প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরে এখনো জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট
জেলায় ৩ হাজার ২৬৯ জন খামারি
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চাঁদপুর জেলাতে বিক্রির জন্যে হাটে তোলা শুরু হয়েছে কোরবানির পশু। তবে এখনও জমে ওঠেনি বেচাকেনা। শেষ মুহূর্তে তীব্র গরমে গরুর হজম সমস্যা ও হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে খাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ জুন বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা নিশ্চিত করা হয়েছে। সে সুবাদে এবার কোরবানির পশুর হাট জমজমাট থাকবে ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন এই তিনদিন। যেহেতু ঈদের আরও সপ্তাহখানিক বাকি। শুধুমাত্র জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম এলাকার সাপ্তাহিক গরুর হাটগুলো কোরবানি পশুর জন্যে বেশ জমজমাট হয়ে ওঠেছে। বহু মানুষ আগেভাগে তাদের পছন্দের পশু কোরবানি দেয়ার জন্যে কিনে নিয়েছে।
চাঁদপুর শহরের প্রধান ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী শহীদ লস্কর গত সপ্তাহের সোমবার শহরের কাছাকাছি সফরমালী বাজার থেকে এক লক্ষ টাকার উপরে দুটি গরু কিনে রেখেছেন কোরবানির জন্যে। দাম মোটামুটি যাচ্ছে বলে জানান এই বাজারের গরুর হাট পরিচালনাকারী মোঃ আজাদ খান। তবে তারা কোরবানির আগের ৩-৪ দিন হাট পাচ্ছেন না। ১০ জুন সোমবারই কোরবানির জন্যে একদিনের হাট পাচ্ছেন। ঐদিনই কিছু গরু ক্রয়-বিক্রয়ের আশা করছেন।
এদিকে নির্দিষ্ট পশুর হাটগুলো গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী পুরাণবাজার ওছমানিয়া মাদ্রাসা গরুর হাটটি পৌরসভা থেকে যারা পেয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হাওলাদার ও যুবলীগ নেতা মোবারক বেপারী। তাদের গরুর হাট আগামী দুই একদিনের মধ্যে প্রস্তুত করা হবে। চাঁদপুরের অন্যান্য পশুর হাটগুলো ক্রয়-বিক্রয়ের জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে বলে ইজারাদার জানিয়েছে।
সাপ্তাহিক বাজার ছাড়া এখনো কোরবানির পশুর হাটে ক্রয় বিক্রয় শুরু হয়নি। তবে খামারি, গৃহস্থ ও চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা বেষ্টিত চরাঞ্চলের মানুষ তাদের পালিত গরুগুলো কোররবানির হাটে বিক্রির জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সময়মত নিয়ে আসবেন পশুর হাটে।
এ বছর চাঁদপুর জেলার কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সঙ্কট রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে এই সংকট থাকবে না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশুর আমদানি হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় খামারি আছে ৩ হাজার ২৬৯ জন। এসব খামারিরাই কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তি উদ্যোগ ও খামারি মিলিয়ে এ বছর জেলায় ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া লালন পালন করে কোরবানির জন্যে প্রস্তুত করেছেন। এসব পশুর সংখ্যা ৬১ হাজার ৪৮৯। কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৮ হাজার।
জেলা সদরের বাগাদী ইউনিয়নের নানুপুর গ্রামের ডেইরি খামারি খালেদ মুন্সি বলেন, আমি প্রতিবছরই কোরবানিতে বিক্রির জন্যে ২৫ থেকে ৩০টি গরু লালন পালন করি। এ বছর প্রায় ৩০টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত। এগুলো আমার খামারের নিজস্ব জাতের। ঘাসসহ দানাদার খাবার খাওয়ানো হয়। তবে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খরচও বেড়েছে। আমার খামারে ৮০ হাজার থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা মূল্যমানের ষাঁড় আছে।
একই ইউনিয়নের অপর খামারি আহমদ উল্লাহ। তার খামারে আছে শতাধিক গরু। এর মধ্যে কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্যে প্রস্তুত প্রায় অর্ধশত ষাঁড়। এই খামারের শ্রমিকরা জানান, দেশীয় জাতের ষাঁড়ের চাহিদা বেশি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির আগে লোকজন গরু কিনতে আসে। তবে এখনো বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি। তারাও ঘাসসহ দানাদার খাবার দিয়ে এসব গরু লালন পালন করেন।
এদিকে জেলার সবচাইতে বড় পশুর হাট সদরের সফরমালি ও হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর পরিমাণ কোরবানির পশু উঠেছে এই দুই হাটে। তবে ক্রেতারা এখন শুধুমাত্র দরদাম করছেন। অনেকে সুবিধাজনক দাম পেয়ে পশু কিনে নিয়ে গেছেন।
এই সপ্তাহের শেষ দিকের হাটগুলোতে বেচা-বিক্রি বাড়বে। সদরে সবচাইতে দীর্ঘ সময় কোরবানির পশুর হাট বসে বাগাদী ইচলী চৌরাস্তায়।
এই বাজারের ইজারাদার জাকির হোসেন খান বলেন, আগামী ১০ জুন থেকে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে। সড়ক ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন ব্যাপারীরা। আবার প্রতিবছরই এই হাট থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকেও লোকজন গরু কিনতে আসেন। ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত এই পশুর হাট চলবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, জেলার ৮ উপজেলার ৩ হাজারের অধিক খামারি এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৬১ হাজার ৪৮৯টি পশু প্রস্তুত করেছেন। জরিপ করে দেখা গেছে জেলার চাহিদানুসারে আরও ১৭ হাজার পশুর ঘাটতি আছে। তবে এই ঘাটতি থাকবে না। কারণ উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক ব্যাপারী জেলার হাটগুলোতে পশু আমদানি করবেন। আশাকরি আমাদের চাহিদা পূরণ হবে এবং সবাই কোরবানি করতে পারবেন।