প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যেভাবে জননেতা হয়ে উঠলেন মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম
মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের পর নামটি চাঁদপুরের মাটিতে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সালে চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) নির্বাচনী এলাকা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে তিনি শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে ৬ বার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করেন। চাঁদপুর-নির্বাচনী এলাকা থেকে রেকর্ড ৫ বার তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এই দীর্ঘ পথচলায় মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় তাঁকে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রায় ১১ জন প্রার্থীর মুখে পড়তে হয় তাঁকে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৫ম বারের মত দলীয় মনোনয়ন লাভ করে বিজয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় ছিলেন বেশ ক’জন। অবশেষে বাংলাদেশ আওয়ামী আস্থা রাখে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ওপর।
নৌকা প্রতীক পেলেও নির্বাচনী মাঠ তার জন্যে সহজ ছিলো না। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয় নিজ দলীয় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখে। আওয়ামী লীগ নেতা ব্যবসায়ী সফিকুল আলম ফিরোজ ও হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম কিছুটা বেকায়দায় পড়েন। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বেশ ক’জন উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা প্রকাশ্যেই নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন। এছাড়াও ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেন। এমনকি দলের কিছু সুবিধাভোগী নেতা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের বিপক্ষে চলে যান। অনেকেই নির্বাচনকালীন সমান তালে লুকোচুরির করে দুই নৌকায় পা দেন।
দলের নেতা-কর্মীদের এমন অবস্থানের কথা জানতে পেরে সাধারণ নেতা-কর্মীদের উপর আস্থা রাখেন নৌকার প্রার্থী। বিভিন্ন পথসভায় তিনি জীবনের শেষদিনটি পর্যন্ত শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ উপজেলার জনগণের কল্যাণে কাজ করার ঘোষণা দেন। সকল জল্পনা-কল্পনা ও হিসাব-নিকাশ মিথ্যা প্রমাণ করে বিশাল ভোটের ব্যবধানে ৫মবারের মতো নির্বাচিত হন তিনি। চাঁদপুর-৫ নির্বাচনী এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, এ বিজয়ের মূল কারণ সাধারণ জনগণের আস্থা। এলাকার জনগণ তার শাসন আমলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়েছ। অন্যায়ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়নি কাউকে। উন্নয়নের পাশাপাশি জনগনের অভিভাবক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন রফিকুল ইসলাম। ধারণা করা হচ্ছে এ বিজয়ে দলীয় ভোটারদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার তার পক্ষে ছিল। দলের কিছু নেতা নৌকার বিপক্ষে গেলেও সাধারণ মানুষ ঠিকই তাকে সমর্থন দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তিনি জনগণের নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। বিজয়ের পর শত শত মানুষ তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, বেঈমান মুনাফেকদের আল্লাহ ক্ষমা করেন না, আমিও করবো না। আমি জনগণের পাশে থেকে কাজ করবো। আগামী প্রজন্মের জন্য কাজ করে যাবো। মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডারের প্রতি জনগণ যে আস্থা রেখেছেন সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দিনগুলোতে শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ উপজেলার জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে-এটাই সবার প্রত্যাশা।