প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর আয়োজনে এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চাঁদপুরের সহযোগিতায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর অ্যাডভোকেসি সভা হাসপাতালের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য কাজী শাহাদাতের সভাপ্রধানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় হাসপাতালের সেবার মান আরও উত্তরোক্তর বৃদ্ধি পাবে। আজকে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) যে সমস্যাগুলো তুলে ধরেছে, তা বাস্তব এবং যৌক্তিক। তিনি বলেন, অনেকেই অভিযোগ করেছে হাসপাতালে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে। হয়তোবা তা বাথরুমের পাশে থাকায় অনেকেই তা ব্যবহার করতে চান না। তাই আমরা চিন্তা করেছি হাসপাতালের পাশে কোথাও উন্মুক্ত স্থানে আলাদাভাবে সুপেয় পানির লাইন দিয়ে দিবো।
তিনি বলেন, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানেরই একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমনটা রয়েছে এই হাসপাতালে। এই হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও সকল সুযোগ-সুবিধা আছে ১০০ শয্যার। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০০ জন রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি থাকে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের অন্তর্নিহিত অবস্থা না বুঝে কাজ করলে আমাদের ওপর অবিচার হয়ে যাবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবা প্রদানে খুবই আন্তরিক। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স এমনকি সকল পর্যায়ের কর্মীবৃন্দ হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অনেক সময় দেখা যায়, রোগী ও তাদের সাথে আসা লোকজন নার্স ও আয়াদের সাথে ন্যূনতম ভালো ব্যবহার করেন না। তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে ব্যবহার করে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রবেশমুখে যানজট থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে সমস্যা হয়। হাসপাতালে অত্যাধুনিক সেবা রয়েছে। আপনারা দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হবেন না। তিনি সেবাগ্রহীতাদের বাথরুম ব্যবহার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি করার জন্যে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও সহযোগিতা করতে হবে। হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা চালুর প্রক্রিয়া চলছে। আপনারা যেমনিভাবে হাসপাতালের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন তেমনি করে হাসপাতালের সীমাবদ্ধতা ও সেবার মানও তুলে ধরবেন এই প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন নভেম্বরে পুরো মাস ধরে হাসপাতালটিকে দালালমুক্ত করার জন্যে কাজ করবো। এক্ষেত্রে সনাকের অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ ও ইয়েস গ্রুপকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আহ্বান জানান। তিনি এ ধরনের অ্যাডভোকেসি মিটিং আয়োজন করার জন্যে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপকে ও সনাক-টিআইবিকে ধন্যবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য কাজী শাহাদাত বলেন, এক সময় হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে আমরা বেশ সোচ্চার ছিলাম। হাসপাতালের অনিয়মের উপর সিরিজ নিউজ করে চাঁদপুরের ২ জন সাংবাদিক তিনবার টিআইবি কর্তৃক জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। এখন আর সেই প্রেক্ষাপট নেই। এখন হাসপাতালের সেবার মানের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কয়েকদিন আগে আমি পুরো হাসপাতালটি ঘুরে দেখেছি। হাসপাতালের যে কী অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে কেউ নিজ চোখে না দেখলে তা বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা ও মাসব্যাপী দালালের দৌরাত্ম্যরোধে উদ্যোগ গ্রহণ করা। আশা করি, এ ব্যাপারে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। সনাক-চাঁদপুর হাসপাতালের অনিয়মের তথ্যগুলোর পাশাপাশি ভালো কাজগুলোর চিত্রও তুলে ধরে। তিনি হাসপাতালের সেবাকে রাজনীতিকরণ না করার আহ্বান জানান। আমরা লক্ষ্য করছি, হাসপাতালের সেবার মানে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তিনি বলেন, রোগীর সাথে আসা অতিরিক্ত লোকজনের কারণে হাসপাতালে জনাকীর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এই অতিরিক্ত লোকজনের নিয়ন্ত্রণ রুখতে আনসার বা আউটসোর্সিং থেকে জনবল নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। অনেকেই হাসপাতালের সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। কাজ করলে সমালোচনা হবেই। তাই বলে সেবার মানের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না। তিনি সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মোঃ মাসুদ রানার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ সাজেদা পলিন, ডাঃ গোলাম কাউসার হিমেল, বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম, সিনিয়র স্টাফ নার্স আনোয়ারা বেগম প্রমুখ। অ্যাডভোকেসি সভার পূর্বে সকাল ১০টায় কমিউনিটি অ্যাকশন মিটিং থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল-কেন্দ্রিক অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের সমন্বয়ক মাইনুল ইসলাম মানিক।
সকাল ১০টায় ১২৫নং কেজি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল-কেন্দ্রিক কমিউনিটি অ্যাকশন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেবাগ্রহীতারা হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে বেশ কিছু সুপারিশ ও হাসপাতালের বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরেন। অ্যাডভোকেসি সভায় অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের সদস্যবৃন্দ, ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপন্থিত ছিলেন।