আনোয়ার তাকে বিদায় করে দেয়। তার দেনমোহরও দিয়ে দেওয়া হয়। যেটুকু শুনেছি আনোয়ার সাবিনাকে বিদায় করে দেওয়ার পরেও আরো দুই-তিনটি বিয়ে হয়েছে। এছাড়া আনোয়ার যখন সাবিনাকে বিদায় করে দেয় তা এখন থেকে প্রায় এক বছর আগে। তাই সাবিনার পেটে বর্তমানে যে বাচ্চা, এই বাচ্চা আনোয়ারের না বলে তিনি দাবি করেন।
কাজী দেলোয়ার এবং অন্যান্যের কথার সূত্র ধরেই এই প্রতিবেদক কথা বলতে গিয়েছিলেন পাগলী সাবিনা ইয়াসমিনের প্রথম বিয়ের সমন্বয়ক মোঃ হানিফ মিয়ার সাথে। এ সময় হানিফ মিয়া বলেন, সাবিনা ইয়াসমিনের বাবা আব্দুল মালেক, তিনিও ছিলেন একজন পাগল। আব্দুল মালেক এখন থেকে কয়েক বছর আগে এলাকা থেকে উধাও হয়ে যান। তার মাও বর্তমানে পাগলের মতোই। সাবিনা ইয়াসমিনদের অভাব-অনটনের সংসার। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সবার ছোট সাবিনা ইয়াসমিন। পর্যায়ক্রমে তারা তিন বোনই আমাদের ঘরে টুকটাক কাজ করতো। তাদের ঘরের অভাব অনটন দূরীকরণে অনেক কিছুই আমরা দেখভাল করতাম। সেই সুবাদে সাবিনা ইয়াসমিনকে আনোয়ার নামের জনৈক ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেই। ছেলেটি আমার জানামতে খুব ভালো ছিল। কিন্তু সাবিনা ইয়াসমিনের পাগলামির কারণে আনোয়ার সাবিনা ইয়াসমিনকে তার পরিপূর্ণ কাবিনের হক পরিশোধ করে তালাক দিয়ে দেয়। লোক মারফত শুনেছি তার আগের স্বামী আনোয়ার তাকে তালাক দেওয়ার পরে আবার সাবিনা ইয়াসমিনের একাধিক বিয়ে হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু ছাদেব মেম্বার বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণেই এলাকার অনেকে হানিফ মিয়াকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু মূলত হানিফ মিয়া পাগলী সাবিনা ইয়াসমিনদের উপকার ছাড়া কখনো ক্ষতি করেন নি। হানিফ মিয়াদের সহযোগিতার কারণেই আব্দুল মালেকের পরিবার বা সাজুদার পরিবার এখনও পর্যন্ত অনেকটা ভালো আছে। এছাড়া সাবিনা ইয়াসমিন যে পাগলামি করছে, এটা তাদের বংশগত সমস্যা। কারণ ইতিপূর্বে তার বাবা আব্দুল মালেক পাগল ছিলেন। এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছেন। তার মাও বর্তমানে পাগলের মতোই। এছাড়া সাবিনা ইয়াসমিনের একাধিক বিয়ে হওয়ার কারণে তার পেটের সন্তানের পিতৃ পরিচয় পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।