বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করলো মডেল থানা পুলিশ
মিজানুর রহমান ॥

চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের সাম্প্রতিক কিছু সাফল্যের সাথে যুক্ত হলো আরো একটি সাফল্য। এ থানার পুলিশ রিকশাচালকের ক্লুলেস খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হলো। চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নস্থ রঘুনাথপুর গ্রামের রাস্তার পাশের নালায় পড়েছিলো রিকশাচালক মোঃ দুলালের (৫৩) লাশ। খবর পেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। কারা কীভাবে তাকে খুন করে ফেলে রেখে যায়--এ সংক্রান্ত কোনো সূত্রই ছিলো না পুলিশের হাতে। তারপরও এই খুনের মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। খুনের চৌদ্দদিনের মাথায় পুলিশ চাঁদপুর লঞ্চঘাটের একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ শরীফ মাঝি (২৪) (পিতা হাবিবুর রহমান মাঝি, সাং চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবিন্দিয়া রাজারহাট লতিফ মাঝির বাড়ি) নামে খুনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাড়ির পুকুর থেকে খুন হওয়া দুলালের ছিনতাইকৃত ব্যাটারিচালিত রিকশার বিভিন্ন খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে রিকশার ব্যাটারিগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়। তিনি বলেন, এ খুনের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিঃ রাত ১১টায় চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে ভিকটিম মোঃ দুলাল (৫৩)কে বয়স্ক দেখে তার ব্যাটারিচালিত রিকশাটি চুরি করার উদ্দেশ্যে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জনকল্যাণ বাজারে যাবার জন্যে যাত্রী হিসেবে রিকশাটি ভাড়া করে শরীফ মাঝি। শরীফ গন্তব্যে রওনার পূর্বে মসজিদের পাশ হতে একটি ইট নিয়ে রিকশায় উঠে। চালক রিকশা চালিয়ে রঘুনাথপুর ইয়াকুব বেপারী বাড়ির নির্জনস্থানে পৌঁছলে শরীফ চালক দুলালকে রিকশা থামাতে বলে এবং সাথে সাথে ওই ইটটি দিয়ে তাকে পিছন থেকে মাথায় দুইবার আঘাত করলে সে রিকশা থেকে পড়ে যায়। তখন ঘাতক শরীফ রিকশা হতে নেমে চালকের মাথায় আরো দুইবার আঘাত করে মাথা থেতলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং পার্শ্ববর্তী জলাশয়ে মরদেহটি ফেলে নিজেই রিকশা চালিয়ে জনকল্যাণ বাজার হয়ে তার গ্রামের বাড়ি গোবিন্দিয়া রাজারহাটে চলে যায়। পরবর্তীতে রিকশাটি বাড়ির বাগানে রেখে তার বসতঘরে খাওয়া-দাওয়া করে। পরে রিকশা খোলার যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যাটারিসহ রিকশাটি আলাদা আলাদা খুলে ফেলে। শরীফ এক পর্যায় রিকশার ব্যাটারি বাগানের ভেতর লুকিয়ে রাখে এবং রিকশার আলাদা করা অংশগুলো বাড়ির পুকুরে ফেলে রাখে। মূলত রিকশা ছিনতাইয়ের জন্যে এ খুনটি করেছে সে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিখিতভাবে জানান, ঘটনার পর খুন হওয়া রিকশাচালক দুলালের স্ত্রী অজ্ঞাতনামাকে আসামী করে গত ১৩/০৯/২০২৩ খ্রিঃ রাত অনুমান ১০টা হতে ১৪/০৯/২০২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৭টার মধ্যবর্তী যে কোনো সময় চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মোঃ দুলাল (৫৩) (পিতা-মৃত আব্দুর রশিদ হাওলাদার, মাতা-মৃত ছালেহা খাতুন, সাং-ওয়াপদা, বেড়িবাঁধ, জাহানপুর, থানা : চরফ্যাশন, জেলা : ভোলা, বর্তমানে দক্ষিণ গুণরাজদীতে বাগাদী রোড, সাতআনী পাটওয়ারী বাড়ি সড়কস্থ জনৈক কাওসারের ভাড়াটিয়া, ১১নং পৌর ওয়ার্ড, থানা ও জেলা : চাঁদপুর)-এর খুনের ঘটনায় উল্লেখিত অভিযোগের ভিত্তিতে চাঁদপুর মডেল থানার এফআইআর নং-৩৭, তারিখণ্ড১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩; জিআর নং-৫৯৯, তারিখ : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩; ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড, ১৮৬০ রুজু করা হয়।

এরই প্রেক্ষিতে এ খুনের মামলায় খুনিকে চিহ্নিত এবং ধরার জন্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশে একাধিক টিম মাঠে কাজ শুরু করে। অতঃপর পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামী শরীফ মাঝিকে ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৮টায় সদর উপজেলাধীন বাগাদী ইউনিয়নের ইচলী এলাকার জনৈক ইয়াছিনের বেকারি হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজীব শর্মা বলেন, রিকশা চালানোর টাকাতেই সংসার চালাতেন মোঃ দুলাল। তার বাবার নাম মৃত রশিদ হাওলাদার। তিনি শহরের গুণরাজদীতে জনৈক কাওসারের বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার পরিবারে আছে স্ত্রী কোহিনুর বেগম, এক ছেলে নাহিদ এবং সুরমা, পারভীন, সাদিয়া ও সোনিয়া নামে আরো ৪ কন্যাসন্তান। এছাড়া মুক্তা নামে আরো এক কন্যা সন্তান মারা গেছে। খুনিকে শনাক্ত করতে পারায় এই পরিবারের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।

প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইয়াসির আরাফাত, ডিআইও-১ মনিরুল ইসলাম, চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মুহসীন আলম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিব শর্মাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়