প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি না থাকলেও রূপসা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জনবল সঙ্কট চরমে
২৭ শতাংশ জমি বেদখল ॥ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন
স্বাস্থ্যসেবার কোনো রকম ঘাটতি না থাকলেও বিভিন্নভাবে জায়গা দখলের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা বাজারস্থ রূপসা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
|আরো খবর
এলাকার জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার জন্য এবং বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার তাগিদে এই হাসপাতালটি স্থাপনে রূপসা জমিদার বাড়ির লোকজন ৮০ শতাংশ জমি দান করেন। পরে বিএস ফাইনালে ৭০ শতাংশ জমি খতিয়ানভুক্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে চতুর্দিক থেকে এই জমিতে অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে সর্বসাকুল্যে জমি আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। হাসপাতালের চারপাশে এখন ময়লার ভাগাড়। যার কারণে ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
সরেজমিনে গত ০৪ অক্টোবর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ লুৎফর রহমান এক এক করে বিভিন্ন রোগীকে চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ দিয়ে যাচ্ছেন। জটিল ও কঠিন রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ সহ উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ হাসপাতালে দৈনিক ৪৫ থেকে ৬৫ জন রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। এ হাসপাতালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৬, ৭, ৮, ১৫ ও ১৬নং ইউনিয়ন থেকে রোগীরা সেবা নিতে আসেন। তিনি বলেন, এত রোগীর পরিমাণে ঔষধ সাপ্লাই কম। গ্যাস্ট্রিক, ব্যথার ঔষধ এবং এন্টিবায়েটিকসহ আরো কিছু ঔষধের সাপ্লাই-পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এছাড়া হাসপাতালে রং করা, দরজা, জানালা মেরামত করা জরুরি। হাসপাতালটিতে জনবল সংকট চরম পর্যায়ে বলে তিনি এই প্রতিনিধিকে জানান, এখানে নাইটগার্ড, দারোয়ান ও আয়া নেই। নিয়মিত একজন ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও সেটাও নেই।
এ সময় স্থানীয় রোগীদের মধ্যে ক’জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আমরা এখানে আসলে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ লুৎফর রহমান আন্তরিকতার সাথে আমাদের সেবা দিয়ে থাকেন। তারা বলেন, এতো বড় হাসপাতাল, কিন্তু এখানে ডাঃ লুৎফর রহমান এবং ঔষধ বিতরণকারীকে ছাড়া আর কাউকে দেখি না।
হাসপাতালে থাকাবস্থায় হাসপাতালের ভেতরে দুর্গন্ধ পাওয়ার বিষয়ে ডাঃ লুৎফুর রহমান বলেন, হাসপাতালের চতুর্দিক বিশেষ করে পূর্ব পাশ দিয়ে রূপসা হাই স্কুল। এই স্কুল আমাদের অনেক জমি জোরপূর্বক দখল করে আছে। সেখানে তারা বহুতল ভবনের মার্কেট নির্মাণ করার পাঁয়তারা করছে। বর্তমানে সেখানে বাজারের সমস্ত ময়লা এনে ফেলার কারণে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। এ সময় তিনি বলেন, হাসপাতালের মোট ৮০ শতাংশ জমি থাকার কথা, কিন্তু বর্তমানের সরেজমিনে আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। হাসপাতালের ফাইনাল খতিয়ান মোতাবেক ৭০ শতাংশ জমি থাকার কথা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এসও নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের এই হাসপাতলে ৮০ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন রূপসার জমিদারেরা। কিন্তু এখন আছে মাত্র ৫৩ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, রূপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় তাদের জমি দাবি করে হাসপাতালের পূর্ব পাশে আমাদের জমি দখল করে মার্কেট করেছে। এখন আবার তারা অনেকাংশ জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে রূপসা আহমদিয়া হাই স্কুল আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা করে আমাদেরকে কোনোরকম নোটিস না করে এবং আমাদেরকে কোনোরকম অবগত না করে ওই মামলায় তারা একতরফা রায় নেয়। পরে এই মামলার বিরুদ্ধে আমরা আপিল করলে মাননীয় আদালত স্কুলের পক্ষের রায় বাতিল করে মামলা চলমান করে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে রূপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আকরামুল হকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালের কোনো জমির উপর বেড়া দেইনি। এগুলো আমাদের জমি। হাসপাতালের জমি আরো পশ্চিমে মাছ বাজারের দিকে। আর হাসপাতালের পূর্ব দিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় এগুলো আমাদের জমি। সেখানে আমাদের স্কুল এবং বাজারের ব্যবসায়ীরা ময়লা ফেলে, যার কারণে হাসপাতালে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরাও এর প্রতিকার চাই বলে তিনি জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহমেদ চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, রূপসা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবার দিক থেকে আমরা কোনো রকম ত্রুটি রাখি না। জনবল সঙ্কটের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এছাড়া হাসপাতালের জমি নিয়ে পার্শ্ববর্তী রূপসা আহাম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় একটি মামলা করে। যার নং ৯৪০/১৪। আমাদের অনেক জমি তারা ও বিভিন্নজন দখল করে আছে।