প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সংশ্লিষ্ট সদস্যদের উপস্থিতিতে চাঁদপুর পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালন প্রকল্পের আওতায় নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)-এর সভা গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকেল ৪টায় চাঁদপুর পৌর পাঠাগারে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল।
সভায় অতিবৃষ্টিতে রাস্তা সমূহের ক্ষতিসাধন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তা সংস্কারে কাজের গুণগতমান বজায় রাখা, ফুটপাট দখলমুক্ত রাখা, শহরের যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সুন্দর পরিবেশে টিলসিসির সভা সম্পন্নকরণ, পৌর এলাকার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণসহ তা নিরসনে করণীয় বিষয়ের আলোকে টিএলসিসির সদস্যগণ তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি উন্নয়নমূলক ভালো কাজের জন্যে তারা মেয়রের প্রশংসাও করেন।
পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাপ্রধানের বক্তব্যে বলেন, পৌর এলাকার সমস্যা নিরসনসহ বাস্তবতার আলোকে পৌর উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করার জন্যেই টিএলসিসির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যদি সমস্যা চিহ্নিত না করে প্রশংসাই করা হয় তাহলে সমস্যাবহুল কাজগুলো নজরের বাইরে চলে যাবে। তাই সভা থেকেই পৌর এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে। তিনি অর্থনৈতিক মন্দাভাবের মধ্যেও কোনো প্রকার ট্যাক্স-খাজনা না বাড়িয়ে পূর্বের বাজেটের চেয়ে এ বছর দ্বিগুণ পরিমাণ বাজেট পেশ করতে পেরেছেন, যা পৌরসভার জন্যে একটি ইতিবাচক দিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি কল্যাণমুখী বাজেট পেশ করতে পারায় পৌর পরিষদকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং তা বাস্তবায়নে পৌরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘ বছরের প্রাণের দাবি চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ চাঁদপুরের উন্নয়নের রূপকার শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশপূর্বক চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে থেকে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁদের উভয়ের জন্যে ধন্যবাদ প্রস্তাবও আনেন।
যানজট নিরসনে মেয়র বলেন, চাইলে তিনদিনেই রাস্তা ও ফুটপাত থেকে রিকশা ভ্যান উচ্ছেদ করা যায়। কিন্তু মানুষ সেটা হয়তো ভালো চোখে দেখবে না। তিনি সড়ক দখল ও যানজট নিরসনে জনমত সৃষ্টিতে পত্রিকায় নিয়মিত লেখার জন্যে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইলিশ চত্বর থেকে হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তার দু পাশ প্রশস্তকরণসহ ফুটপাত নির্মাণ, পৌর ৯নং ওয়ার্ডের শহীদ মফিজ সড়কের উন্নয়ন, পুরাণবাজার বাকালী পট্টি, মাছ বাজার রাস্তার সংস্কারসহ শহরের বেশ ক’টি রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও সংস্কার এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে বলে জানান। যা বৃষ্টির কারণে সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার কাজে হাত দেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ বহুতল ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি অপসারণের প্রয়োজনীয় পাইপ না থাকায় রাস্তার উপর ওইসব পানি পড়ে গিয়ে রাস্তার বহুল ক্ষতি সাধিত হয়। তিনি এ ব্যাপারে বহুতল ভবনের মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাদেরকে চিঠি দিতে নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেন এবং মশার উপদ্রব থেকে রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর বা খালগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্যে মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মালিকপক্ষ সহসাই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সভাকে জানান। তিনি রোগীদের সুবিধার্থে চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে একটি ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও ইচ্ছে পোষণ করেন। যাতে রোগীরা প্রতিটি ওয়ার্ডে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ পাবেন ভালোভাবে। এছাড়াও হাসপাতালে রোগীদের সুবিধার্থে চাঁদপুর পৌর পরিষদ ৪টি কেবিন অত্যাধুনিক করা সহ আরো কিছু উন্নয়নে সহযোগিতা করে আসছেন বলে সভাকে অবহিত করেন।
টিএলসিসির পুরানো সদস্য চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত বলেন, শহরে প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে যানজট, যা নিরসনে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা দূর হচ্ছে না। যদি যানজট নিরসন করা না যায়, তাহলে পৌর পরিষদের উন্নয়নের সুফল পুরোপুরি প্রতিফলিত হবে না। তিনি পৌর পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজের তদারকিতে টিএলসিসির সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। সিএনজি অটোরিকশা ও অটোবাইক ড্রাইভারদের বেপরোয়া চলাচল, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ভ্যানগাড়ি, হকারদের জনবহুল স্থানের রাস্তার দু’পাশ দখল করে থাকা যানজটের উল্লেখযোগ্য কারণ বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় বক্তব্য রাখেন অ্যাডঃ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, রাধা গোবিন্দ গোপ, ডাঃ এস. এম. মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফ চৌধুরী, অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, রূপালী চম্পক, নাজমা আক্তার প্রমুখ।
সভা সঞ্চালনা করেন পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন হাওলাদার। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন পৌর জামে মসজিদের ইমাম জাকির হোসেন। পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন পৌর উন্নয়ন কর্মকর্তা চন্দ্রনাথ ঘোষ চন্দন। সভায় পৌর সচিব আবুল কালাম ভূঁঞা, পৌর প্রকৌশলী এএইচএম শামছুদ্দোহাসহ পৌর কাউন্সিলর ও পৌর পরিষদের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রতি ৩ মাস পর পর পৌর মেয়রের সভাপতিত্বে টিএলসিসির সভা অনুষ্ঠিত হয়।