প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পুরাণবাজার হরিসভা রোডস্থ প্রমত্তা মেঘনার পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা দৃষ্টিনন্দন শ্রীশ্রী রাধামুরারি মোহন জিউড় মন্দিরে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে চৌষাট্টি মহান্তের ভোগ আরাধনা। এ উপলক্ষে আয়োজিত দুদিনব্যাপী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গতকাল ৩০ ডিসেম্বর শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় ও শেষদিন।
এদিন সকাল ৮টায় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় দীক্ষা দান, শ্রীশ্রী গুরু পূজা, দুপুর ১২টায় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীশ্রী রাধা মুরারি মোহন ও জগন্নাথদেব, বলদেব, শুভদ্রা মহারাণীর রাজবেশ দর্শন। দুপুর সাড়ে ১২টায় চৌষাট্টি মহান্তের ভোগ দর্শন, দুপুর আড়াইটায় বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ। চৌষাট্টি মহান্তের ভোগরাগ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন ভারতবর্ষের শ্রীধাম বৃন্দাবন থেকে আগত শ্রীশ্রী রাধা মুরারিমোহন কুঞ্জের অধ্যক্ষ শ্রীল অষ্টোত্তরশত শ্যাম সুন্দর দাস বাবাজী মহারাজ।
তিনি মাঙ্গলিক কথা বলতে গিয়ে বলেন, আমরা সকলেই ভগবানের দাস, ভগবান কৃপা ছাড়া আমাদের কিছুই করা সম্ভব নয়। ভগবান আমাদের সংসারের একজন অভিভাবক। অভিভাবক মেনেই ভগবানকে আমাদের নিত্য সেবা পূজা করতে হবে। ভগবান কৃপা না হলে আমাদের মানসিক শান্তি লাভ হবে না।
তিনি সকলকে ভগবান প্রদর্শিত পথে চলার আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, মায়াময় এ পৃথিবীতে আমরা কেউই স্থায়ী নয়, আর অস্থায়ী পৃথিবীতেই আমরা আমাদের সুখ, শান্তি, ঐশ্বর্য্য খুঁজি। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আমরা কি আমাদের কাঙ্ক্ষিত সুখ, শান্তি লাভ করতে পারছি? সুখ, শান্তি পেতে হলে আমাদেরকে ন্যায় পথে চলতে হবে, ঈশ্বর চিন্তা করতে হবে, ঈশ্বরের সেবা পূজা করতে হবে। যারা ঈশ্বর চিন্তা করেন, ঈশ্বরকে নিত্য সেবা পূজা করেন, তাদের মনে কোনো অশান্তি নেই, তারা ঈশ্বরের কৃপায় পারমার্থিক সুখ ভোগ করবে এটাই বাস্তবতা। অত্যন্ত ব্যয়বহুল চৌষট্টি মহন্তের ভোগ-আরাধনাকে কেন্দ্র করে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল থেকেই ভক্ত নর-নারী মন্দির প্রাঙ্গণে ভিড় করতে থাকেন, তাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মন্দির প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। ভক্তদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে এক সময় তারা মন্দির সম্মুখস্থ রাস্তাসহ নদী সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধের উপর জড়ো হতে থাকেন, ভক্তদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মন্দির এলাকা মিলনমেলায় পরিণত হয়। তাদের পরিবেশিত হরিনাম কীর্তন ও কৃষ্ণকথায় মন্দিরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সকলেই কৃষ্ণ কথায় বিমোহিত হন। চৌষট্টি মহান্তের ভোগরাগ শেষে হাজারো ভক্তবৃন্দ সুশৃঙ্খলভাবে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল ভক্তদের প্রাণভরা উচ্ছ্বাস ও দৃষ্টিনন্দন।
অনুষ্ঠানে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডঃ বিনয় ভূষণ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী পিপি, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রাধা গোবিন্দ গোপ, সদর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বাসুদেব মজুমদারসহ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দেরও ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ায় উপস্থিত সকলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশপূর্বক মন্দির উন্নয়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন মন্দির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রোটারিয়ান রিপন সাহা, সাধারণ সম্পাদক সহদেব বর্মন, কোষাধ্যক্ষ সুমন দেবনাথসহ মন্দির পরিচালনা পর্ষদ।
উল্লেখ্য, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মুকুটমনি পরম পূজ্যপাদ গুরুদেব ৮৪ ক্রোশ ব্রজমণ্ডলের চারি সম্প্রদায়ের শ্রী মহান্ত, কুম্ভমেলার মহামণ্ডলেশ্বর এবং শ্রীশ্রী রাধামুরারিমোহন কুঞ্জ, শ্রীধাম বৃন্দাবনের ভূতপূর্ব মহান্ত শ্রীল অষ্ঠোত্তর শত মুরারীদাস বাবাজী মহারাজ ইচ্ছানুযায়ী শ্রীশ্রী রাধামুরারি মোহন জিউড় মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। গতকাল ছিলো মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মন্দির কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় গতকালসহ ৩ বার চৌষট্টি মহান্তের ভোগ-আরাধনা অনুষ্ঠিত হয়।