প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে জলাশয়ে ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য কৃষক এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি উৎপাদনে সফলতা আশা করছেন। তাদের এই কাজের প্রশিক্ষণ, কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা করছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের এই পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য কৃষকরা বেড করে সবজি উৎপাদনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কৃষকরা জানান, কচুরিপানা ও বাঁশের সাহায্যে জলাশয় বা পুকুরে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি উৎপাদন করা হয়। বর্ষা মৌসুমে যখন ফসলি জমিতে পানি উঠে যায়, তখন অনেক জমি পতিত হয়ে পড়ে। কোনো ধরনের আবাদ হয় না। তখন ইচ্ছে করলে এসব জমিতে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করা যায়। পানি বাড়লেও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। তবে অধিক বৃষ্টিপাত হলে সবজির ক্ষতি হয়।
উপজেলার সোভান গ্রামের কৃষক মিজান তালুকদার বলেন, বেড করে সবজি উৎপাদনে তার আগেরও কিছু অভিজ্ঞতা আছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকেও কিছু কারিগরি পদ্ধতি শিখেছেন। ইতোমধ্যে উৎপাদিত লাউ, টমেটো, বেগুনসহ আরো কয়েক রকমের চারা বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতি ১শ’ চারা বিক্রি কেেন ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায়। চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানের লোকজনের কাছে এসব চারা বিক্রি হয়। এছাড়াও এসব চারা কিনতে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ক্রেতা আসে। প্রতিদিন ভোরে ব্যবসায়ীরা এসে চারাগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
৩নং সুবিদপুর ইউনিয়নের বড়গাঁও এলাকার আরেক কৃষক মোঃ আঃ কাদির বলেন, কৃষি অফিসের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বর্ষার শুরুতে আমরা বাড়ির পাশে ডাকাতিয়া নদীতে কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করেছি। ক’দিনের মধ্যে এসব বেড নিজেদের জমি ও পুকরে নিয়ে আসবো। আমার ১৫টি বেড আছে। আমরা পরিবারের ৩জন কাজ করি। এখন লাউ, টমেটো, বেগুনসহ বিভিন্ন চারা উৎপাদন হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে লাল শাক, কুমড়ার শাক, পুঁই শাক, পালং শাক, ধনিয়া উৎপাদন হবে। এভাবে শুকনো মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। আশা করি আমরা লাভবান হবো। তিনি আরো বলেন, এক সময় তিনি সৌদি আরব ছিলেন। সেখান থেকে এখানে তার অনেক বেশি ইনকাম হয়।
কৃষক মারুফা, পাহাদ, এমরান বলেন, বর্ষার সময় এখানে কোনো কাজ থাকে না। ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের পর আমরা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করে চারা ও সবজি উৎপাদন শুরু করেছি। ভাসমান বেড প্রক্রিয়ায় সবজি উৎপাদন করতে সার ও কীটনাশকের তেমন ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কম খরচে সবজি উৎপাদন করা যায়। তাছাড়া জৈব পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদিত হয় বিধায় ভালো দামে সবজি বিক্রি করা যায় এবং চাহিদাও বেশি।
তারা আরো বলেন, আমাদের ৩নং সুবিদপুরের বাগপুর গ্রামে প্রথমে ক’জন কৃষক এই পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন শুরু করলেও এখন অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। সে কারণে দিন দিন চাষীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ বলেন, আমাদের কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া, সুবিদপুর ও শোভান গ্রামে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ভাসমান বেডের ওপর চারা ও সবজি উৎপাদন শুরু করেছে। আমাদের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কৃষিবিদদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং ভাসমান বেড তৈরি ও সবজি উৎপাদনের জন্য কৃষকগণ যাতে সহজে সুবিধা পায় তার ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই পদ্ধতিতে কৃষক সারা বছর একাধিক সবজি উৎপাদন করবে। এতে তাদের আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।