প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
গতকাল বৃহস্পতিবার নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের আয়োজনে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২২ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা ও নৌ র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। ‘নৌ পুলিশকে সহযোগিতা করি, নিষিদ্ধকালীন মা ইলিশ না ধরি’ স্লোগানে ১৩ অক্টোবর দুপুরে চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেডে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে পুলিশের স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, আনসারসহ স্থানীয় সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থানীয়-জাতীয় সাংবাদিকবৃন্দ ও চাঁদপুরের জেলে সাধারণ, মৎস্য চাষী, ব্যবসায়ীরাসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সুসজ্জিত বিভিন্ন নৌ যান নিয়ে ডাকাতিয়া নদী থেকে পদ্মা মেঘনা ও ডাকাতিয়ার ত্রিনদীর মোহনা হয়ে হরিণা হাইমচর পর্যন্ত নৌ র্যালী করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশ নৌ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম, বিপিএম (বার)।
চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ এসপি কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ, বিপিএম (বার), পৌর মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মোঃ আশরাফুল আলম।
সাংবাদিক এমআর ইসলাম বাবুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, রাজরাজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী, পৌর প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ, কাউন্সিলর সফিকুল ইসলাম, জেলা মৎসজীবী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ মালেক দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মানিক দেওয়ন, সহ-সভাপতি শাহআলম মল্লিক প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, ইলিশ উৎপাদনে আমরা বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর স্থানে। সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি হওয়ায় আমরা এই স্থানে আসতে পেরেছি। মাছের উৎপাদন বাড়লে জেলেদের আয় রোজগার বৃদ্ধি পাবে এবং জীবনমান উন্নয়ন হবে। তাই সরকারের পক্ষ থেকে অভয়াশ্রম এলাকায় যে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, তা জেলেদের মানতে হবে এবং সাগর থেকে মিঠা পানিতে আসা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে হবে। সবাই মিলে আমরা ইলিশ রক্ষার এ অভিযান সফল করবো।
মন্ত্রী বলেন, একজন কৃষক উৎপাদনের জন্য যেমন ৩ থেকে ৪ মাস সময় নেয়। জেলেদের ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বছরের দুবার নিষেধাজ্ঞা মানলে বাকী সময়টা জুড়ে ইলিশ ধরতে পারবে।
মন্ত্রী বলেন, যেসব জেলে নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইলিশ ধরে তাদের পিছনে যারা কাজ করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। আর এসব ব্যক্তি দাদনদার, অর্থশালী কিংবা যে কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকুক না কেনো তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি নৌ পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে, এটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি থেকে জেলেদের বিরত থাকতে হবে।
তিনি তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে চাঁদপুরের বিশিষ্ট কবি, লেখক ও ছড়াকার ডাঃ পিযূষ কান্তি বড়ুয়ার লেখা ইলিশ বিষয়ক একটি কবিতা পাঠ করেন।
গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে নৌ পুলিশের আইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মা ইলিশ সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। মা ইলিশ সংরক্ষণ সফল করতে তিনি সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রতি সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা ও সফল করতে নির্দেশ দেন। তিনি মৎস্যজীবী ভাইদের অনুরোধ করেন, ইলিশের প্রজনন সময় যে ১৬ দিন আছে, এ সময় সকল প্রকার মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে।
তিনি আরো বলেন, নদীতে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় যখন অভিযান চালানো হয়, তখন অনেক জেলে ভাই প্রায়ই নৌ পুলিশের ওপর চড়াও হন। এটি পরিহার করতে হবে। কেননা ইলিশ সম্পদ রক্ষা পেলে দেশের অর্থনীতি সচল হবে। তাই জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি।
তিনি ২২ দিনের অভিযানের আর যে ১৬ দিন রয়েছে, এ সময় কোনো জেলেকে নদীতে না নামার অনুরোধ জানান। নিষেধাজ্ঞা না মেনে যারা নদীতে মাছ ধরতে যাবেন নৌ পুলিশ তাদের বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নিবে বলে তিনি হুশিয়ার করে দেন।
মা ইলিশ রক্ষায় জনসচেতনতামূলক নৌ র্যালিটির নেতৃত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
র্যালি ও সভায় অংশগ্রহণকারী সকলের মাঝে মা ইলিশ সংরক্ষণ সফল করার বিষয়ে বিশেষ প্রচারণামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। সর্বশেষে নৌ পুলিশের এসপি কামরুজ্জামান আলোচনা সভা ও র্যালিতে অংশগ্রহণ করার জন্যে সকলকে ধন্যবাদ প্রদান করেন।