প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
প্রাণের উচ্ছ্বাসে তারুণ্যের উদ্দীপনায় উদ্বোধন হলো ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসব। এ উৎসবটি পরিণত হলো দেশসেরা বিতার্কিকদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলায়। দেশবরেণ্য জাতীয় ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে এ উৎসবটি অনন্য উচ্চতায় রূপ নেয়। এমন বর্ণিল এবং বর্ণাঢ্য আয়োজন দেখে অতিথিরাও ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত। তাঁরা জাতীয় বীর ভাষাসৈনিক এমএ ওয়াদুদের মতো একজন দেশপ্রেমিক নেতার স্মরণে এমন একটি সৃজনশীল জাতীয় উৎসবে আসতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনুপ্রেরণায় চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্ট (সিডিএম) ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ ডিবেট ফোরাম (সিসিডিএফ) এই উৎসবের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ)-এর সহযোগিতায় দেশের ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬টি দলের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার এই উৎসব শুরু হলেও গতকাল হয় এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। দেশের বিভিন্ন জেলার দেড়শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ হাজারেরও অধিক বিতার্কিকের পদচারণায় মুখরিত হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বেলুন উড়িয়ে আনন্দঘন পরিবেশে এই বিতর্ক উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। এর আগে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সহ¯্রাধিক বিতার্কিকের অংশগ্রহণে বের হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। র্যালির নেতৃত্বেও ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। র্যালিটি শহর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কলেজ ক্যাম্পাসে আসে। দেশসেরা বিতার্কিক, দেশবরেণ্য অতিথিবর্গ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতিতে মুখরিত হয় অনুষ্ঠানস্থল।
উদ্বোধনী আলোচনা সভায় বক্তাগণ ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনে এমএ ওয়াদুদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। তাঁর সুদূরপ্রসারী রাজনীতি ছিল মানুষের কল্যাণের জন্যে। তা আমরা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে জানতে পেরেছি। বক্তাগণ বলেন, আমরা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদকে দেখিনি, দেখেছি তাঁর সুযোগ্য কন্যা ডাঃ দীপু মনিকে। যার মাঝে এমএ ওয়াদুদের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। যিনি দেশের জন্যে, মানুষের জন্যে কাজ করে যাচ্ছেন বাবার মতোই একজন ভালো মানুষ হিসেবে। তিনি চাঁদপুরের গর্ব, আমাদের গর্ব। আজকে চাঁদপুরের মতো জায়গায় জাতীয় বিতর্ক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশসেরা বিতার্কিকদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে, যা ডাঃ দীপু মনির কারণেই সম্ভব হয়েছে। আমরা এমন সুন্দর আয়োজনের সর্বাত্মক সফলতা কামনা করছি।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশের সভাপ্রধানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি কামাল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রফেসর সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ও বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ)-এর সাবেক সভাপতি ডাঃ আব্দুন নূর তুষার।
এ সময় মঞ্চে অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদের জ্যেষ্ঠ সন্তান ডাঃ জে আর ওয়াদুদ টিপু ও তারুণ্যের প্রাণের স্পন্দন আয়মান সাদিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এমএ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান সাব্বির আজম।
উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, জাতির জনকের দেখানো পথেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে । জাতির জনক চেয়েছিলেন সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে। আর তা গড়তে হলে প্রয়োজন সোনার মানুষের। এজন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষার। আমরা আমাদের সন্তানদের সেই উপযুক্ত শিক্ষা দিয়েই গড়ে তুলবো। যারা জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে। গড়ে তুলবে সোনার বাংলাদেশ। তিনি বলেন, যুক্তিনির্ভর সমাজ, মেধা ও মননশীল, পরমতসহিষ্ণু এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে বিতর্কই হচ্ছে অন্যতম মাধ্যম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দেয়া হয় নামাজ এবং মধ্যাহ্ন বিরতি। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় বিভিন্ন পর্বের বিতর্ক। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় প্ল্যানচেট বিতর্ক। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় ডিবেটার্স কালচারাল নাইট।
এই বিতর্ক উৎসবে টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আয়মান সাদিক ছিলো বিতার্কিকদের আকর্ষণ। একই সাথে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন বিতার্কিক সৌরদীপ পালকে নিয়ে ছিলো উপস্থিত সকলের উচ্ছ্বাস।
আজকে তিনদিনের এই বিতর্ক উৎসবের সমাপনী। সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সকাল পৌনে ১০টায় অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। পরে বিকেলে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি।