প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ ইউসুফ গাজী। তিনি কী কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেন না এবং প্রতিপক্ষের প্রচার-প্রচারণায় বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়টি জেলাবাসীর নিকট স্পষ্ট করার জন্যে এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
১৫ অক্টোবর শনিবার দুপুর ১টায় চাঁদপুর শহরের মুখার্জিঘাটস্থ নিজ বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। নির্বাচনে কেনো অংশগ্রহণ করতে পারলেন না এই বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনান। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, আপনারা অবগত আছেন যে, বিগত ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সমর্থন প্রদান করেন। এরপর আমি ১৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিন ১৮ সেপ্টেম্বর আমার প্রতিপক্ষের লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। অতঃপর আমি ২১ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) ও নির্বাচন আপিল ট্রাইব্যুনাল জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২২, চট্টগ্রাম বিভাগ বরাবর আমার মনোনয়নপত্রের বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করি। ২২ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে আপীলটি নামঞ্জুর হয়। অতঃপর মনোনয়নপত্রের বৈধতার জন্যে আমি একটি রিট দাখিল করি।
আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর বিজ্ঞ অনেক আইনজীবীর কাছে আইনি পরামর্শ নিয়ে দ্রুত মামলা শেষ করার জন্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আত্মসমর্পণ করে রিভিশন দায়ের করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন দিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্যে, তাই দলের প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে শুধুমাত্র নির্বাচনটি করার জন্যে আমি এই বয়সেও কারাগারে যেতে পিছপা হইনি। আমি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করি এবং আইনি লড়াই চালিয়ে যাই। যার প্রেক্ষিতে আমি ২২ সেপ্টেম্বর মাহমান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিভিশন দায়ের করি এবং ১৩ অক্টোবর তারিখে আপিল আদালতের আপিল মামলার রায়ে আমার পাঁচ বছরের সাজাটি সেট এসাইড করা হয়। আমি এখন সেই মামলা থেকে পুরোপুরি খালাসপ্রাপ্ত।
আমি মনে করি, আমার ব্যক্তিগত মামলাটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে আমার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করার জন্য। দুঃখের বিষয় এই যে, মহামান্য উচ্চ আদালতের অবকাশ, পূজা, সাপ্তাহিক ও সরকারি বিভিন্ন ছুটি থাকার কারণে যে আইনি প্রক্রিয়া ১০-১২ দিনে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব হতো সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে ২৩দিন। কিন্তু আমার মনোনয়নপত্র বৈধতার রিট পিটিশনটি এই সময়ের বেড়াজালে বাধাগ্রস্ত হয় এবং রিটে আইনী ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা ছিলো, যা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় মাহামান্য উচ্চ আদালত আমার ব্যাপারটি সময় নিয়ে শুনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নির্বাচনের দিনক্ষণ নিকটে চলে আসায় আমার রিট পিটিশনটি শুনানি করাই সম্ভব হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে আমাকে নির্বাচন থেকে বঞ্চিত রাখার সেই নীলনক্সায় তারা সফল হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২৩ দিনে আমি আমার সেই ব্যক্তিগত মামলাটির সমাপ্তির মাধ্যমে প্রমাণ করলাম যে, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।
আমি চাঁদপুর পৌরসভা ও উপজেলার সফল চেয়ারম্যান ছিলাম। দীর্ঘ ১২ বছর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও ১৭ বছর ধরে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে ২০০১ সালে আমাকে নৌকার মনোনীত প্রার্থী করেছিলেন। আমার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল এই জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমাকে দলীয় সমর্থন।
আমার মনোনয়ন পাওয়ায় সারা চাঁদপুর জেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে যেভাবে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছিলাম তা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পাওয়া। জননেত্রী শেখ হাসিনা ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ দীপু মনি যেভাবে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন তার জন্যে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়াও চাঁদপুর জেলার সব সংসদীয় আসনের সংসদদের, জেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাণ্ডকর্মীদের আমার পাশে থাকার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করছি, ভবিষ্যতেও সকলের এই সমর্থন ও ভালোবাসা পাবো।
পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, প্রায় ৫৩ বছরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ ধারণ করে সুস্থ ধারার আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততা। ক্ষমতা আমার কাছে মুখ্য নয়। মানুষের ভালোবাসাই আমার রাজনীতির শক্তি। পদণ্ডপদবী ক্ষমতার জন্য কখনো রাজনীতি করিনি। আমি যাতে আমৃত্যু আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি সেজন্যে আপনারা আমাকে দোয়া ও সমর্থন দিবেন-সেই প্রত্যাশাই করি। দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সারাজীবন নিবেদিতপ্রাণ হয়ে দলের এবং চাঁদপুরবাসীর জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে আইনী বিষয়গুলোর জটিলতা সম্পর্কে তুলে ধরেন ইউসুফ গাজীর কন্যা অ্যাডঃ মুন্নী ইউসুফ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, সাবেক সভাপতি শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, রহিম বাদশা, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল-ইমরান শোভনসহ জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক অজয় কুমার ভৌমিক ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাণ্ডকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।