প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-১৪
আমার পিতাই আমাকে দেশপ্রেমিক হতে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন
----------------------মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার
মতলব দক্ষিণের এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার বলেছেন, গণতন্ত্র, সামজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙালি জাতিয়তাবাদী মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয়েছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। তিনি আজীবন স্বপ্ন দেখেছিলেন দারিদ্র্য, ক্ষুধামুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই অবস্থা থেকে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমরা অনেক দূর এগিয়েছি, আরো দূর যেতে আমার ও আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে। আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেনাবাহিনীর একজন নিয়মিত সৈনিক হিসেবে ১৯৬৫ সালে কাশ্মির যুদ্ধে তথা পাক-ভারত যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া কঙ্গোতে শান্তি মিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলদেশে দুমাসের জন্যে ছুটিতে আসেন। তিনি সেনাবাহিনীর এএসসি কোরের সদস্য হওয়ায় ড্রাইভিং জানতেন এবং সেনাবাহিনীর ছোট-বড় গাড়ি ড্রাইভ করতেন। ১৯৯০ সালের ৩ জুন তারিখে আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেন।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যেসব কথা বলেন তা নিচে তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবা (যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা)-এর নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় কী? তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন?
মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার : আমার বাবা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর পিতা কফিল উদ্দিন তপদার, মাতা-করফুলেন্নেছা, সাং-গোবিন্দপুর, পোঃ মাস্টার বাজার, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা নং-০১১৩০০০৩৪২৩, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা নং-৩৪৮৬১, সেনা বাহিনী গেজেট নং-১৪৪৩৬। ছুটিতে থাকাকালীন যুদ্ধ শুরু হলে আমার পিতা পশ্চিম পাকিস্তানে না গিয়ে সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ চট্টগ্রাম ১নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১নং সেক্টরের দায়িত্বে থাকা মেজর জিয়াউর রহমানের গাড়ি চালাতেন। সেখান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের হরিণা থেকে ভারতের মেলাঘর পর্যন্ত প্রায়ই যাতায়াত ছিলো। জুলাই ১৯৭১-এর শেষের দিকে আমার পিতা ফরিদগঞ্জে এসে ২নং সেক্টরে যোগদান করেন। ফরিদগঞ্জে ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন কার্যাবলিতে নিয়োজিত ছিলেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার অনুভূতি কী?
মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার : একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি সৌভাগ্যবান এবং গর্বিত। আমার বাবার বয়সী যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের সন্তানরা হয়ত আফসোস করে। আর আমি বাবার কারণে গর্ববোধ করি। আমার পিতার মাঝে সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি যে মায়া মমতা ও দেশপ্রেম দেখেছি, সেটি আমাকে দেশপ্রেমিক হওয়ার জন্যে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারে আপনার করণীয় কী কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার : ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিলো পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, নির্যাতন তথা শোষিত পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষের সাথে যে পাহাড়সম বৈষম্য, সে অবস্থান থেকে মুক্ত হওয়া, স্বাধীন হওয়া এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা। দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে এগিয়ে যাওয়া, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোসহ যেসব অপরাধ সমাজে বিস্তার করছে, দেশের শান্তি ও কল্যাণে হানিকর তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াসহ প্রতিকারে এগিয়ে যাওয়াই হবে আমার মূল কাজ। পরিশেষে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সকল শহীদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।
মোঃ নাসির উদ্দিন তপদার হযরত শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন। ব্যক্তিগত হিসেবে তিনি বিবাহিত। তাঁর স্ত্রী একজন গৃহিণী।