প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভাবনা-৯
মুক্তিযোদ্ধা বাবার বুকে মাথা রাখতে পেরেছি-এটি কত গর্বের তা কেবল অনুমেয়
-------জিল্লুর রহমান জুয়েল
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে উদিত হয়েছিল বিজয়-রবি। রক্তনদীর উজান বেয়ে যে বিজয় আমরা পেয়েছি, সে বিজয় দিবস আমাদের জাতির সামনে খুলে দিয়েছে অমিত সম্ভাবনার স্বর্ণদুয়ার। চরম শোক ও পরম গৌরবে মুক্তিযুদ্ধের পর সেই ডিসেম্বরে আমরা এটাই প্রমাণ করেছিলাম যে, জাতি হিসেবে আমরা মোটেই ছোট কিংবা দুর্বল নই। এই খোলা আকাশের নিচে মাটির উপরে আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার মতো স্বাধীনতা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর সেই গর্বিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নিজেকে নিয়ে ভাবনার চাইতেও দেশ ও দেশের মানুষকে জড়িয়ে ভাবনার শেষ নেই। এমনি একজন হাইমচর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মান্নানের সন্তান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ হাইমচর উপজেলা কমান্ডের আহ্বায়ক জিল্লুর রমান জুয়েল। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের মতো তার ভাবনারও কোনো কমতি নেই। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ভাবনা শিরোনামের সাক্ষাৎকারে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিস ৫১ পুরানা পল্টন, ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি মিরপুর সেক্টরে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভার প্রচারক ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাইমচর উপজেলায় মুজিব বাহিনী গঠন করেন। আমার বাবা ফরিদগঞ্জের খেজুরিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেন, স্বাধীনতাহীন জীবন কোনো জীবন নয়। আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি। সেই স্বাধীন সুন্দর রাষ্ট্রটি আমাদের বাংলাদেশ। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ দেশের সূর্য সন্তান, তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নসারথি হয়ে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন বলেই আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে অন্যতম। কেন না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর কখনোই মুক্তিযুদ্ধ দেখতে পাবে না। ছুঁয়ে দেখতে পারবে না বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নসারথিদের একজনকেও। যিনি দেশকে রক্ষা করার জন্যে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, আমি তাকে দেখতে পেরেছি, ছুঁতে পেরেছি, তার বুকে মাথা রাখতে পেরেছি। এটি কতো বড় সৌভাগ্যের, কতো বড় গর্বের তা কেবল অনুমেয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ে তোলা। তাঁর নেতৃত্বে হানাদারদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার চেতনা ছিল। আজকের প্রজন্মকে সেই চেতনায় দেশ গড়তে হবে। দুর্নীতি মুক্ত দেশ গঠন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দুর্নীতির বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত করতে হবে। জানাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, বীরদের রক্তের কথা, স্বপ্নের কথা। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক চেতনা তরুণ সমাজের কাছে পৌঁছাতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ ইতিহাসের বাইরে সপ্তাহে একদিন করে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রতিটি শ্রেণীতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তবেই আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে। এদের হাত ধরে এদেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত, হিংসামুক্ত, বৈষম্যহীন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রূপে গড়ে উঠবে।