প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
আজ রোববার ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল ও হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উটতলী ব্রীজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতু এবং এপ্রোচ সড়কসহ মোট ১০৭ কোটি টাকার এই সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান। এই উপলক্ষে মুন্সীরহাট হাই স্কুল মাঠে এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক সিনিয়র সচিব কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউনুছ বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা, উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা খাজে আহমেদ মজুমদার।
এদিকে উটতলী ব্রীজ নির্মাণ শুরু উপলক্ষে ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলসহ গোটা উপজেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শুরু হবে হবে বলে এতোদিন অপেক্ষার পর অবশেষে নির্মাণ কাজ শুরুর ক্ষণ আসায় আনন্দে উদ্বেলিত উত্তরাঞ্চলবাসী। অথচ এক কালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যেতো না। এক সময়ে নদী পার হতে গিয়ে এপাড়ের মানুষকে স্বজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেতে হতো। কিন্তু কালক্রমে চর পড়ে সংকুচিত হতে হতে অনেকটাই খালে পরিণত হয়েছে নদীটি। তারপরও কিছু স্থানে নদীটি এখানো কিছুটা দৃশ্যমান রয়েছে।
তেমনি একটি স্থানে ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বপ্নের সেতু উটতলী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দুই উপজেলার ভূমিকে সংযুক্তকারী ১৩টি স্প্যানের ওপর দৃষ্টিনন্দন ৫৫০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি নির্মিত হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ফিরবে মানুষের ভাগ্য। যেমনটি শুরু হয়েছে পদ্মাসেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে।
জানা গেছে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল এবং হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের জুলাইয়ে একনেক সভায় উটতলী খেয়াঘাটে সাড়ে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্যে ১০৭ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন হয়। ওই বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় ঢাকার দোহার উপজেলার মোঃ আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ।
মুন্সীরহাট বাজারের পাশ দিয়ে এ সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মিত হবে। ইতিমধ্যেই লাল নিশানা টানিয়ে সম্ভাব্য রাস্তার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। উটতলী ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খেয়াঘাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিবার পার হওয়ার জন্যে ইজারাদারকে ৫ টাকা ও নৌকার মাঝিকে ৫ টাকা করে দিতে হয়। এতে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে যাতায়াতের সময় টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের অলিপুর আমের শিক্ষার্থীদের মুন্সীরহাটে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। শিক্ষার্থী আলমগীর, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা, নুরজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি এ কথা বলেন।
গত ১১ বছর ধরে সিএনজি অটোরিকশা চালান অলিপুর গ্রামের জুয়েল। তিনি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির অপেক্ষায় রয়েছি। এই সেতুটি দুই উপজেলার মানুষের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি। এখন গাড়ি চালিয়ে যেটুকু আয় হয়, সেতু নির্মিত হলে আশা করছি আমাদেরও আয় বাড়বে। সিএনজি চালক হানিফ, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শাহপারান জানান, আমরা এখন অলিপুর থেকে কৈয়ারপুল পর্যন্ত যাত্রী আনা নেওয়া করি। সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রীও বাড়বে, আমাদের আয়ও বাড়বে।
উটতলী খেয়াঘাটের মাঝি সুমন মাঝি, অমৃত মাঝি. রঘুনাথ মাঝি এবং ৬০ বছর ধরে এই খেয়াঘাটে নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার করে জীবনধারণ করা জ্ঞানেন্দ্র মাঝি জানান, এতকাল আমরা নদীর ওপর দিয়ে নৌকা চালিয়ে জীবনধারণ করছি। তবে সেতু নির্মিত হলে আমাদের ক্ষতি হবে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ আমাদের দিকটা বিবেচনা করবেন। সেতুটি নির্মিত হলে আমাদের আয়ের পথ বন্ধ হলেও আমরা খুশি সেতুটি পেয়ে। কারণ এই অঞ্চলের মানুষের উপকার হবে-এটাই বেশি আনন্দের।
এই ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য খাজে আহমদ মজুমদার বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলের অবহেলিত মানুষের জন্যে উটতলী সেতুটি আশীর্বাদ হয়ে আসবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এই সেতুটি অনুমোদনের জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আমাদের প্রিয় নেতা জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান। আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
সুরমা এন্টারপ্রাইজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, ৬৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৩টি স্প্যানের ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণের জন্যে আমরা কাজ শুরু করছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, উদ্বোধনের মাধ্যমে সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হলে সংযোগ সড়কের টেন্ডারও দ্রুত করা হবে। এখন সংযোগ সড়কের এলাইনমেন্টের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও ফরিদগঞ্জ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ত্রিশ বছর প্রচেষ্টার ফসল উটতলী সেতু। সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে দুই উপজেলাসহ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে। দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে নিতে গ্রাম থেকে উন্নয়ন যাত্রা শুরু করতে হবে।