সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০৩

শুধু কম্বলই কি শীতবস্ত্র?

কাজী শাহাদাত
শুধু কম্বলই কি শীতবস্ত্র?

বর্তমানে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে কম্বল বিতরণের গতানুগতিক কর্মসূচি চলছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তারা এমন কর্মসূচি পালনকে তুলনামূলক সহজ মনে করে, তবে সাশ্রয়ী নয়। এমন গতানুগতিকতার বিপক্ষে বা সমান্তরালে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া কী বা করণীয় কী হতে পারে, সেটা নিয়ে ফরিদগঞ্জ থেকে চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি শামীম হাসান লিখেছেন একটি সুখপাঠ্য প্রতিবেদন, যেটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ প্রতিবেদন হিসেবে ছাপা হয়েছে। হেডিং হয়েছে এমন-'১০ টাকার পোশাকে গরিবের শীতবিলাস'। সাব হেডিং হয়েছে-'এই শীতের ভিত্তে মাইনষে দিলে এক্কান কম্বল দেয়, কিন্তু ওগ্গা জাম্পার কেউ দেয় না!' এমন হেডিংয়ে আমাদের সমাজের নিরেট বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। তবুও প্রতিবেদনটির বিবরণে যাওয়া যাক।

প্রতিবেদনটিতে লিখা হয়েছে, প্রকৃতিতে বিরাজ করছে শীতের আবহ। সারাদেশের ন্যায় ফরিদগঞ্জেও জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র এই শীত নিবারণের জন্যে সকল শ্রেণী পেশা ও ভিন্ন বয়সী মানুষদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু শীতের পোশাক। উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা বড়ো বড়ো শপিং মল থেকে উচ্চমূল্যে শীতের পোশাক ক্রয় করলেও মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যদের শীত নিবারণে শীতের পোশাক ক্রয়ের জন্যে প্রত্যাশার জায়গা হয়ে উঠেছে ফুটপাতের ১০ টাকা থেকে শুরু করে শত টাকায় শীতের পোশাকের দিকে। সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় শীতের শুরু থেকে এসব ফুটপাত থেকে পোশাক কিনতে প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে ক্রেতারা। পোশাকের স্তূপের শত শত পোশাকের মাঝ থেকে সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর পোশাকটি খুঁজে বের করার অহরহ দৃশ্যের দেখা মেলে শীত উপলক্ষে গড়ে ওঠা ভাসমান এসব ফুটপাতের দোকানে। ১০ টাকা থেকে শত টাকায় ক্রেতারা কিনছেন তাদের প্রত্যাশিত এসব শীতের পোশাক। ভ্রাম্যমাণভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকান শুধু উপজেলা সদরস্থ ফরিদগঞ্জ বাজারেই নয়, উপজেলার অন্যান্য বাজারেও একইভাবে দেখা মিলে। সেসব দোকানেও একইভাবে বেচা-বিক্রি চলে সমানভাবে। উপজেলা সদরস্থ ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যতীত গৃদকালিন্দিয়া বাজার, রূপসা বাজার এবং গাজীপুর বাজারেও দেখা মিলে শীতের পোশাক বিক্রির এসব দোকানের। ফরিদগঞ্জ বাজারের সড়কের দুপাশে এবং ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এমন দোকানের দেখা মিলে প্রায় বিশটির বেশি। কথা হয় কয়েকজন বিক্রেতার সাথে। তারা জানান, বছরের অন্য সময় ভিন্ন কাজ করলেও শীতকে উপলক্ষ করে ৩ থেকে ৪ মাস চলে তাদের এই মৌসুমী ব্যবসা। পূর্বে ব্যবহৃত এসব পোশাক বড়ো বড়ো লট কিনে ইমপোর্টাররা এগুলোকে ওয়াশ করে তারপর পোশাকের কোয়ালিটি অনুযায়ী ভাগ করে কয়েক ভাগে। ঢাকার সেসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আমরা গড়ে পিস হিসেবে কিনে এনে কোয়ালিটি অনুযায়ী আরেক দফায় এগুলো বাছাই করি। পোশাকের মান অনুযায়ী কয়েকটি স্তূপ দেয়া হয় এসব পোশাক। যার কোনো কোনো স্তূপের পোশাক ১০ টাকা, কোনোটি ২০টাকা, আবার কোনোটি ৩০ টাকা। এভাবে মান অনুযায়ী যে পোশাকটির কোয়ালিটি ভালো মানের, সেগুলোর দাম শত টাকার বেশিও হয়। স্তূপীকৃত এসব পোশাকই সামর্থ্য ও চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা কিনে নেন। নারী-পুরুষ সকল বয়সীর পোশাকই পাওয়া যায় এসব দোকানে। যে কারণে শুধু নিম্নবিত্তরাই নয়, অনেক মধ্যবিত্তও এখান থেকে কিনছেন পোশাক। কথা হয় শীতের পোশাক কিনতে আসা রিকশাচালক আব্দুল এরশাদের সাথে। তিনি জানান, হাজার টাকায় শীতের জামা কেনার সামর্থ্য তো আমাদের নাই। তাই গত বেশ কয়েক বছর শীতে এখান থেকেই শীতের জামা কিনি। এ বছর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং ছেলের জন্যে আগেই নিয়েছি। আজকে নিজের জন্যে কিনতে আসছি। হাতে থাকা পোশাক কত দিয়ে কিনলেন? এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন ত্রিশ টাকা। ১০ টাকার পোশাকও তো আছে সেখান থেকে নেননি কেন? বলতেই তিনি ফের বলেন, ১০/২০/৩০ আরও বেশি টাকার সুয়েটারও আছে এখানে। যেটা জিনিস ভালো ওইটার দামও একটু বেশি। কথা হয় অপর ক্রেতা সারমিন আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, দেখে শুনে একটু খুঁজে নিতে পারলে কম টাকায় এখানে মোটামুটি ভালো মানের পোশাকই পাওয়া যায়। তাই এখানে কিনতে আসি। আমি আগেও নিয়েছি আজকেও নিতে আসছি। এ সময় পোশাক কিনতে আসা বৃদ্ধ বয়সী করিম মিয়ার দেখা মিলে। 'কী কিনতে আসছেন' বলতেই তিনি বলে ওঠেন, বাবারে এই শীতের ভিত্তে মাইনষে দিলে এক্কান কম্বল দেয়, কিন্তু ওগ্গা জাম্পার কেউ দেয় না। হঞ্চাশ টিয়া লই আইছি জাম্পার কিনোনেরলাই।

এক সময় যুবকদের দ্বারা গঠিত নানা সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন, এমনকি রাজনৈতিক সংগঠনও পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়ি থেকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপলক্ষে পুরানো কাপড়, বিশেষ করে শীত উপলক্ষে শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে বিতরণ করতো। আবার কোনো কোনো সংগঠন কম্বল ব্যতীত অন্যান্য শীতবস্ত্র (যেমন-স্যুয়েটার/জাম্পার, চাদর, হুডি ইত্যাদি) নূতন কিনে বিতরণ করতো। এখন এমনটি বিরল দৃশ্য। এখন চলছে শুধু কম্বল বিতরণ। কম্বলকেই শীতবস্ত্র বিতরণের প্রধান সম্বল মনে করছে যেন প্রতিটি সংগঠন/ প্রতিজন উদ্যোক্তা। তারা যেনো শীতবস্ত্র প্রত্যাশী মানুষকে জোর করে বোঝাতে চাচ্ছে, শীতবস্ত্র মানেই কেবল কম্বল।

বলা দরকার, কম্বল দিয়ে বিছানায় কিংবা ঘরের ভেতরে থাকাবস্থায় শীত নিবারণ করা যায়। কিন্তু ঘরের বাইরে কি চাদর, স্যুয়েটার/ জাম্পার, হুডি ছাড়া বের হয়ে শীত নিবারণ করা যায়? ফরিদগঞ্জের বৃদ্ধ করিম মিয়া কম্বল নিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণের গতানুগতিক চিত্রের বিপরীতে জাম্পার, চাদর জাতীয় শীতবস্ত্রের যে প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন, সেটা কিন্তু বাড়তি অথচ প্রকৃত চাহিদার বিষয়। তাই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে উদ্যোক্তাদের কম্বল বিতরণের গতানুগতিক কর্মসূচির পাশাপাশি অতীতের ন্যায় জাম্পার, চাদর ইত্যাদি শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে পর্যালোচনার তাগিদ দেয়। সে তাগিদে মনোযোগী হতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়