প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সংসদ সদস্য প্রার্থীদের চোখে ফরিদগঞ্জ-৩
কালো টাকার ব্যবহার পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের অন্তরায়
--------ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে দলগুলো অংশগ্রহণ করছে, ইতোমধ্যে তারা তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর সব প্রার্থী মাঠে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ)’র কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। তরিকত ফেডারেশন যাদের হাতে গড়া তিনি তাদের একজন। তিনি জেলার দুটি আসন থেকে নির্বাচন করছেন। একটি তার জন্মস্থান হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি থেকে, অপরটি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফরিদগঞ্জ থেকে।
আগামী ৫ বছর ফরিদগঞ্জকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করছেন এবং জাতীয় সংসদে গিয়ে কী ভূমিকা পালন করবেন তা জানালেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদেরকে। চাঁদপুর কণ্ঠের ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম ফরহাদের মুখোমুখি হয়েছেন ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আপনি বিজয়ী হবেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : দেখুন, ফরিদগঞ্জে ইতিমধ্যে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে। বাস্তবতা হলো, সরকার এটা জেনেও না জানার মতো অবস্থায় আছে। প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণ হচ্ছে। যেটা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বার বার নির্বাচন অফিসে অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। কারণ, আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। রাতের বেলায় কেউ টাকা দিয়ে গেলে কীভাবে প্রমাণ রাখবো? যারা টাকা নিয়েছে তারা বলবে না যে, ‘আমরা টাকা নিয়েছি’। ফরিদগঞ্জে কালো টাকা একাধিক প্রার্থী বিলাচ্ছেন। যদি কালো টাকা বিলি বন্ধ করা যায় এবং প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ থাকেন (এখন পর্যন্ত আছেন) তাহলে আমি বিশ্বাস করি আমার বিজয় ইনশাআল্লাহ সুনিশ্চিত।
চাঁদপুর কণ্ঠ : জনগণ কেন আপনাকে ভোট দিবে?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : জনগণ আমাকে ভোট দিবে এই কারণে যে, আমি একজন ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। এর প্রভাব হাজীগঞ্জ এবং ফরিদগঞ্জে আছে। আপনি জানেন যে, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আমরা চন্দ্র দর্শনের ভিত্তিতে রোজা এবং ঈদ উদযাপন করে থাকি। জেলার প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ একসাথে ঈদ উদযাপন করি। এর মধ্যে হাজীগঞ্জে ২৭টি গ্রাম এবং ফরিদগঞ্জে ২৩টি গ্রাম। তো, ফরিদগঞ্জ আসনের এই ২৩টি গ্রামের মানুষ ধর্মীয় অনুশাসনে আমাদের খুবই মান্য করে, আর ভোট তো একটা সিম্পল বিষয়। সুতরাং, ফরিদগঞ্জে আমাদের একটা রিজার্ভ ভোট আছে। কারণ, এরা সবাই আমাদের অনুসারী।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার দল ক্ষমতাসীনদের সাথে সমঝোতা করে নির্বাচন করছে। সেক্ষেত্রে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচনে কতটুকু সফলতা আশা করেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : দেখুন, সরকারের সাথে সমঝোতা করে আমরা নির্বাচন করছি বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বিষয়টি হলো, আমরা ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন সরকারেরই একটা অংশ। সরকারের অংশ হিসেবে আমাদেরকে নির্বাচনী মাঠে থাকা দরকার। আমরা থাকছি, নির্বাচন করছি। আমাদের যে যে আসনে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে সে আসনে আমাদের প্রার্থীরা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করছেন। বাকি যে যে আসনে নৌকা ছাড়া হয়নি, সে সে আসনে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মোট ৪১জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে আছেন এবং শেষ পর্যন্ত আমরা থাকবো।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ফরিদগঞ্জে আপনাদের সাংগঠনিক কোনো কর্মকাণ্ড নেই। নেই কোনো ধরনের কমিটিও। আপনার জন্যে নির্বাচনটি কঠিন হয়ে গেল না?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : ফরিদগঞ্জে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই কথাটি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আছে, হয়তো আপনাদের চোখে নাই। ৭ তারিখে ভোটের মাঠে প্রমাণ হয়ে যাবে, আমাদের কী আছে আর কী নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি হাজীগঞ্জের সন্তান। অতীতে ফরিদগঞ্জে আপনাদের তেমন কোনো কার্যক্রমও ছিল না। তারপরও নির্বাচনের জন্যে কেন ফরিদগঞ্জকে বেছে নিলেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : আমি হাজীগঞ্জের সন্তান এটা সত্য, কিন্তু ফরিদগঞ্জে আমার কিছু নেই এটা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ হচ্ছে, আপনি জানেন যে, হাজীগঞ্জের সাদ্রায় আমাদের যে দরবার শরীফ সেটা একেবারেই ফরিদগঞ্জের কোল ঘেঁষে। যদি ক্লিয়ার করে বলি, আমাদের বাড়ির পুকুরের বিপরীত পাড় থেকে ফরিদগঞ্জ শুরু। ফরিদগঞ্জে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজনও রয়েছে। ফরিদগঞ্জে আমাদের প্রতিনিয়ত যাতায়াত রয়েছে। অসংখ্য অনুসারী রয়েছে, যারা আমাদের সাথে একদিন আগে ঈদও করছেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বাংলাদেশে নির্বাচনের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার আছে বলে কি আপনি মনে করেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : অবশ্যই একটি স্থায়ী ব্যবস্থা দরকার। বর্তমানে সাংবিধানিকভাবে যেটা আছে, সেটা যদি জনগণ মেনে নেয় তাহলে গুড। যদি জনগণ ভিন্ন কিছু চায় তাহলে সরকার সেটা বিবেচনা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বাংলাদেশের গণতন্ত্র পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ রাজনীতিবিদদের রাজনীতি চর্চার অভাব। আপনি কি তা মনে করেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : বাংলাদেশের গণতন্ত্র পিছিয়ে আছে এটা আমি বিশ্বাস করি না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি ক্ষমতার জন্যে নাকি জনগণের জন্যে রাজনীতি করেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : দেখুন, ক্ষমতার জন্যে যদি আমি রাজনীতি করতাম বা নির্বাচন করতাম, তাহলে তা আরো আগেই করতাম। ক্ষমতার কথা যদি বলেন, আমরা দরবারকেন্দ্রিক খানকাকেন্দ্রিক ছিলাম। আমাদের কাছে বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী উনারা এমনিতেই আসেন। দোয়া চান। উনারা আমাদেরকে শ্রদ্ধা করেন, ভক্তি করেন, ভালোবাসেন। সুতরাং, ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করি--এটা সঠিক নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : শিল্প উন্নয়ন বলতে ফরিদগঞ্জে তেমন কিছুই নেই। আপনি বিজয়ী হলে শিল্প উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা আছে কি না?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : ফরিদগঞ্জে শিল্প উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। তবে যেটার ওপর বেশি জোর দিব সেটা হলো, আমি ১৮ বছরের উপরের যারা আছেন তাদের কাউকে বেকার রাখব না। এখন প্রশ্ন হলো, আমি কি সবাইকে চাকরি দিব? নাহ্, আমি চাকরি দিব না। চাকরি দিলে তো সে আরেকজনের চাকর হয়ে গেলো। আমি যেটা চাচ্ছি সেটা হলো, এগ্রো বেইজ্ড প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সকল বেকারকে লোনের মাধ্যমে তাদেরকে আমি ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলবো। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও কৃষির ওপর জোর দিয়েছেন। তাছাড়া কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ীও বর্তমানে যে যুগটাতে আমরা প্রবেশ করছি, আল্লাহর রাসূলের হাদিস অনুযায়ী কৃষি কাজের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ভৌগোলিক দিক থেকে ফরিদগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখানে রেল যোগাযোগ নেই। নেই গ্যাস। যা শিল্প উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : রেল যোগাযোগ ফরিদগঞ্জে না থাকলেও চাঁদপুরে রয়েছে। আমি নির্বাচিত হতে পারলে ইনশাআল্লাহ ফরিদগঞ্জে রেললাইন স্থাপনের চেষ্টা করবো। আর শিল্প উন্নয়ন তো হবেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সমাজে প্রচলিত আছে, জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের পর জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভুলে যায়--এ কথা কতোটুকু সত্য?
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : এ কথা অনেকের ক্ষেত্রে সত্য। আমার ক্ষেত্রে সেটা নয়। কারণ, আমার বাবা একজন পীর ছিলেন। আমাদের তিন পুরুষের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের প্রতিশ্রুতি আর অন্যদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমি নিজে একজন কোরআনে হাফেজ, আবার একজন আলেম, সুতরাং, আমি আর যা কিছু করি, না করি, দুর্নীতি করব না এটা শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। জনগণের টাকা মেরে খাব না--এ কথা শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী : কষ্ট করে আসার জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ।