প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
মহান সাংবাদিকতা পেশায় প্রায় ১৭ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সাংবাদিক জিসান আহমেদ নান্নু। তিনি বর্তমানে জাতীয় দৈনিক যুগান্তর, স্যাটেলাইট টেলিভিশন আনন্দ টিভিতে কচুয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে জাতীয় দৈনিক আমাদের সময়ের কচুয়া প্রতিনিধি হিসেবে প্রায় ৯ বছর (২০০৯-২০১৮) কাজ করেছেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুরের বিদায়ী জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের হাত থেকে সাপ্তাহিক শিকড় সংবাদ পত্রিকার অনুমোদন নেন। পরবর্তীতে ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিক প্রকাশের মাধ্যমে ওই পত্রিকায় সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংগঠনিক পর্যায়ে কচুয়া প্রেসক্লাবে ২০১৮-২০২০ মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মঠ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত জিসান আহমেদ নান্নু দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ কর্তৃক আয়োজিত ‘সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের ভাবনা’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়ে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন যেভাবে-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার উপজেলায় সাংবাদিকতা অতীতের সকল সময়ের চেয়ে কি গতিশীলতা পেয়েছে? গতিশীলতা পেলেও কি মান রক্ষা হচ্ছে?
জিসান আহমেদ নান্নু : প্রযুুক্তিগত সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় সাংবাদিকরা ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে। পূর্বে সাংবাদিকরা যে কলা কৌশলে সংবাদ প্রেরণ ও কার্যাদি সম্পাদন করে থাকতেন তা থেকে বেরিয়ে উন্নত সুবিধা পাচ্ছেন। বিশেষ করে ই-মেলে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক ক্লিকেই এক প্রান্তের সংবাদ অন্য প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন। এতে সুবিধা বাড়লেও পেশাগত সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়েনি। তাই প্রযুক্তির সাথে নির্ভর না থেকে দক্ষতা অর্জনে নিজেদের প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে কচুয়ায় ঐক্যবদ্ধতার কারণে বর্তমান সময়ে সাংবাদিকদের মাঝে সুফল আসতে শুরু করেছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : পত্রিকাগুলোর প্রিন্টিং সংস্করণের পাঠক এবং টিভি সংবাদের শ্রোতাণ্ডদর্শক দিনদিন কমছে। কারণ কী? এমনটি রোধের উপায় কী?
জিসান আহমেদ নান্নু : মূলত প্রিন্ট পত্রিকায় পরদিন সংবাদ প্রকাশের অপেক্ষায় থাকেন পাঠক। অনলাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমানে বিভিন্ন পোর্টালের সংবাদ ও ভিডিও প্রতিবেদন তাৎক্ষণিক প্রচার হওয়ায় দিনদিন পত্রিকার পাঠক কমে যাচ্ছে। তাছাড়া পাঠকরা অনলাইনে এখন সকল ধরনের সংবাদ মুহূর্তেই হাতের নাগালে পাচ্ছেন। সময়োপযোগী ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারিত না হওয়ায় পাঠক কমে যাচ্ছে। তাই নিত্য নতুন ও ব্যতিক্রমী সংবাদ উপস্থাপন ও প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে এটা রোধ করা যায়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকাল গণমাধ্যম কর্মীদেরকে বিভিন্ন মহল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। অনেকে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ব্যবহৃতও হচ্ছে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য/বিভাজন থেকে এমনটি হচ্ছে। আপনার অভিমত কী?
জিসান আহমেদ নান্নু : স্থানীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকাগুলো রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের তাদের পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে এবং টিভি মিডিয়ায় উপদেষ্টা বা বিভিন্ন পদ বহন করতে দেয়ায় অনেকটা পেশাগত সাংবাদিকদের কদর কমে যাচ্ছে। পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়াগুলো এসব নির্ভর না থেকে নিজস্বভাবে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ে একাধিক প্রেসক্লাব ও অন্যান্য সংগঠন থাকার কারণে সাংবাদিকদের মাঝে অনৈক্য ও নতুন নতুন সাংবাদিক সৃষ্টি হচ্ছে। তাই ঐক্যের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি অনৈক্য ঠেকাতে পেশাদার সাংবাদিকও সৃষ্টি করতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সংবাদ পরিবেশনে তাৎক্ষণিকতাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে অনলাইন সাংবাদিকতার জোয়ার। এতে কেউ কেউ অপসাংবাদিকতার সুযোগ বা আশ্রয় নিচ্ছে। সকল সংবাদের ক্ষেত্রে কি তাৎক্ষণিকতা জরুরি? আপনার মতামত জানতে চাই।
জিসান আহমেদ নান্নু : প্রতিযোগিতা থাকা ভালো। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তৈরিতে সময় নেয়া উত্তম। কার আগে কে সংবাদ প্রেরণ করবেন এই প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে তথ্য নির্ভর সংবাদ পরিবেশনে অভ্যস্ত হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই একটি সংবাদ একজন তৈরি করে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রেরণ করা মাত্রই অন্যসব সাংবাদিক হুবহু কপি করে তাদের নিজস্ব মিডিয়ায় প্রেরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম সংবাদ প্রেরণকারীর সংবাদে ভুল তথ্য থাকলে পরবর্তীতে পাঠানো সংবাদ ভুল হয়ে থাকে। তাই নিজস্বভাবে তথ্য সংগ্রহ করে ধীরে সংবাদ প্রেরণ করতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্ন সমূহের বাইরেও আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে প্রদান করতে পারেন।
জিসান আহমেদ নান্নু : ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরে জেলা পর্যায়ে প্রতিনিয়ত পত্রিকার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এটির নেতিবাচক দিক থাকলেও প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে একের অধিক প্রতিনিধি নিয়োগ না দিয়ে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী-পরিশ্রমী সাংবদিক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যদিকে অনেক উপজেলায় দেখা যায়, কিছু কিছু সাংবাদিক চাঁদপুর জেলা পর্যায়ে কিংবা জাতীয় কোনো পত্রিকায় নেই। নিজেরা নামমাত্র অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রেরণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে নিউজের নির্ভরতার জন্যে নিজস্ব স্থায়ী প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া জরুরি বলে মনে করি। এতে করে পেশার মান বৃদ্ধি পাবে এবং নামধারী সাংবাদিকের সংখ্যা কমে যাবে। সবশেষে ধন্যবাদ জানাই দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠকে এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী সাক্ষাৎকার প্রকাশের আয়োজন করার জন্য।