সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

পিঁয়াজবিহীন পুরাণবাজারের পাইকারী পিঁয়াজের আড়ত

গোডাউন তল্লাশিতে মিলতে পারে পিঁয়াজ : ক্রেতাগণ

বিমল চৌধুরী ॥
পিঁয়াজবিহীন পুরাণবাজারের পাইকারী পিঁয়াজের আড়ত

অনেকটা অলৌকিকভাবেই পিঁয়াজবিহীন হয়ে পড়েছে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী পাইকারী মোকাম পুরাণবাজারের পিঁয়াজের আড়তগুলো। ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়েছে সংবাদটি কানে আসা মাত্রই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পিঁয়াজ ব্যবসায়ীদের গোডাউন তল্লাশি করলেই মিলতে পারে পিঁয়াজ--এমনটাই ধারণা স্থানীয়দের।

১০ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে পুরাণবাজার মসজিদ পট্টিতে থাকা আদা, পিঁয়াজ, আলু, রসুনের পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানই পিঁয়াজশূন্য। আদা, রসুন থাকলেও নেই কাঙ্ক্ষিত পিঁয়াজ। জানতে চাইলে দোকান মালিক বা কর্মচারীগণ উত্তর দেন, আমরা গতকালকেই অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর শনিবার পিঁয়াজ যা ছিল বিক্রি করে দিয়েছি। কথাটা শুনে অবাক হলেও বলার কিছু ছিল না। তবে মসজিদ পট্টির পাইকারী পিঁয়াজের আড়ত বিছমিল্লাহ ট্রেডার্সে গিয়ে দেখা মিলল ২০ থেকে ২৫ বস্তা পিঁয়াজ সারি সারি করে রাখা আছে। দাম জানতেই উত্তর দিল পিঁয়াজ নেই। যা ছিল সকালেই বিক্রি করে দিয়েছি। কী দামে বিক্রি করেছেন জানতে চাইলে উত্তর এলো ১৫০-১৬০ টাকা দরে। এরই মধ্যে এক পাইকার পিঁয়াজের দাম জানতে চাইলে সে আর সরাসরি তাৎক্ষণিক দাম বলতে চেষ্টা করেনি। বোঝা গেলো সাংবাদিকের উপস্থিতির জন্যেই তার এই নীরবতা। পুরাণবাজারের পাইকারী পিঁয়াজ ব্যবসায়ী (ফার্স্ট পার্টি) আব্দুর রহমান, সামছু মোল্লা, মোস্তফা মোল্লা, লোকমান বেপারী এরাই গাড়ি ভর্তি পিঁয়াজ ভোমরা বন্দর থেকে বাজারে আমদানিপূর্বক পুরাণবাজারের বিভিন্ন পাইকারী দোকানসহ জেলার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকেন। পূর্বেও যখন পিঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছিল, তখনও এদের প্রতিষ্ঠান বর্তমান সময়ের মতো এতোটা পিঁয়াজবিহীন হতে দেখা যায়নি। গতকালকের চিত্র দেখে অনেক পাইকারই হতাশা প্রকাশ করেন।

জানা যায়, গতকাল পাইকারি বাজারে যে যেমনভাবে পেরেছে তেমনিভাবে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে পিঁয়াজ বিক্রি করলেও প্রশাসন বা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ভয়ে কেউই অধিক দামে বিক্রির প্রমাণ রাখেননি। অথচ এই পিঁয়াজই গত দুদিন আগে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পিঁয়াজ আমদানি বন্ধের সংবাদে তারা আর দেরি করেনি দাম বাড়াতে। শুক্রবার একদিন সাপ্তাহিক দোকান বন্ধ থাকায় শনিবার থেকেই তা বেড়ে গিয়ে ডাবল দামে বিক্রি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। পাইকারি পিঁয়াজ ব্যবসায়ী সামছু মোল্লা ও মোস্তফা মোল্লার কাছ থেকে বাজারে পিঁয়াজ না থাকার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ভোমরা বন্দরেই গতকাল থেকে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। সেই পিঁয়াজ চাঁদপুরে আমদানি করলে প্রায় দুইশ’ টাকা হাতে পড়বে। তা আমদানি করে কত করে বিক্রি করবো। অথচ বিগত দিনের কথা চিন্তা করলে দেখা যায়, তাদের কাছে সব সময়ই কিছু না কিছু পিঁয়াজ স্টক থাকে। কিন্তু এবারই একেবারে উল্টো চিত্র দেখে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন। পিঁয়াজের এই তেলেসমতিজনিত মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশা ব্যক্ত করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই পিঁয়াজ ব্যবসায়ীরা এই কাজ করেছেন। যেখানে পিঁয়াজের বাজার ছিলো ৯০ থেকে ১০০ টাকা, সেখানে তাদের হাতে জমানো পিঁয়াজ তারা কী করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করেন। এদের এই বিচার কে করবে ? তাদের বিচার হওয়া উচিত। তারা এজন্যে প্রশাসনের সুদৃষ্টিও কামনা করেন। পিঁয়াজের হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে স্থানীয় ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মানিক মাঝি, ফজল প্রধানীয়া, মাইনুদ্দিন বেপারী, সোহেল হোসেন হজু বেপারী, করিম শেখসহ ক’জনের সাথে গত ৯ ডিসেম্বর শনিবার পাইকারি পিঁয়াজ ব্যবসায়ীদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় একপর্যায়ে হাতাহাতির রূপ নিলে চাঁদপুর চেম্বার নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রাজীব শর্মা, ব্যবসায়িক নেতা পরেশ মালাকার, গোপাল সাহা, নাজমুল আলম পাটোয়ারী, আব্দুর রব শানু, লিয়াকত পাটোয়ারীসহ চেম্বার নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। তারা ১০ টাকা ব্যবসায় পিঁয়াজ বিক্রি করার জন্যে পিঁয়াজ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানান। কিন্তু পিঁয়াজ ব্যবসায়ীগণ তাদের সেই কথা রাখেননি। বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে গতকাল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মার্কেটিং অফিসারকে বাজার মনিটরিং করতে দেখা গেলেও যাদের কাছে পিঁয়াজ ছিল তারা অধিক দামেই তা বিক্রি করেছেন বলে অনেক ক্রেতা সাধারণ জানান।

উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে পিঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এখনো দেশের চাহিদা মেটাতে কিছু পিঁয়াজ আমদানি করতে হয়। সে অনুযায়ী ভারত থেকে এই পিঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। রপ্তানি চুক্তি অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টনে ৮০০ ডলার বেশি দিয়েই দেশে পিঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছিল। যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পিঁয়াজের সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে গত ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার নিত্য প্রয়োজনীয় পিঁয়াজ রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড। সংস্থাটি রপ্তানি নীতি সংশোধন করে এই নিষেধাজ্ঞা প্রদান করায় দেশের বাজারে আবারও পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পায়। তবে হাতে থাকা আমদানিকৃত পিঁয়াজ একদিনের ব্যবধানে ডাবল দামে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতা সাধারণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আগামী ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ থাকলেও দেশের বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়বে না বলে অনেক পিঁয়াজ ব্যবসায়ী মনে করেন। তারা বলেন, ইতিমধ্যেই দেশের উৎপাদিত পিঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে তা হয়তো কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দেশীয় পিঁয়াজ আমদানি হলেই পিঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা প্রকাশ করেন। এদিকে পিঁয়াজের সাথে সাথে আলুর বাজারও কিছুটা বৃদ্ধি পিঁয়েছে। পাইকারি বাজারে যে আলু ৪৫-৪৭ টাকা বিক্রি হয়েছে, গতকাল তা পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে ৫১ থেকে ৫৩ টাকা। ভোক্তা সাধারণ মনে করেন, পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং না থাকলে বাজার মূল্য আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়