বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

হরিজন সম্প্রদায়ের জন্যে তৈরি হচ্ছে নতুন ২টি ভবন, থাকতে পারবে ৮৮ পরিবার
স্টাফ রিপোর্টার ॥

চাঁদপুর শহরের তিনটি হরিজন কলোনীর মধ্যে এই প্রথম একটি কলোনীতে নির্মিত হচ্ছে ৫তলা বিশিষ্ট দুটি আবাসিক ভবন। সেটি হচ্ছে শহরের বাসস্ট্যান্ড স্বর্ণখোলা রোড এলাকায়। এই ভবনে স্বর্ণখোলা কলোনীর হরিজন সম্প্রদায়ের ৮৮ পরিবার থাকতে পারবে। যাদেরকে এই বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করা হবে। ওই জায়গা খালি করা সাপেক্ষে ওখানে আরও ২টি বিল্ডিং করার কাজও পরবর্তীতে হাতে নেয়া হবে বললেন ইউএনডিপির চাঁদপুরের কর্মকর্তা। অন্যদিকে পৌর মেয়র বলেন, এখন ফ্ল্যাট ভবন নির্মাণ হলেও সেখানে হরিজনদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অন্যান্য নাগরিক সুবিধা হিসেবে কমিউনিটি সেন্টার ও বাচ্চাদের জন্যে বিনোদনমুখী পার্কসহ অন্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।

সরজমিন দেখা গেছে, চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্বর্ণখোলায় ভবন দুটির নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। চাঁদপুর পৌরসভা ও ইউএনডিপি সূত্রে জানা যায়, শহরের ৯নং ওয়ার্ডের স্বর্ণখোলার হরিজন সম্প্রদায়ের জন্যে ৫ তলা বিশিষ্ট ২টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ভবন তৈরিতে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করছে শেখ হাসিনা সরকার। ইউএনডিপি, এলজিইডি ও চাঁদপুর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন এই ভবন দুটির কাজ সমাপ্ত করতে সর্বমোট ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। আর এতে করে খুশি শহরের পরিছন্নকর্মী হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন।

এ বিষয়ে হরিজন সম্প্রদায়ের আকাশ, বিপ্লব, খোকনসহ একাধিক হরিজন বলেন, নতুন ভবন হওয়ায় আমরা খুব খুশি। তবে আমাদের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে একটি এক কক্ষের ফ্ল্যাট। তার মধ্যেই রান্নাঘর ও টয়লেট থাকবে। যা অনেকটা ছোট মনে হচ্ছে। তবে ধর্মীয় দিক ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার দিকটি মাথায় রেখে আমাদের জন্যে ভবনগুলোতে যদি ২টি কক্ষ, রান্নাঘর, টয়লেট সুবিধা দেয়া হয় তাহলে আমাদের স্বস্তি অর্জনে কিছুটা ভালো হতো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর শহরের ইউএনডিপির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের ম্যানেজার মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন, নারীর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে হরিজন সম্প্রদায়ে স্বল্প ব্যয়ে আবাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই ভবন দুটি করা হচ্ছে। যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট। এখানে হরিজনদের ফাঁকা স্থানে ২টি বিল্ডিংয়ে ৮৮টি ফ্লাটে ৮৮টি পরিবারের মাঝে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাদেরকে এই বিল্ডিং দুটিতে স্থানান্তর করা হবে তাদের বর্তমান জায়গা খালি করা সাপেক্ষে আরও ২টি বিল্ডিং করার কাজ পরবর্তীতে হাতে নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশন হতে এখানে ইউএনডিপি কর্তৃক অর্থায়ন করা হলেও এই ভবন দুটির বর্ধিত কাজসহ মোট প্রায় ১০ কোটি টাকার পুরোটাই এ সরকার দিচ্ছে। আমরা তাদের বসবাসের বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে রুমের সাইজ ১৩ ফুট বাই ১০ ফিট করছি। প্রতিটি ভবনের নচ তলায় বিয়ের জন্য কমন স্পেস, ২ তলায় ১২টি পরিবার ও ৩ তলায় ৮টি পরিবার রাখার পরিকল্পনা করছি। এছাড়া ৪র্থ ও ৫ম তলায় আমরা রি-এরেঞ্জ করার সুযোগ থাকলে সেটা অবশ্যই করবো। এমনকি তাদের মৃত্যুর পর মরদেহ নামানোর জন্য একটা কমন স্পেসের ব্যবস্থা করবো।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্যে জনবান্ধব নানামুখী উদ্যোগের মধ্যে একটি হচ্ছে চাঁদপুর পৌরসভার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য আবাসন প্রকল্প। এটি এলআইইউপিসি প্রজেক্টের মাধ্যমে হলেও অর্থায়ন করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৮৮টি ফ্ল্যাটে সেখানে যারা থাকবেন তাদের ভালো ও উন্নত পরিবেশে স্থানান্তর করতে সক্ষম হবো। সারাদেশের মধ্যে অন্য পৌরসভাগুলোর আগে চাঁদপুর পৌরসভা এই ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করবে আশা করছি। এতে করে পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বহুতল ভবন হরিজনদের জন্যে আমরা নির্মাণের সুযোগ পাবো। সেখানে পরিচ্ছন্নকর্মীদের সবাইকেই আমরা ফ্ল্যাট দিতে পারবো।

নকশা ও ফ্ল্যাটের ছোট আকার প্রসঙ্গে পৌর মেয়র বলেন, ভবন তৈরির এই নকশাটা পৌরসভা করেনি বরং প্রজেক্টের মাধ্যমে তৈরি করা। তারা একান্নবর্তী পরিবারের মতো যেভাবে ছিলেন, ফ্ল্যাটে থাকবেন আলাদা আলাদাভাবে। যেটি তারা বুঝতে ভুল করলেও পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি বুঝানো হয়েছে। মূলত সবাই মিলে একটা ফ্ল্যাট নয় বরং তাদের বাবার জন্যে আলাদা এবং সন্তানদের জন্যে আলাদা ফ্ল্যাট থাকবে। আর এই ফ্ল্যাটগুলো সরাসরি তাদের নামেই আমরা বরাদ্দ দিয়ে দিবো। আমরা প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি, যাতে পরের প্রজেক্টের ফ্ল্যাটগুলো আরেকটু বড় করা হয়। তবে আমরা তাদের থাকার পরিবেশটি আরও উন্নত করে দিতে অর্থাৎ তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আরও যে নাগরিক সুবিধা (যেমন কমিউনিটি সেন্টার, বাচ্চাদের জন্য পার্ক)সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিবো।

উল্লেখ্য, গেলো ২০২২ সালে আগস্ট মাসে এ ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প চাঁদপুর এসে পরিদর্শন করেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এইচই রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও তার প্রতিনিধিদল। তখন ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেছিলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে হরিজনদেরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি, পড়াশোনা, আত্মকর্মসংস্থান বিষয়ে সচেতন করতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

এদিকে সচেতন মহলের মতে, হরিজনরা আমাদের সমাজেরই অংশ। চাঁদপুর শহরের স্বর্ণখোলা কলোনির জন্য দুটি আবাসন ফ্ল্যাট ভবন হলেও রেলওয়ে বড়স্টেশন এবং পুরাণবাজার হরিজন পল্লীতে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের পরিবারগুলো ঘনবসতির মধ্যে এখনো বসবাস করে আসছে। এই দুটি কলোনীতেও তাদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ করা দরকার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়