বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সরকার হটানোর জন্য নয়, এ আন্দোলন আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন
স্টাফ রিপোর্টার ॥

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার চাঁদপুর শহরস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল ৬টা থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ অনশনস্থলে আসতে থাকেন এবং অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিকেল ৩টায় শুরু হয় অনশন কর্মসূচির মূল পর্ব গণসমাবেশ। গণসমাবেশ সফল করতে উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও শহর পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। নেতৃবৃন্দের আগমন ও শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশস্থল। এ যাবৎ কালের সর্ববৃহৎ সমাবেশে রূপ নেয় এই গণঅনশন ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠান। নেতা-কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ।

এ কেমন নীতি ভাই, ধর্ম আছে সম্প্রীতি নাই, ক্ষমা করে দিও মা, জন্ম যেথায় আজন্ম পাপ, ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র চাই, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, মানবাধিকারের সংগ্রাম চলছেই চলবে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, চিরতরে বন্ধসহ বিভিন্ন শ্লোগানের মধ্য দিয়ে আয়োজিত এ গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী।

ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রনজিত রায় চৌধুরী ও সিনিয়র সহ-সভাপতি তপন সরকারের যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সন্তোষ চন্দ্র দাস, জেলা পূজাউদযাপন পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক প্রফেসর রনজিৎ কুমার বণিক, সাবেক সদস্য সচিব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ, বিশিষ্ট সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা অজিত কুমার সাহা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃনাল সাহা, জেলা ঐক্য পরিষদ নেতা সুশিল সাহা, নির্মল পাল, জয়রাম রায়, প্রশান্ত সাহা, মৃদুলা সাহা, দুলাল দাস, গৌতম রায় চৌধুরী, নারায়ণ ভৌমিক, সদর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদার, চাঁদপুর পৌর ঐক্য পরিষদের সভাপতি রিপন সাহা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ ভাস্কর চন্দ্র দাস, জেলা হিন্দু মহাজোট নেত্রী তপতী কর, উত্তম কুমার গোস্বামী, কচুয়া উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডাঃ প্রাণধর দেব, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ পোদ্দার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার মজুমদার, শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতা হরিপদ দাস, হাজীগঞ্জ উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক স্বপন পাল, সাধারণ সম্পাদক সত্যব্রত ভদ্র মিঠুন, মতলব উত্তর ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার দাস, মতলব দক্ষিণ ঐক্য পরিষদের সভাপতি গণেশ ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক বাদল নন্দী, মতলব দক্ষিণ পৌরসভার কাউন্সিলর পিন্টু সাহা, হাইমচর উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অজয় কৃষ্ণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক রাজীব মাঝি, ত্রিপুরা জাতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কর্ণরাজ ত্রিপুরা, জেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি অমরেশ দত্ত জয়, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার দাস, জেলা ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি অপু বিশ্বাসসহ বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, যারা অসাম্প্রদায়িকতাকে বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করে না, গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না, মানুষের মূল্যবোধকে সম্মান করে না, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশ করে সামাজে অশান্তি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করে, তারা আমাদের যত আপনই হোক না কেনো তাদেরকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা সকল সময়ই মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে কাজ করে আসছি। আজকের এই গণঅনশন ও জনসমাবেশ সরকার পতনের আন্দোলন নয়, আমাদের প্রাণের দাবি আদায়ের আন্দোলন। আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার ২০১৮ সালে যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করে এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরকে সম্মানিত করবেন। বক্তারা আরো বলেন, আজ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ন্যায় সঙ্গত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু এমনতো কথা ছিলো না। এদেশ আমার আপনার সকলের। তাই সকলের জন্যেই আইনের সমপ্রয়োগ হওয়া প্রয়োজন। তাহলে আমরা কেনো বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা বিশ্বনন্দিত নেত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের দাবি পূরণে আন্তরিক হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বক্তারা অনতিবিলম্বে তাদের দাবি পূরণের জন্যে শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান। সমাবেশে গণসংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী সুদীপ্ত কর তন্ময়, পার্বতী চক্রবর্তী, সুপক রায়, জয়ন্ত দে প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা পর্যায়ে এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাঁদপুর জেলা ঐক্য পরিষদের আয়োজনে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন ও বিকেলে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং সমাবেশ শেষে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। আওয়ামী সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঐক্য পরিষদের দাবিসমূহের মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনশন ভঙ্গ করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক তপন সরকার এবং অনশনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়