প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের দুবারের সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন দেওয়ান মন্টু বলেছেন, বিএনপি একটি লেংড়া বা খোঁড়া রাজনৈতিক দল। এদের আন্দোলন আমরা মোকাবেলা করবো তো পরে। কিন্তু জনগণ এদের আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা চাই দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকুক। তারা জনগণের স্বার্থে রাজপথে গঠনমূলক রাজনীতি করবে। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজপথে অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুরসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এরা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে, জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এ ধরনের আন্দোলন এদেশের জনগণ পছন্দ করে না, তাই তাদের আন্দোলন সফল হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে স্বপ্নই থেকে যাবে।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তার দেয়া পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার পাঠকদের জন্য নি¤েœ তুলে ধরা হলো :
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি আওয়ামী লীগের যে ইউনিটের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে ইউনিটের সর্বশেষ সম্মেলন কবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
সাব্বির হোসেন : চাঁদপুর শহরের মরহুম আঃ করিম পাটোয়ারী সড়কস্থ গণি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২০০৫ সালে পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলনে আমি মোঃ সাব্বির হোসেন মন্টু দেওয়ান দ্বিতীয়বারের মতো পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হই। সে পদে আজও বহাল আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কতো বছর পর পর একটি শাখা/ইউনিটের সম্মেলন করতে হয়?
সাব্বির হোসেন : আমাদের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বলা রয়েছে, ৩ বছর পর পর প্রতিটি ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু গঠনতন্ত্রের লেখা তো কাগজে রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠন চললে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হতো, সংগঠন উজ্জীবিত এবং চাঙ্গা থাকতো। অন্যদিকে অবশ্য নানা প্রতিকূলতার কারণেও অনেক সময় সম্মেলন করতে বিলম্ব হয়। তবে আশা করছি, খুব শীঘ্রই চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার ইউনিটের সম্মেলন আয়োজনে কী কী বাধা আছে বলে মনে করেন?
সাব্বির হোসেন : চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের অধীনস্থ ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্যে আমরা সকল ইউনিটের সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছি। ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র ১৪নং ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। আমি মনে করি, ১৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১টি ওয়ার্ডের সম্মেলন না হলেও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা যায়। তাই পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্যে সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কেনো সম্মেলন করা হচ্ছে না এই বিষয়টি একমাত্র জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ ভালো বলতে পারবেন। আমি চাই, খুব শীঘ্রই চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করতে প্রতি ওয়ার্ড পর্যায়ে দলকে গতিশীল করে প্রস্তুত রাখতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
সাব্বির হোসেন : বিএনপি এদেশের রাজনীতিতে একটি লেংড়া বা খোড়া রাজনৈতিক দল। এদের আন্দোলনের জন্যে আওয়ামী পরিবার উদ্বিগ্নতো দূরের কথা, মোটেও মাথা ঘামানোর সময় নেই। কারণ আমাদের দেশের জনগণ এখন সকল বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। বৈশ্বিক মহামারী কোভিড কাটিয়ে উঠতে না উঠতে ইউক্রেন রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের কারণে আজ সারাবিশ্বে এক অস্থিরতা বিরাজমান। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে। সেই হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা আমাদের নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত দূরদর্শী নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করার কারণে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বের সকল দেশ থেকে অনেক ভালো চলছে। এদেশের জনগণ সকল বিষয় সম্পর্কে অনেক সচেতন। তাই বিরোধী দলের এই আন্দোলন নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমরাও সেটি নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
সাব্বির হোসেন : আমি আগে বলেছি, বিএনপি একটি লেংড়া ও খোঁড়া রাজনৈতিক দল। এদের আন্দোলন আমরা মোকাবেলা করবো তো পরে। কিন্তু জনগণ এদের আন্দোলনকে প্রত্যাখ্যান করছে। আমরা চাই দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী রাজনৈতিক দল থাকুক। তারা জনগণের স্বার্থে রাজপথে গঠনমূলক রাজনীতি করবে। কিন্তু বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজপথে অগ্নি সন্ত্রাস, গাড়ি ভাংচুরসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে। এরা জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছে। জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। এ ধরনের আন্দোলন এদেশের জনগণ পছন্দ করে না, তাই তাদের আন্দোলন সফল হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবে স্বপ্নই থেকে যাবে। বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে এদেশের জনগণের স্বার্থে। দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ভাষার বিজয়, স্বাধীনতার বিজয়, সর্বোপরি গণতন্ত্রের বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। অতএব, বিএনপির আন্দোলন আওয়ামী লীগ রাজপথে মোকাবিলা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো ৪র্থবারের মতো দেশের সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
সাব্বির হোসেন : আমাদের নেত্রী জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং সরকার প্রধান। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে সকল প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ অনেক সুন্দরভাবে চলছে। এদেশের জনগণের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মুহূর্ত কাজ করে আজ দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজ উন্নয়নের পথে। সচেতন জনগণ দেশকে এগিয়ে নিতে বিরোধী দলকে নয়, সরকারকে সহযোগিতা করছে। অতএব, আমার দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস এদেশের জনগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে আবারো নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টানা চতুর্থতবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করবে। আওয়ামী লীগ টানা ৪র্থবারের মতো সরকার গঠন করবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
সাব্বির হোসেন : আমার বক্তব্য বিরোধীদলের প্রতি, আপনাদের অবশ্যই জানা আছে, রাজনীতি হলো জনগণের জন্য। কিন্তু আপনারা রাজপথে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী যে সকল কর্মকাণ্ড করছেন এবং যে হারে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করছেন এগুলোর কড়া জবাব দেয়া হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের দল, জনগণকে নিয়ে রাজপথে বিএনপির সকল অপকর্মের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, মোঃ সাব্বির হোসেন দেওয়ান মন্টু ১৯৮৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর ১৯৮৯ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। প্রথমে তিনি তৎকালীন চাঁদপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড বর্তমান ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য হন। এরপর তিনি চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর দুবার চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এখনো একই পদে বহাল রয়েছেন।