বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

ব্যবসার নামে বিভিন্নজন থেকে ৩শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রিগ্যান বিভিন্ন জন থেকে ব্যবসার নামে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে পুরো পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘দুবাই’ অবস্থান করছেন। তিনি উপজেলার ৫নং হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির মোঃ মফিজুল ইসলাম পাটওয়ারীর বড় ছেলে। তিনি গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ ইসমাইল হোসেন রিগ্যান চট্টগ্রামের খুলশী এলাকায় রেন্ট-এ কার বা ভাড়ায় গাড়ি লাগানো, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদারিসহ নানা ব্যবসার নামে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তার নিকট আত্মীয়-স্বজন, এলাকার লোকজন, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ’ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি নগদ টাকা ও গাড়ি ভাড়ায় চালানোর কথা বলে কয়েকশ’ গাড়ি সংগ্রহ করেন। পরে মানুষের কাছ থেকে নেয়া ওইসব গাড়ি বিক্রি করে দেন। এমনকি একেকটি গাড়ি ৪/৫ জনের কাছে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও তিনি তার বসবাসকৃত ফ্ল্যাটটি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। তিনি যে বাড়িতে বসবাস করতেন, সেই বাড়ির অপর এক ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দার মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি বিক্রি করে দেন পানির দরে। পরে তিনি ওই এলাকা থেকে গা-ঢাকা দেন।

চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ও সংবাদ ভিত্তিক একটি টিভি নিউজ চ্যানেল সূত্রে জানা যায়, রিগ্যান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ভাড়ায় দামি দামি গাড়ি সরবরাহ করতেন। মাসিক ভিত্তিতে কার, জিপসহ বিভিন্ন গাড়ি ভাড়ায় নিয়ে সেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ভাড়া দিতেন। এক পর্যায়ে ব্যবসা বাড়লে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে বিভিন্নজন থেকে টাকা নেয়া শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ খুলশীর তিন নম্বর সড়কে সানম্যার রয়েল রিজ নামের অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে ২২৮৯ বর্গফুটের ডি-৪ ফ্ল্যাট কিনে তাতে বসবাস করতে থাকেন। দুই কোটি টাকারও বেশি দামের ফ্ল্যাটটি সাজাতে বেশ বড় অংকের টাকা ব্যয়ও করেন তিনি।

এর পাশাপাশি রিগ্যান ওই এলাকার ৪ নম্বর সড়কে ৫৭০ নম্বর বাড়িতে অফিস স্থাপন করেন। গ্লোবাল কর্পোরেশন নামের কোম্পানি গঠন করে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকেন। বছরখানেক ধরে তার চলন বলন এবং কাজ-কর্মে বেশ পরিবর্তন আসে। যে গাড়ির জন্য মাসিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া পাওয়া যায়, সেই গাড়ি তিনি ৭০/৭৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে নিতেন। যার ফলে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।

ইসমাইল হোসেন রিগ্যানের ব্যবসায় সন্তুষ্ট হয়ে চিকিৎসক, পুলিশ, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ তাকে মাসিক ভিত্তিতে ভাড়ায় গাড়ি দিতে থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে ভাড়ার টাকা ব্যাংকে বা নগদে পেয়ে যাওয়ায় বহু গাড়ির মালিক এক বছরেও তার গাড়ির চেহারা দেখেননি। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী তিনি শহরের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ১৪২টি কার ও জিপ গাড়ি নিয়ে ভাড়ায় পরিচালনা করছিলেন।

এক পর্যায়ে রিগ্যান গাড়িগুলো বিক্রি করতে শুরু করেন। এই বিক্রির ক্ষেত্রেও অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন স্লিপে (ব্লুবুকে) থাকা মালিকের নাম এবং ছবি ব্যবহার করে তিনি নকল এনআইডি তৈরি করে। ওই এনআইডি দিয়ে তিনি গোপনে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পানির দামে গাড়ি বিক্রি করতে শুরু করেন। তিনি একেকটি গাড়ি এমনকি তারা বসবাসকৃত ফ্ল্যাটটিও ৪/৫ জনের কাছে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত রোববার সরজমিনে ইসমাঈল হোসেন রিগ্যানের গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়িতে গেলা দেখা যায়, বাড়ির ভিতরে পূর্ব পাশের ভিটায় এসি করা দোতলা বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। যেটি বর্তমানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা এ সময় জানান, রিগ্যান তার বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সস্তান, দুই ভাই ও ভাইদের স্ত্রী, সন্তান এবং এক বোনসহ সবাই দুবাই গেছেন।

রিগ্যানের বাড়ির সম্পর্কীয় চাচা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত চার-পাঁচ বছর যাবৎ রিগ্যান সপরিবারে চট্টগ্রামে স্যাটেলড। তবে নিয়মিত বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো। ১০/১৫ দিন আগেও বাড়িতে এসেছিল রিগ্যান। এ সময় তার বাবা-মা, ভাই, ভাইদের স্ত্রী, বোন ও সন্তানসহ তার নিকট আত্মীয়-স্বজনেরা এসেছিলো। তবে মানুষ জনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি লোকমুখে ও টিভি নিউজে দেখেছেন, বাস্তবে কিছুই জানেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার বাড়ির সম্পর্কীয় অপর এক চাচা জানান, তার নিকট আত্মীয়-স্বজনেরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা রয়েছে রিগ্যানের প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও ব্যবসার কথা বলে বলাখালের এক ব্যক্তির ৪ কোটি টাকা, সাতবাড়িয়ার এক ব্যক্তির ৪৭ লাখ টাকা, মুন্সীরহাটের এক ব্যক্তির ৪২ লাখ টাকাসহ বেশ কিছু মানুষের কয়েক কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্থানীয় লোকমুখে জানা গেছে। তবে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

ইসমাইল হোসেন রিগ্যানের বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী মুঠোফোনে জানান, তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

চট্টগ্রামের খুলশী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সন্তোষ চাকমা জানান, তিনি (রিগ্যান) বড় প্রতারক। অভিনব পন্থায় নানাভাবে সে মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। আমাদের থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা এবং তিনটি জিডি রেকর্ড হয়েছে। রিগ্যান যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন সেখানের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকেও বহু টাকা সে হাতিয়ে নিয়েছে। তারা মামলা করতে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

ওসি সন্তোষ চাকমা আরো বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ১৮২ কোটি টাকা প্রতারণার তথ্য পেয়েছি। আরো কেউ প্রতারিত হয়েছে কিনা তা অভিযোগ করলে জানতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়